মাত্র ৫ বছরে দেড় কোটি টাকার সম্পদের মালিক আ.লীগের মেয়র

চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ : ২০ অক্টোবর ২০২৫, ২০: ৩০

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মিরসরাই বারইয়ারহাট পৌরসভার সাবেক মেয়র ও মিরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রেজাউল করিম খোকনের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সম্পদ বিবরণীতে মিথ্যা তথ্য প্রদানের অভিযোগে মামলা করেছে।

বিজ্ঞাপন

দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-২ থেকে উপসহকারী পরিচালক মো. জসিম উদ্দিন সোমবার মামলাটি দায়ের করেন। কমিশনের অনুমোদনক্রমে দায়ের করা এ মামলায় খোকনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করার অভিযোগ আনা হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম দুদকের উপপরিচালক সুবেল আহমেদ।

দুদকের মামলার এজাহারে বলা হয়, রেজাউল করিম খোকন দুর্নীতি দমন কমিশনে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে ১১ লাখ ৪৪ হাজার ৪১০ টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পদ গোপন করেন এবং জ্ঞাত আয় বহির্ভূত ১ কোটি ৪৪ লাখ ৮৭ হাজার ৬৭৩ টাকার সম্পদ অসাধু উপায়ে অর্জন করে ভোগদখলে রাখেন। ২০১৯ সালে প্রাথমিক অনুসন্ধানে রেজাউল করিম খোকনের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ প্রমাণিত হয়। ওই বছরের ৩ এপ্রিল দুদক প্রধান কার্যালয় থেকে তাকে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়।

পরবর্তী সময়ে ২০১৯ সালের ৬ মে খোকন তার সম্পদ বিবরণী দুদকের চট্টগ্রাম-২ কার্যালয়ে জমা দেন। ওই বিবরণীতে তিনি নিজের নামে ২৮ লাখ ৫৪ হাজার ৭৮১ টাকার স্থাবর সম্পদ ও ৫২ লাখ ৫০ হাজার ১৫৭ টাকার অস্থাবর সম্পদের তথ্য দেন। কিন্তু যাচাই-বাছাইয়ে দুদক পায়, তার নামে ৩৯ লাখ ৯৯ হাজার ১৯১ টাকার স্থাবর সম্পদ রয়েছে। অর্থাৎ তিনি ১১ লাখ ৪৪ হাজার ৪১০ টাকার সম্পদ গোপন করেছেন।

দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে, সম্পদ বিবরণী দাখিলের পর মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে রেজাউল করিম খোকন, তার স্ত্রী ও পুত্রের নামে প্রায় ১ কোটি ৪৩ লাখ টাকার স্থাবর সম্পদ অর্জন করেন। সাব রেজিস্ট্রার অফিস, জোরারগঞ্জ থেকে পাওয়া দলিলপত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এসব সম্পদ তার বৈধ আয়–উৎসের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।

আয়ের উৎস বনাম সম্পদ

দুদকের অনুসন্ধানে জানা যায়, খোকনের আয়কর সনদ অনুযায়ী তিনি ২০১০–১১ করবর্ষ থেকে আয়কর রিটার্ন দাখিল করে আসছেন। ওই সময় পর্যন্ত ১৫ বছরে তার বৈধ মোট আয় ছিল ১ কোটি ১৭ লাখ ৪৭ হাজার ৪১২ টাকা। কিন্তু এই সময়ে তিনি স্থাবর ও অস্থাবর মিলে ২ কোটি ৪২ লাখ ১০ হাজার ৮৪৮ টাকার সম্পদ অর্জন করেন। দায় হিসেবে তার ছিল মাত্র ৭ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। ফলে বৈধ উৎসের বাইরে তার সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ কোটি ৪৪ লাখ ৮৭ হাজার ৬৭৩ টাকা।

দুদক বলছে, আসামি তার আয়কর বিবরণী ও কমিশনে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীর মধ্যে অসঙ্গতি সৃষ্টি করেছেন এবং জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ ভোগদখলে রেখে আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। দুদক চট্টগ্রাম কার্যালয়ের যাচাই প্রতিবেদন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানোর পর চলতি বছরের ১৪ অক্টোবর তারিখে প্রধান কার্যালয় থেকে মামলার অনুমোদন (Sanction) দেয়া হয়।

এরপর কমিশনের অনুমোদনক্রমে উপ-সহকারী পরিচালক মো. জসিম উদ্দিন রেজাউল করিম খোকনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

এজাহারে উল্লেখ করা হয়, আলোচ্য অভিযোগ যাচাই ও অনুসন্ধানপূর্বক মামলা রুজুর জন্য কমিশনের অনুমোদন প্রাপ্তির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বিলম্ব হয়েছে। তদন্তে অন্য কারও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তা আমলে নেওয়া হবে।

দুদক বলেছে, মামলাটি তদন্তের জন্য কমিশন উপযুক্ত তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করবে। অনুসন্ধান চলাকালে রেজাউল করিম খোকনের আর্থিক লেনদেন, জমিজমা ও ব্যাংক হিসাব যাচাইয়ের নির্দেশনা থাকবে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত