বগুড়ায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে, জনমনে আতঙ্ক

সবুর শাহ্ লোটাস, বগুড়া
প্রকাশ : ০৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৮: ৫১

বগুড়ায় ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের বহু নেতাকর্মী পালিয়ে গিয়েছিলেন। ঈদকে কেন্দ্র করে এর মধ্যে ঘরে ফিরেছেন অনেকেই। এদের প্রায় সবাই হত্যাসহ বিভিন্ন মামলার আসামি। বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সখ্য গড়ে গোপনে দলকে সংগঠিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। এসব আসামি অবাধ বিচরণ করছে নগরের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে। ফ্যাসিবাদের দোসর এসব সন্ত্রাসীদের আনাগোনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে জেলার বাসিন্দাদের মধ্যে।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর জেলা আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের কিছু নেতা গ্রেপ্তার হন। এরপর থেকে দলটি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা পালিয়ে যান। কিন্তু ঈদ উপলক্ষে দলটি ও এর অঙ্গসংগঠনের নিচু স্তরের অনেক নেতা ঘরে ফিরেছেন। শাজাহানপুর, সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, কাহালু, নন্দীগ্রাম, শিবগঞ্জ, দুপচাঁচিয়া, আদমদিঘী, শেরপুর, ধুনট উপজেলা ও বগুড়া শহরের কলোনি, ফুলদিঘী, ফুলতলা, মেডিকেল, চারমাথা, তিনমাথা, মালতীনগর, বাদুড়তলা, হাড্ডিপট্টি, চেলোপাড়া, আটাপাড়া, কালীতলাসহ বিভিন্ন এলাকায় তাদের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের নমনীয়তার কারণে জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের অনুসারীরা বগুড়ার বিভিন্ন এলাকায় সক্রিয় হচ্ছেন। শুধু তাই নয়, তারা আওয়ামী লীগ নেতাদের বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানও দেখাশোনা করছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বগুড়া সদর উপজেলার এক বাসিন্দা বলেন, আওয়াম লীগ, যুবলীগের অনেকেই ঈদ উপলক্ষে ঘরে ফিরেছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। কিন্তু পুলিশ তাদের ধরছে না। এসব সন্ত্রাসী প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানোর কারণে আমরা আতঙ্কিত।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের এসব নেতাকর্মী একত্রিত হয়ে যে কোনো সময় অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে। ৫ আগস্টের পর গ্রেপ্তার বিহারি সামছাদ জামিনে মুক্তি নিয়ে পালিয়ে যায়। বর্তমানে তার লোকজন কলোনিতে অবস্থান করছে। কলোনির এক যুবলীগ নেতা ঈদের আগে একটি মসজিদ উন্নয়নের জন্য ৫০ হাজার টাকা অনুদান দেন। কয়েকটি মসজিদে ইফতারের জন্যও টাকা দেন তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বগুড়ার গন্ডগ্রামের যুবলীগ নেতা টিক্কা এলাকায় ফিরে এসেছেন। নিশিন্দারা ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ সভাপতি গোলাম রফিক, যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মনির, ইয়াহিয়া জনি এলাকায় অবস্থান করছেন। খান্দার এলাকায় গ্রেপ্তার কাউন্সিলর আলহাজ, মেডিকেল কলেজ এলাকায় আদিল, চেলোপাড়া কালীতলায় যুবলীগ নেতা লিটন পোদ্দার ও বাদুড়তলা চারমাথা নামাজগড় এলাকায় পলাতক মতিন সরকারের কর্মীদের আনাগোনা বেড়েছে। এরা স্থানীয় বিএনপির মধ্যম পর্যায়ের নেতাদের আশ্রয়ে এলাকায় অবস্থান করছেন।

বগুড়া ডিএসবির সাতমাথার দায়িত্বে থাকা ছামছুল ইসলাম জানিয়েছেন, বগুড়া শহরের ডিএসবি ও গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইয়ের লোকজন ঈদে ছুটিতে থাকার সুযোগ নিচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বগুড়া সদর থানার ওসি মঈন উদ্দিনের কর্মকাণ্ডে অষন্তোষ রয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে। কয়েজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বগুড়ায় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাদের বিরুদ্ধে হত্যাসহ বিভিন্ন মামলা হলেও তিনি আসামিদের গ্রেপ্তারে উল্লেখযোগ্য সফলতা দেখাতে পারেননি। ফলে বগুড়া শহরে এসব আসামিরা এখন প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এদিকে ঈদের আগে চারমাথা এলাকা থেকে বেশকিছু জুয়াড়িকে গ্রেপ্তার করা হলেও তা পুলিশের খাতায় নেই।

এ বিষয়ে বগুড়া পুলিশের মিডিয়ার দায়িত্বে থাকা সুমন রঞ্জন বলেন, বিষয়গুলো নিয়ে পুলিশ তদন্ত করছে।

পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় মধ্যে সম্প্রতি স্থানীয় জনতা বগুড়া সদর ও শাজাহানপুরে স্বেচ্ছাসেবক লীগের তিনজনকে আটক করে। তারা হলেন— বগুড়া পৌরসভার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা রিপন ও শাজাহানপুরের হাতকাটা ফারুক ও বন ফারুক। পরে তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

এদিকে বগুড়ায় শ্রমিক লীগের ইব্রাহিম, ইসরাফিল ও খায়রুল বাশার শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনে যোগদান করেছে বলে জানা যায়।

এ ব্যাপারে পালশা ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি মারুফ বলেন, তারা আমাদের দাওয়াতি কাজে অংশ নিয়েছেন। বিগত সময়ে এরা শ্রমিক লীগের ছামছুদ্দিন শেখ হেলাল ও যুবলীগ নেতা আব্দুল মতিন সরকারের সঙ্গে রাজনীতি করতেন।

বিষয়টি নিয়ে জেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি আজগর আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি আমার দেশকে বলেন, শ্রমিক লীগ থেকে কেউ ফেডারেশনে এসেছে কি না এটি আমার জানা নেই।

ফ্যাসিবাদের দোসররা আবারও একত্রিত হয়ে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসান। তিনি এসব সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান।

বগুড়ার জলেশ্বরীতলার ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সম্পাদক আব্দুর রশিদ বলেন, আমরা ফ্যাসিস্টের সহযোগীদের গ্রেপ্তার দেখতে চাই।

বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা আমার দেশকে বলেন, বিশেষ গোপনীয়তায় ফ্যাসিস্টের অঙ্গসংগঠনের তালিকা থানায় থানায় তৈরি হচ্ছে। খুব দ্রুত তা দৃশ্যমান হবে।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত