ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা–৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শরীফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে সারা দেশে ছাত্র-জনতা বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেছে। বৃহস্পতিবার রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে আসার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা উত্তাল হয়ে ওঠে। প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত।
ঝালকাঠি প্রতিনিধি জানান, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে তার গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠির নলছিটি শহরের খাসমহল এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মৃত্যুর খবর শুনে তার আত্মীয়-স্বজনরা ছুটে আসেন বাসায়। আগামীকাল সকালে সবার সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। হাদির মৃত্যুর ঘটনায় জড়িতদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার করে ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন তার প্রতিবেশী ও সহপাঠীরা।
জলঢাকা (নীলফামারী) প্রতিনিধি জানান, শরীফ ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর প্রচারিত হওয়ার সাথে সাথে নীলফামারীর জলঢাকায় মিছিল বের করে বিপ্লবী ছাত্র জনতা। মিছিলটি জলঢাকা থানা মোড় থেকে শুরু করে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে, স্থানীয় আবু সাঈদ চত্বরে সমাবেশ এর মাধ্যমে শেষ হয়।
রংপুর অফিস জানান, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপত্র শরীফ ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পরে রংপুরে বিক্ষোভ সড়ক অনুরোধ করেন রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সাধারণ ছাত্র-জনতারা। এলাকায় জড়ো হতে শুরু করেন শিক্ষার্থীর। রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে মডান মোড়, আবু সাঈদ চত্ত্বর, লালবাগ খামার মোড় ও শাপলা চত্বরে এসে অবস্থান নেন।
এ সময় তারা ‘তুমি কে আমি কে? হাদি, হাদি’, ‘দিল্লি না ঢাকা? ঢাকা, ঢাকা’, এবং ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ স্লোগান দেন। প্রায় ঘন্টা ব্যাপী শাপলা চত্বরে অবস্থান নিয়ে থাকেন তারা। এ সময় বক্তব্য রাখেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ইনকিলাব মঞ্চের আহবায়ক জাহিদ হাসান জয়, সদস্য সচিব মো. মেহেদী হাসান, বেরোবি শিক্ষার্থী শামসুর রহমান সুমন, আরিফ হাসান, রহমত আলী প্রমুখ।
জেলা প্রতিনিধি, লক্ষ্মীপুর জানান, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে ফাঁসির দাবিতে লক্ষ্মীপুরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্র-জনতা। রাত সাড়ে ১১ টার দিকে লক্ষ্মীপুর শহরের উত্তর তেমুহনী শহীদ আফনান চত্ত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের করে ছাত্র-জনতা। মিছিলটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে দক্ষিণ তেমুহনী গিয়ে শেষ হয়।
এর আগে শহরের শহীদ আফনান চত্ত্বরে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যার ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তারা খুনি ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার দোসরদের দ্রূত গ্রেপ্তার করে ফাঁসির দাবী জানান।
উপজেলা প্রতিনিধি, কাউনিয়া (রংপুর) জানান, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে রংপুরের কাউনিয়ায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি)। উপজেলার বেইলিব্রীজ বাজার এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এনসিপির সদস্য সচিব আকতার হোসেন বলেন, হাদির মৃত্যু কোনোভাবেই স্বাভাবিক নয়। এটি একটি নির্মম ও পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। অথচ ঘটনার এতদিন পরও দোষীদের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
বরিশাল অফিস জানান, ইনকিলাব মঞ্চের প্রধান সমন্বয়ক ওসমান হাদীর মৃত্যুর খবরে উত্তাল হয়ে ওঠে বরিশাল নগরী। হাদির মৃত্যুর খবর বরিশালে পৌছার পরপরই বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতা নগরের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। রাত ১১ টায় বিএম কলেজ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নগরের নতুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় জড়ো হয়। এ সময় তারা সড়ক অবরোধ করে নানান স্লোগান দিতে থাকে।
খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি জানান, দিনাজপুরের খানসামা আবারও উত্তাল হতে যাচ্ছে। ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র বীর যোদ্ধা শহিদ ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সারা দেশে তীব্র ক্ষোভ ও উত্তাল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এই মৃত্যুকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী প্রতিবাদের আবহ তৈরি হলে তারই ধারাবাহিকতায় দিনাজপুরের খানসামায় একাধিক কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
সিলেট ব্যুরো জানান, হাদির মৃত্যুর খবরে উত্তাল হয়ে উঠেছে সিলেট নগরী। রাত সাড়ে ১১টা থেকে নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিজয় চত্বরে (চৌহাট্টা পয়েন্ট) জড়ো হন ছাত্র-জনতা। মুহূর্তেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। বিক্ষোভকারীরা ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’, ‘গোলামি না আজাদি, আজাদি আজাদি’, ‘আমরা সবাই হাদি হবো, গুলির মুখে কথা ক’বো’, ‘ইনকিলাব ইনকিলাব জিন্দাবাদ’—এমন নানা স্লোগানে পুরো চৌহাট্টা এলাকা প্রকম্পিত করে তোলেন। মিছিলগুলো নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে জিন্দাবাজার ও কোর্ট পয়েন্ট হয়ে পুনরায় বিজয় চত্বরে এসে সমবেত হয়।
উপজেলা প্রতিনিধি (ফটিকছড়ি) চট্টগ্রাম জানান, চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদীর মৃত্যুতে সড়ক অবরোধ করেছে ২৪ আগষ্টের সমন্বয়সহ ছাত্র জনতা। এতে চট্টগ্রাম–খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এসময় সড়কের উভয় পাশে দীর্ঘ যানজট লেগে যায়।
পীরগাছা উপজেলা প্রতিনিধি (রংপুর) জানান, ৩৬ জুলাই বিপ্লবের অন্যতম নায়ক শরীফ ওসমান হাদি নিহতের খবর প্রকাশের সাথে সাথেই প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে পরে সারা দেশ। খবর প্রকাশের পরপরই রংপুরের পীরগাছা-কাউনিয়া উপজেলার রাজপথে ছাত্রজনতার ঢল নামে। মিছিলে অংশ নেন জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন।
রাত সারে ১১টার দিকে কাউনিয়া উপজেলার বেইলি ব্রীজ বাজারে ‘তুমি কে আমি হাদী-হাদী’ আমরা সবাই হাদী হবো গুলির মুখে কথা কবো। আয় হাসিনা দেখে যা রাজপথে তোর বাবারা। একটা একটা লীগ ধর, ধইরা ধইরা জেলে ভর। শ্লোগানে উত্তাল হয়ে পরে পীরগাছা- কাউনিয়ার মাটি।
জেলা প্রতিনিধি, পিরোজপুর জানান, সন্ত্রাসী হামলায় আহত ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র জুলাই যোদ্ধা শরীফ ওসমান হাদীর মৃত্যুর খবরে পিরোজপুরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য পরিষদ। মিছিলটি বের হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিন শেষে স্থানীয় শহীদ মিনার সংলগ্ন জুলাই স্মৃতিস্তম্ভে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে এক সংক্ষিপ্ত পথসভা অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা প্রতিনিধি, খাগড়াছড়ি জানান, জুলাই আন্দোলনের আপসহীন প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর ও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান হাদীর মৃত্যুর খবর মুহূর্তেই খাগড়াছড়িতে শোক আর ক্ষোভে ফেটে পড়ে জেলার সর্বস্তরের ছাত্র জনতা। রাতে খাগড়াছড়ি শহরে নেমে আসে তীব্র বিক্ষোভ ও প্রতিবাদের ঢেউ। শাপলা চত্বর থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভ মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। স্লোগানে স্লোগানে কেঁপে ওঠে পুরো শহর—
“আমার ভাই মরলো কেন?” “হাদীর রক্ত বৃথা যেতে দেবো না”
বিক্ষোভকারীদের দাবি:
বিক্ষোভকারীরা হাদির হত্যার দায়ীদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন। তারা বলেন, “শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যু ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনের প্রতীক হয়ে থাকবে। দেশের মানুষ আর এসব নৃশংসতা মেনে নেবে না।”
শরীফ ওসমান হাদি ১২ ডিসেম্বর বিজয়নগরের বক্স-কালভার্ট এলাকায় মোটরসাইকেল থেকে গুলিবিদ্ধ হন। গুরুতর অবস্থায় প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য ১৫ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ ডিসেম্বর তিনি মারা যান।
আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

