আমার দেশ

বরিশালের বিনোদন কেন্দ্রে ঈদ আনন্দের ঢেউ

নিকুঞ্জ বালা পলাশ, বরিশাল
বরিশালের বিনোদন কেন্দ্রে ঈদ আনন্দের ঢেউ

ঈদুল আজহার দীর্ঘ ছুটিতে চাকরিজীবীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের পদচারণায় মুখরিত বরিশালের বিনোদন কেন্দ্রগুলো। ঈদের পরদিন থেকেই লোকজন প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পরিবার-পরিজন নিয়ে ভিড় জমাচ্ছেন এসব বিনোদন কেন্দ্রে। বিশেষ করে নগরীর প্ল্যানেট পার্ক, বেলস পার্ক, এডামস পার্ক, ত্রিশ গোডাইন বদ্ধভূমি, বান্দরোড ও সিঅ্যান্ডবি রোডের পার্কগুলোতে দর্শনার্থীদের ভিড় দেখা যায়।

বিজ্ঞাপন

পরিবারের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করতে শিশু থেকে কিশোর-কিশোরী কিংবা তরুণ-তরুণী, এক কথায় নানা বয়সের নারী-পুরুষ ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে বিনোদন কেন্দ্রগুলোয় জড়ো হন। হাজার হাজার মানুষের সমাগমে বিনোদন কেন্দ্রগুলো কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। এসব বিনোদন কেন্দ্রের পাশাপাশি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত কীর্তনখোলা নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা মুক্তিযোদ্ধা পার্ক, ত্রিশ গোডাউন, চাঁদমারীর বটতলা, বেলস পার্ক, শহরতলীর তালতলী ব্রিজ, চরবাড়িয়ার বেড়িবাঁধ এলাকাকে ঘিরেও সৃষ্টি হয় প্রাণচাঞ্চল্যের।

একই অবস্থা বিরাজমান ছিল নগরীর আমতলার মোড়স্থ স্বাধীনতা পার্ক, কীর্তনখোলা সেতু, খয়েরাবাদ সেতু, কালিজিরা ব্রিজ, বাবুগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী দুর্গা সাগর, উজিরপুরের গুটিয়ার বায়তুল আমান জামে মসজিদ, গৌরনদীর শাহী পার্ক, আগৈলঝাড়ার পয়সারহাট ব্রিজ ও উজিরপুরের সাতলা ব্রিজ এলাকায়।

বুধবার সকালে ও দুপুরে নগরীর প্ল্যানেট পার্কে গিয়ে দেখা যায়, অসংখ্য নারী-পুরুষ ও তরুণ-তরুণী ও শিশুরা জড়ো হয়েছেন। দীর্ঘদিন পরে যেন প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পেয়েছিল এ পার্কটি। তবে দর্শনার্থীদের অভিযোগ, ১০-১২ বছর আগে এখানে হাতি, ঘোড়া, ভাল্লুক, বানরসহ বিভিন্ন ধরনের পশু-পাখি থাকলেও শিশুদের চিত্তবিনোদনের জন্য এখন তেমন কিছুই নেই। তাই এখানে এসে তারা হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।

এ বিষয়ে রুবেল খান নামে এক দর্শনার্থী বলেন, 'শিশুদের সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য মানসিক বিকাশ প্রয়োজন। কিন্তু বরিশাল একটি বিভাগীয় নগরী হওয়া সত্ত্বেও এখানের শিশুদের মানসিক বিকাশ ও চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা নেই। এ বিষয়ে সরকারি উদ্যোগে একটি মিনি চিড়িয়াখানা স্থাপনের দাবি জানাই।'

মো. কামরুল ইসলাম নামের এক দর্শনার্থী বলেন, 'সারা দেশের তুলনায় বরিশাল সব দিক থেকেই পিছিয়ে আছে। সরকারের উচিত আগামী প্রজন্মের কথা চিন্তা করে অন্তত বরিশালে একটি মিনি পার্ক স্থাপন করা।'

এখানে ঘুরতে আসা অধিকাংশ দর্শনার্থীর একই দাবি অবিলম্বে বরিশালে শিশুদের মানসিক বিকাশে পদক্ষেপ নেওয়া হোক। নগরীর ত্রিশ গোডাই ১নং এলাকায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘুরতে আসা আলাউদ্দীন জানান, 'কীর্তনখোলা নদীর তীরে এতো মানুষের উপস্থিতি আগে ভাবতেও পারিনি। পড়ন্ত বিকেলে নদীর তীরে হালকা বাতাস ও প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে যে কারো মন ভালো হয়ে যাবে। তাই তিনি পরিবার পরিজন নিয়ে এখানে এসেছেন। তবে এতো মানুষের উপস্থিতি তাকে হতবাক করেছে।'

ভ্রমণপিপাসুরা জানিয়েছেন, ঈদুল ফিতরের ছুটিতে কর্মময় জীবনের ব্যস্ততা ছেড়ে পরিবারের সঙ্গে আনন্দ উপভোগ করতে এসেছেন তারা। ঈদের প্রথম দিন দাওয়াত, খাওয়া-দাওয়ার পাশাপাশি অল্প পরিসরে ঘোরাঘুরি করে পরিবারের সঙ্গে কাটিয়েছেন। বরিশাল নগরীর বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রের পাশাপাশি, শহরতলীসহ গ্রামীণ জনপদগুলোর দর্শনীয় বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তারা।

এদিকে, ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে আসা এসব মানুষের জন্য শহর ও উপজেলার বিনোদন কেন্দ্রগুলো ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ, জেলা পুলিশ ও নৌ-পুলিশের সদস্যরা।

এ বিষয়ে বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মো. রায়হান কায়সার আমার দেশকে বলেন, 'বরিশালবাসী এবার স্বচ্ছন্দ্যে ঈদের আনন্দ উপভোগ করেছে। নগরবাসীর নিরাপত্তায় পুলিশ প্রশাসনসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সদা তৎপর রয়েছে।'

তিনি বলেন, 'বিভাগীয় নগরী হিসেবে বরিশালে একটি উন্নত ও আধুনিক মানের বিনোদন কেন্দ্র দরকার। শিশু-কিশোরদের মানসিক বিকাশে এটি প্রয়োজন। তবে সিটি করপোরেশন এলাকায় এ ধরনের জায়গার সংকট রয়েছে। এরপরও তারা জায়গা খুঁজছেন। উপযুক্ত জমি পেলে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।'

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন