আমার দেশ

বরিশালের মরা খালে অবশেষে প্রাণ সঞ্চার

নিকুঞ্জ বালা পলাশ, বরিশাল
বরিশালের মরা খালে অবশেষে প্রাণ সঞ্চার
সংস্কারের ফলে প্রাণ ফিরেছে বরিশাল নগরীর চারটি মরা খালে। ছবি: আমার দেশ

অবশেষে প্রাণ ফিরে পেল জেলখালসহ বরিশাল নগরীর চারটি মরা খাল। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার আর উদ্যোগ না থাকায় এগুলো পরিণত হয় মরা খালে। ফলে নগরীতে জলাবদ্ধতাসহ মশা-মাছির উপদ্রব বাড়ে আশঙ্কাজনক হারে। নগরীর অতীত ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে এসব খাল সংস্কার ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছেন বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি)।

বিজ্ঞাপন

ইতোমধ্যেই তিন কিলোমিটার লম্বা জেল খালটির পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করা হয়েছে। একইভাবে নবগ্রাম খাল, লাকুটিয়া খাল ও নথুল্লাবাদ খালের পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করতে কাজ শুরু হয়েছে। তাছাড়া অন্যান্য খাল সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়ার কথাও জানায় বিসিসি। ধান নদী খাল এই তিনে বরিশাল হলেও প্রাচ্যের ভ্যানিসখ্যাত এ নগরীর খালগুলো হারিয়ে যেতে বসেছে। ছোট-বড় ৩৪টি খালের মধ্যে এখন ২৯টি টিকে আছে কোনোমতে।

ভূমি দস্যুদের কালো থাবা আর সরকারের অব্যবস্থাপনা ও উদ্যোগের অভাবে কোনো মতে টিকে থাকা খালগুলো পরিণত হয়েছে মরা খালে। এছাড়া নগরীর বিভিন্ন স্থানে প্রভাবশালীরা তীর দখল করে নেওয়ায় কোনো কোনো খাল পরিণত হয়েছে ছোট্ট ড্রেনে। প্রভাবশালীদের অনেকে রাজনৈতিক পরিচয়ে খালের তীর দখল করে নির্মাণ করেছেন বহুতল ভবনসহ ছোট-বড় অসংখ্য স্থাপনা।

খালের দখল করা জমি উদ্ধার ও সংস্কার না থাকায় অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গেছে এসব খালের পানিপ্রবাহ। তাতে বন্ধ হয়ে যায় নগরীর পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা। তাছাড়া পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই নগরীতে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা।

তবে নগরীর পুরোনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে সিটি করপোরেশন। ইতিমধ্যেই ড্রেনেজ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করা হয়েছে। পাশাপাশি ড্রেন ও খালগুলো দখলমুক্ত করে পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করতে নির্দেশ দিয়েছেন বিসিসির প্রশাসক মো. রায়হান কায়সার।

সম্প্রতি নগরীর জেল খালটিতে জমে থাকা ময়লা-আবর্জনা ও কচুরিপানা পরিষ্কার করে সিটি করপোরেশন। প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকায় থাকা এসব ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করায় এখন পানি প্রবাহ পুরোপুরি সচল হয়েছে। তবে শুধু পানিপ্রবাহই নয়, খালগুলো দখলমুক্ত ও সংস্কার করে খালের পাশে ওয়াকওয়ে নির্মাণের দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের।

এ বিষয়ে নগরীর কাউনিয়া এলাকার বাসিন্দা মো. রিপন হাওলাদার জানান, জেলখালটি নগরীর ফুসফুস হিসেবে বিবেচিত। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে এটি মরা খালে পরিণত হয়েছে। তবে বর্তমানে খালটির ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করা হলেও দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প নিয়ে এটির পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করা জরুরি।

তিনি আরো বলেন, খালটি সচল থাকলে সামান্য বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা পাবে নগরী। খালের পানিপ্রবাহ ফিরিয়ে আনায় সিটি করপোরেশন প্রশাসকের উদ্যোগকে স্বাগত জানান তিনি।

সিটির জনসংযোগ কর্মকর্তা রোমেল জানান, নগরীর জেল খালটি কচুরিপানা ও ময়লা-আবর্জনায় মড়কখোলা পুল, মধু মিঞার ও নাজিরের পুল এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে পানিপ্রবাহে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছিল। সিটি প্রশাসকের উদ্যোগে এ প্রতিবন্ধকতা দূর করতে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

ফলে নগরীর জেল খালসহ নবগ্রাম খাল, লাকুটিয়া খাল ও নথুল্লাবাদ এলাকার জিয়া সড়ক খালগুলোর পানিপ্রবাহ সচল হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য এলাকাতেও এই অভিযান পরিচালিত হবে। বরিশাল সিটির নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল বারী বলেন, নগরীর খালগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ময়লা-আবর্জনার কারণে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। এ কারণে প্রাথমিকভাবে ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করে পানিপ্রবাহ সচল রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। শিগগিরই নগরীর অন্য খালগুলোও সংস্কার ও সচল করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন