আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতাকে ফুলের মালা দিয়ে দলে ভেড়ালেন বিএনপি সভাপতি

উপজেলা প্রতিনিধি, পীরগাছা (রংপুর)

যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতাকে ফুলের মালা দিয়ে দলে ভেড়ালেন বিএনপি সভাপতি
ছবি : আমার দেশ

জুলাই বিপ্লবে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পলায়নের পর আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে অন্তর্বর্তী সরকার। এরপর দলটির অনেক নেতাকর্মী ভারতসহ বিভিন্ন দেশে পালিয়ে গেলেও বড় একটি অংশ বিএনপিসহ অন্যান্য দলে অনুপ্রবেশ করে। এরকমই রংপুরের পীরগাছায় আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী ভোল পাল্টে বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন।

আসন্ন সংসদ নির্বাচনের আগ মুহূর্তে পীরগাছা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আমিনুল ইসলাম রাঙ্গা আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে বিএনপিতে পুনর্বাসন করেন। এ তালিকায় আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের অন্তত ২০ নেতাকর্মী রয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

এ ঘটনায় বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এছাড়া অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী এবং স্থানীয় জনগণও বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা করেছেন।

উপজেলা বিএনপির সভাপতি আমিনুল ইসলাম রাঙ্গা গত সোমবার সন্ধ্যায় দলটির উপজেলা কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে ফুলের মালা পরিয়ে গ্রহণ করেন । এর মধ্যে উপজেলা যুবলীগের সদস্য সোহাগ মিয়া ও শাকিল মিয়া, পীরগাছা সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান, পীরগাছা সদর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য আকবার আলী, নুরুল হক ও মনজিলের নাম উল্লেখযোগ্য।

ছবি : আমার দেশ
ছবি : আমার দেশ

বিএনপিতে যোগ দেওয়া আওয়ামী নেতাকর্মী ও উপজেলা সভাপতি রাঙ্গার বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও ফেসবুকে শেয়ার করেন স্থানীয় অনেক নেতাকর্মী। ফলে বিষয়টি অনেকের নজরে আসে। এরপর থেকে বিএনপি নেতাদের ব্যাপক সমালোচনা করেন দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

সোমবার পীরগাছা উপজেলা মৎস্যজীবী দলের আহ্বায়ক রবিউল ইসলাম রবি তার ফেসবুক আইডিতে একটি ভিডিও শেয়ার করে লেখেন, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ থেকে বিএনপিতে যোগদান সোহাগ ও বুলেট ভাইয়ের নেতৃত্বে। এরপর তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। ওই পোস্টে বিএনপির অনেক কর্মী-সমর্থক ক্ষোভ প্রকাশ করে মন্তব্য করেন। এছাড়া ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে এ বিষয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন তারা।

আতাউল সুজন নামে একজন ফেসবুকে লেখেন, এই দোসরদের ঠাঁই দেওয়াটা বিএনপির বড় ভুল হচ্ছে। এরাই আগামীতে ফণা তুলে কালসাপের মতো দাঁড়াবে। সাবধান! আওয়ামী লীগ!

রবিউল ইসলাম নামে একজন মন্তব্য করেন, দলের ১২টা বাজাতে আর বেশিদিন সময় লাগবে না। এছাড়া শাহরিয়ার জাহান নামে একজন মন্তব্য করেন, বিএনপি নিজের শরীরে জীবাণু প্রবেশ করালো।

বিএনপির দলীয় কর্মী-সমর্থকরা ছাড়াও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতা এবং স্থানীয় জনগণও আওয়ামী নেতাকর্মীদের বিএনপিতে যোগদানের বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা করেছেন।

জামায়াতে ইসলামীর রংপুর জেলার মানবসম্পদ বিভাগের সভাপতি আব্দুল মোত্তালেব বলেন, আসন্ন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করার জন্য সরকার যখন কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করছে; ঠিক সেই মুহূর্তে বিএনপি তাদের দলে নিয়ে বাঁচানোর চেষ্টা করছে। এটি জুলাইয়ের চেতনার সঙ্গে বেঈমানি! জুলাইযোদ্ধাদের সঙ্গে বেঈমানি! বিএনপির এমন দ্বিচারি কর্মকাণ্ডের জবাব জনগণ ব্যালটের মাধ্যমে দেবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পীরগাছা উপজেলার প্রধান সমন্বয়কারী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের বিচারাধীন সময়ে তাদের পুনর্বাসন কোনোভাবেই কাম্য নয়। শুধু দলের রাজনৈতিক সুবিধার্তে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করা অপ্রত্যাশিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সম্রাট নামে এক ব্যক্তি ফেসবুক লেখেন, পীরগাছা-কাউনিয়া থানার মানুষ যদি ভালো থাকতে চান; তাহলে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ নামক সন্ত্রাসকে ভোট দেবেন না।

রাসেল ইসলাম লিংকন নামে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী লেখেন, বেশি না! পাঁচ বছর পর আবার ১৭ বছর পালিয়ে থাকার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সাপের বাচ্চা সাপই হয়!

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আমিনুল ইসলাম রাঙ্গা বলেন, আমি দলীয় স্বার্থ বিবেচনা করেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আওয়ামী লীগের নিচু পদের লোকজনকে দলে নিয়েছি। কোনো বড় পদধারীকে দলে নেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম বলেন, দলে অনুপ্রবেশের বিষয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...