চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার উত্তর নিশ্চিন্তপুর গ্রামে ফেসবুকে আপত্তিকর ছবি ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি সহ্য করতে না পেরে সাদিয়া আক্তার (২১) নামে এক গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছেন।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৯ সেপ্টেম্বর সকালে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় এলাকায় নিন্দা ও ক্ষোভের ঝড় উঠেছে।
নিহতের পিতা আব্দুল হাকিম বেপারী একই গ্রামের আবুল বাবুর্চির ছেলে আরিফ মুন্সি, সামছুদ্দিন সরকারের ছেলে মোস্তফা কামাল এবং মোশারফ হোসেনের ছেলে মামুন বেপারীকে আসামি করে মতলব উত্তর থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
তবে অভিযোগ উঠেছে, এ ঘটনায় দূর্গাপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) নাছির মিয়া সরাসরি সম্পৃক্ত থাকলেও তাকে এজাহারে আসামি করা হয়নি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নাছির মেম্বার মামলার ৩ নম্বর আসামি মামুন বেপারীর ফোনে সাদিয়ার কিছু এডিট করা ছবি পাঠান। পরে তিনি নিজেই সাদিয়ার পরিবারের কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন এবং হুমকি দেন, টাকা না দিলে ছবিগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হবে। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
গ্রামবাসীর অভিযোগ, নাছির মেম্বার দীর্ঘদিন ধরেই এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে আসছেন। তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের সময় কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন নিখিলের ঘনিষ্ঠ হিসেবে এলাকায় পরিচিত ছিলেন। সরকার পরিবর্তনের পর কিছুদিন আড়ালে থাকলেও সম্প্রতি আবার সক্রিয় হয়েছেন।
স্থানীয়দের দাবি, তিনি নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ড ও মাদক কারবারের সঙ্গেও জড়িত।
যোগাযোগ করা হলে নাছির মেম্বার বলেন, ‘সাদিয়ার আগের স্বামী আমার ফোনে কিছু ছবি পাঠিয়েছিল। আমি সেই ছবি মামুনকে দিয়ে তাদের পরিবারকে সতর্ক থাকতে বলেছিলাম। ওগুলো দিয়ে কেউ চাঁদা দাবি করেছে—এমন কিছু জানি না।’
অন্যদিকে মামলার আসামি মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আমি এলাকায় কাজীর কাজ করি। কিছুদিন আগে কাজীর বৈধতা নিয়ে মামলা হয়েছিল, আদালত আমাদের পক্ষে রায় দেয়। প্রতিপক্ষের লোকজন প্রতিশোধ নিতে আমাদের এই আত্মহত্যার মামলায় জড়িয়েছে।’
নিহতের পিতা আব্দুল হাকিম বেপারী বলেন, ‘ওরা আমার মেয়ের ছবি দেখিয়ে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেছিল। না দিলে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেবে বলে হুমকি দেয়। বিষয়টি জানাজানি হলে আমার মেয়ে মানসম্মান হারানোর ভয়ে বিষপান করে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। আমি তাদের কঠোর শাস্তি চাই।’
মতলব উত্তর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. রবিউল হক বলেন, ‘ঘটনাটি সংবেদনশীল। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। তদন্ত চলছে। তদন্তে যারই সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে, তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

