চট্টগ্রামে বাবলা খুনের আসামি রায়হানের খোঁজে র‌্যাব

জমির উদ্দিন, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ১০ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ১৭

চট্টগ্রাম নগর ও জেলায় একের পর এক হত্যাকাণ্ডের ‘মূল পরিকল্পনাকারী’ দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী মুহাম্মদ রায়হান এখন র‌্যাবের ‘টার্গেট ওয়ান’। সরওয়ার হোসেন বাবলা হত্যার পর থেকেই তাকে ধরতে মরিয়া হয়ে উঠেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরই ধারাবাহিকতায় গত শনিবার রাতে ফটিকছড়ির পাহাড়ি এলাকায় অভিযান চালায় র‌্যাব। তবে আগেভাগেই খবর পেয়ে পালিয়ে যায় রায়হান।

র‌্যাব ও পুলিশের ভাষ্য, রায়হান চট্টগ্রামে একের পর এক খুন ও গুলির ঘটনায় জড়িত। বাবলা হত্যার পাশাপাশি রাউজানে যুবদল কর্মী আলমগীর ওরফে আলম হত্যারও মূল হোতা সে।

বিজ্ঞাপন

পুলিশ জানায়, গত বুধবার বায়েজিদের চালিতাতলী এলাকায় সরওয়ারকে গুলি করার আগে থেকেই তাকে হুমকি দিচ্ছিল রায়হান। একটি অডিওতে রায়হানকে বলতে শোনা যায়, ‘বাবলা চট্টগ্রামে বাঁচতে পারবে না। তাকে মেরে আমি রাউজানে ঢুকব।’ হুমকির ঠিক কয়েক সপ্তাহ পর‍ বাবলাকে খুন করা হয়। এ ঘটনায় হওয়া মামলায় রায়হানকেও আসামি করা হয়।

চট্টগ্রাম উত্তর পুলিশের উপকমিশনার আমিরুল ইসলাম আমার দেশকে বলেন, বাবলা খুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আসামি রায়হানকে ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।

রায়হানের বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজানের সদর ইউনিয়নে। জুরুরকুল খলিফাবাড়ির মৃত বদিউল আলমের ছেলে রায়হানকে একসময় স্থানীয় আওয়ামী লীগের মিছিলে দেখা যেত। পরে ক্ষমতার পরিবর্তনের পর বিএনপির কর্মসূচিতেও সক্রিয় হন। তিনি এখন চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদের ডানহাত হিসেবে পরিচিত। সাজ্জাদ গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার অস্ত্রভাণ্ডারের দেখভাল করছেন তিনি।

৪ হত্যায় রায়হানের নাম

পুলিশ ও র‌্যাবের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, রায়হান বড় সাজ্জাদের নির্দেশে ‘টার্গেট অপারেশন’ পরিচালনা করে। ছোট সাজ্জাদ গ্রেপ্তার হওয়ার পর বড় সাজ্জাদের অপারেশন পরিচালনা করছে সে। ছোট সাজ্জাদ জেলে থাকলেও তার নির্দেশ জেলখানা থেকেই পৌঁছে যায় রায়হানের কাছে। এরপর থেকে খুন, চাঁদাবাজি ও এলাকায় প্রভাব বিস্তারের দায়িত্বে মূল নেতৃত্ব দেয় সে।

র‌্যাব বলছে, রায়হানের দল এখন ৮ থেকে ১০ জনের একটি সশস্ত্র গ্রুপে পরিণত হয়েছে। তাদের হাতে বিদেশি পিস্তল, একে-২২ ও এলজি থাকে। টার্গেট ঠিক হলেই মোটরসাইকেলে করে এসে গুলি ছুড়ে পালিয়ে যায় তারা। বাবলা হত্যার দিনও একই কৌশল ব্যবহার হয়েছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি।

রায়হানের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত অন্তত ছয়টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে চারটি হত্যা ও দুটি অস্ত্র মামলা। তবুও তাকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। র‌্যাবের কর্মকর্তারা জানান, পাহাড়ি এলাকা ও সীমান্ত ঘেঁষা গ্রামগুলোতে সে লুকিয়ে আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

র‌্যাবের একটি সূত্র জানায়, রায়হান এখন তাদের টার্গেট ওয়ান। বাবলা হত্যাসহ কয়েকটি খুনের নেপথ্যে তার সম্পৃক্ততা মিলেছে। তাকে দ্রুতই আইনের আওতায় আনা হবে।

বাবলা ছাড়াও গত অক্টোবরে রাউজানে যুবদলকর্মী মুহাম্মদ আলমগীর আলমকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় রায়হানের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে বলে ধারণা করছে পুলিশ। এক ব্যক্তির সঙ্গে মুঠোফোনে আলমের কথোপকথনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে রায়হানকে নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করতে শোনা গেছে আলমকে।

তার কয়েকদিন পর মোটরসাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফেরার সময় রাউজান পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের চারাবটতল বাজারসংলগ্ন কায়কোবাদ জামে মসজিদের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয় আলমকে। এ সময় তার স্ত্রী ও সন্তান পেছনে একটি অটোরিকশায় ছিলেন।

নিহত আলমের ছেলে আশফায়েত হাসেন বলেন, আমার চোখের সামনেই বাবাকে গুলি করে হত্যা করেছে রায়হান। বাবার সঙ্গে থাকা দুজনও গুলিবিদ্ধ হন। আমার ধারণা, কেউ আগে থেকে পরিকল্পনা করে ভাড়াটে রায়হানকে দিয়ে বাবাকে খুন করিয়েছে।

নিহত বাবলার ছোট ভাই ইমরান খান আজিজ বলেন, আমার ভাই বাবলাকেও রায়হান হত্যা করেছে। গুলি করে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় প্রত্যক্ষদর্শীরা তাকে দেখেন।

গত ৩০ মার্চ নগরীর বাকলিয়ার এক্সেস রোডে প্রাইভেটকারে থাকা বখতিয়ার হোসেন মানিক ও আব্দুল্লাহ আল রিফাতকে গুলি করে হত্যা করা হয়। মামলায় ছোট সাজ্জাদ ও তার স্ত্রী তামান্নার সঙ্গে রায়হানকেও আসামি করা হয়। পুলিশ চারজনকে গ্রেপ্তার করলেও রায়হানকে এখনো ধরতে পারেনি।

রাউজান থানার ওসি মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, রায়হান কথায় কথায় গুলি ছোড়ে। রাউজান ও ফটিকছড়ির পাহাড়ি এলাকায় তার আস্তানা। সেখান থেকে এসে অপরাধ করে, আবার দ্রুত পাহাড়ে পালিয়ে যায়। সাজ্জাদের কাছ থেকেই সে অস্ত্র চালানো শিখেছে।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত