পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডাক্তার , ওষুধ ও শয্যা সংকটে খুড়িয়ে চলছে চিকিৎসা সেবা ।১৭ লাখ মানুষের আধুনিক চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন মাত্র ২০ চিকিৎসক।
৫০০ শয্যার এ হাসপাতালএখনো চলছে আড়াইশ শয্যার চিকিৎসাসেবা।৫০০ শয্যার মেডিকেল হাসপাতালের জন্য নির্মিত নতুন ভবনের কার্যক্রমের সময়সীমা দফায় দফায় বাড়ানো হয়েছে। অথচ প্রতিদিন রোগী ভর্তি হচ্ছে পাঁচশতাধিক বলে জানাগেছে। শযঅর চেয়ে দ্বিগুণের বেশি রোগী প্রতিদিন ভর্তি হচ্ছেন। হাসপাতালে চিকিৎসকসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংকট, রয়েছে ওষুধ, যন্ত্রপাতি, খাবার ও নিরাপত্তার অভাব। তার ওপর বাড়তি রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ২০০৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ১০০ শয্যা থেকে আড়াইশ শয্যায় উন্নীত হয় হাসপাতালটি। ২০১৪ সালের ১০ জানুয়ারি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০২০ সালের ২৬ অক্টোবর ২৫০ থেকে ৫০০ শয্যায় উন্নীত করার প্রশাসনিক অনুমোদন পায়। কিন্তু পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার একযুগ হতে চললেও অদ্যাবধি পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা চালু হয়নি। ৫০০ শয্যা চালু করতে নতুন ভবনসহ অবকাঠামোর কাজ ২০২৪ সালের জুনে প্রকল্প মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রকল্পের মেয়াদ কয়েক ধাপ বর্ধিত করে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত করেছে। তবে প্রকল্প কর্তৃপক্ষের দাবি, আগামী জুনের মধ্যে ৫০০ শয্যার কার্যক্রম শুরু হবে।
পটুয়াখালী হাসপাতালের শুরু থেকেই জনবল সংকটের চিকিৎসা সেবা ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে । ৫৯ জন চিকিৎসকের মধ্যে আছে ২০ জন। ৩৯ জনই নেই। ২০ জন দিয়ে খুঁড়িয়ে চলছে ১৭ রাখ মানুষের চিকিৎসা সেবা। হাসপাতালে গুরুত্বপূর্ণ সার্জারি, শিশু, মেডিসিন, ইএনটি, অ্যানেস্থেসিয়া, চর্ম ও যৌন, কার্ডিওলজি, অর্থোপেডিক পদে কোনো সিনিয়র কনসালট্যান্ট নেই। এছাড়া প্যাথলজিস্ট, রেডিওলজিস্ট পদ দীর্ঘদিন শূন্য পড়ে আছে। পরিচ্ছন্ন কর্মীর ৪০ জনের মধ্যে আছে মাত্র ৪ জন। ডোম নেই, ড্রাইভার দুইজনের মধ্যে আছে একজন।
রোগী ভর্তি ৫৮২ জন। খাবার দেওয়া হচ্ছে ২৫০ জনের। হাসপাতালে দারোয়ান, সুইপার, আয়া, ওয়ার্ড বয়, মালি না থাকায় হাসপাতালের ভেতরে ও বাইরের ময়লা-আবর্জনার স্তূপ এবং বাথরুমের দুর্গন্ধে রোগী আরো অসুস্থ ও অস্বস্তিতে ভুগছেন। হাসপাতালের এ চিত্র প্রতিদিনের। কিন্তু এ সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেই কারও। সবাই শুধু প্রতিশ্রুতি দেয়, কিন্তু প্রতিশ্রুতি আলোর মুখ দেখে না।
গলাচিপা থেকে আসা শিশু রোগীর পিতা মো. রাসেল হাওলাদার বলেন, ‘সিট নাই, এক সপ্তাহ একটি বেডে দুই পরিবারের দুই শিশু থাকে। এতে শিশুরা ভালো চিকিৎসা পাচ্ছে না। আমার বাচ্চা নিয়ে এসে বেড না পেয়ে অনেক ভোগান্তিতে আছি’।
ডায়রিয়া ওয়ার্ডে সদর উপজেলার জৈনকাঠি গ্রামের সালমা বেগম (৩১) বলেন, ‘ওয়ার্ডে রোগীর ভিড়ে সিট না পেয়ে আসা যাওয়ার পথে বিছানা করে বাচ্চ নিয়ে অনেক কষ্ট করে আছি। ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে একাকার হয়ে রয়েছে। বাথরুমের অবস্থা তো আরো শোচনীয়। এখানে থাকলে সুস্থ মানুষও অসুস্থ হয়ে পড়বে’।
পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রকল্প পরিচালক ডা. এস এম কবির হাসান বলেন, প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ না হওয়ায় ইতোপূর্বে কয়েক দফা সময় বর্ধিত করা হয় এবং সর্বশেষ ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে। আমি আশাবাদী আগামী জুনের মধ্যেই হাসপাতালের ৫০০ শয্যার কার্যক্রম শুরু করতে পারব।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলরুবা ইয়াসমিন লিজা জানান, ২০১৪ সালে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রকল্প শুরু হয়। কিন্তু ২০২৫ সালে এসেও কিন্তু সেই ৫০০ শয্যা হাসপাতাল চালু করতে পারিনি এখনো। সেই আড়াইশ শয্যা হাসপাতালেই চিকিৎসা দিচ্ছি। বর্তমানে প্রতিদিন তিনগুণের মতো রোগী ভর্তি হচ্ছে। এসব রোগীরা মেজেতে, করিডোরে, বারান্দায় শুয়ে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছে। এ অবস্থায় যারা চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং যারা চিকিৎসা দিচ্ছেন উভয়েই ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন এবং রোগীদের পরিপূর্ণ সেবা দেওয়াও দুরূহ হয়ে পড়েছে। নতুন ভবনটি চালু হলে কিছুটা হলেও সমস্যার সমাধান হবে।

