দুর্গাপূজা ও সাপ্তাহিকের টানা ছুটি

কক্সবাজারে লাখো পর্যটকের ঢল

আনছার হোসেন, কক্সবাজার
প্রকাশ : ০২ অক্টোবর ২০২৫, ২১: ৪৩
আপডেট : ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৭: ৪৩

হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে টানা কয়েকদিন বিরতির সুযোগে কক্সবাজার এখন মুখরিত। শহরজুড়ে এখন দেশের নানাপ্রান্ত থেকে আসা পর্যটকদের পদচারণায় পা ফেলার ঠাঁই মিলছে না। হোটেল-মোটেল, গেস্টহাউসগুলোয় মিলছে না কোনো ফাঁকা কক্ষ। অতিরিক্ত ভ্রমণপিপাসুর ঢলে আবাসিক হোটেলগুলো নিজেদের ব্যবস্থাপনা সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে।

গত মঙ্গলবার রাত থেকে আজ বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত সময়ের শিডিউল অনুসারে ভ্রমণপ্রেমী মানুষরা কক্সবাজার এসে পৌঁছেছেন। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত নানা বয়সের পর্যটকে লোকারণ্য হয়েছে সৈকতের বেলাভূমি ও পর্যটনস্পটগুলো।

বিজ্ঞাপন

তবে হঠাৎ মুষলধারে বৃষ্টিপাত দর্শনার্থীদের ভোগান্তিতে ফেলেছে। টানা ছুটিতে পর্যটন নগরীতে পাঁচ লক্ষাধিক পর্যটক উপস্থিতির আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ সময় কয়েকশ কোটি টাকা বাণিজ্য হবে বলেও আশা তাদের। কিন্তু সেই সৌন্দর্য, আশা ও আনন্দের মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বৃষ্টি। সাগরে নিম্নচাপ ও উপকূলে বৃষ্টি- পর্যটকদের আনন্দ উদযাপনকে সংকটাপন্ন করে তুলছে।

শরতের ঠান্ডা-গরম আবহাওয়ায় সূর্যাস্ত দেখা ও সাগরের নোনা পানিতে গোসলে সব বয়সের মানুষ সৈকত ও বেলাভূমিতে নামেন। ভিড় জমে উঠে হোটেল-মোটেল জোনের অলিগলি ও রাস্তায়। দীর্ঘদিন পর তিল ধারণের ঠাঁই নেই অবস্থা কক্সবাজারে। পর্যটকবাহী ও সাধারণ পরিবহন এবং ইজিবাইক, সিএনজি অটোরিকশায় বাইপাস সড়ক, কলাতলী ডলফিন মোড়, হোটেল-মোটেল জোন, লাবণী, শৈবাল সড়ক সবখানেই তীব্র যানজট লাগছে পর্যটন নগরীতে। কোনো কোনো সড়কে লোকজটও হয়েছে। বড় বাসগুলো টার্মিনাল এলাকায় থাকলেও মাঝারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন গাড়ি পর্যটন এলাকা ও শহরে ঢোকায় এই যানজট বলে মনে করছেন স্থানীয় লোকজন।

333

শহর ও জেলাজুড়ে টইটম্বুর এই পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সতর্ক হয়ে দায়িত্বপালন করছেন ট্যুরিস্ট ও জেলা পুলিশ। মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশও। মাঠে টহল দিচ্ছেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ ভ্রাম্যমাণ আদালত।

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের প্রধান ও অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ জানান, টানা ছুটিকে টার্গেট করে পূর্বপরিকল্পনা মতোই বিপুলসংখ্যক পর্যটক এসেছেন কক্সবাজারে। কেউ এসেছেন মঙ্গলবার রাতে, আবার কেউ এসেছেন বুধবার। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সতর্ক অবস্থায় দায়িত্বপালন করছে ট্যুরিস্ট ও জেলা পুলিশ। মোতায়েন রাখা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ।

তিনি বলেন, যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে সিসিটিভির আওতায় আনা হয়েছে পর্যটনস্পটগুলো। ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে দ্রুত সাধারণ চিকিৎসা ও খাবার পানির ব্যবস্থা রয়েছে তথ্যকেন্দ্রগুলোয়।

অন্যদিকে সমুদ্রে গোসলকালীন বিপদাপন্ন পর্যটকদের রক্ষায় সতর্ক অবস্থায় রয়েছেন লাইফগার্ড কর্মীরা। এরপরও পর্যটকদের সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়ে মাইকিং করছেন জেলা প্রশাসনের বিচ কর্মীরা।

চট্টগ্রামের লোহাগাড়া এলাকা থেকে পরিবার নিয়ে আসা আবদুল মোহাইমিন বলেন, প্রবাস থেকে সপ্তাহখানেক আগে ফিরেছি। পরিবারের ইচ্ছাতে টানা ছুটিতে সবাইকে নিয়ে কক্সবাজারের তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইসে উঠেছি। পুরো হোটেলে পর্যটক ভর্তি বলে মনে হচ্ছে।

ওশান প্যারাডাইস লিমিটেডের বিপণন ব্যবস্থাপক ইমতিয়াজ নুর সোমেল বলেন, এবারের পর্যটন মৌসুমটা বন্ধ দিয়ে শুরু হয়েছে। মৌসুমে নিত্যদিন কক্সবাজারে পর্যটক উপস্থিতি থাকছে। দুর্গাপূজা ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে একসঙ্গে বিপুলসংখ্যক মানুষ বেড়াতে এসেছেন।

কক্সবাজার ট্যুর্স অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (টুয়াক) আহ্বায়ক মিজানুর রহমান মিল্কী সাংবাদিকদের বলেন, শুধু কক্সবাজার নয়, ইনানী-হিমছড়িসহ সব পর্যটন স্পটে পর্যটকদের উপস্থিতি বেড়েছে। মৌসুমের যাত্রাটা আমাদের আশান্বিত করছে।

amardesh

কলাতলীর সি নাইট গেস্ট হাউসের ব্যবস্থাপক শফিক ফরাজী বলেন, হোটেল-মোটেলগুলোতে লোকসমাগম বেড়েছে। এই সমাগম আগামী দিনগুলোয় কতটা থাকবে সেটাই এখন দেখার বিষয়।

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে দায়িত্বপালন করা সি সেফ লাইফ গার্ডের সুপারভাইজার মোহাম্মদ ওসমান বলেন, বিশ্ব পর্যটন দিবস থেকেই কক্সবাজারে পর্যটক আগমন ঘটছে। তারই ধারাবাহিকতায় আগামীকাল শনিবার পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, প্রতিদিন সকাল থেকেই ঢেউয়ের সঙ্গে খেলছেন পর্যটকরা। আনন্দে আত্মহারা হয়ে অনেকে বিপৎসীমার বাইরেও চলে যান। তাদের কিনারায় আনতে কাজ করার পাশাপাশি নিরাপদ থাকতে বারবার সতর্ক করছি আমরা।

কক্সবাজারের নবাগত জেলা প্রশাসক আবদুল মান্নান বলেন, মঙ্গলবার থেকেই সৈকতের সব পয়েন্টে লোকসমাগম বেড়েছে। তবে সুগন্ধা, লাবনী ও কলাতলী পয়েন্টে পর্যটক সমাগম একটু বেশি। তিনি জানান, সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে তথ্যকেন্দ্র আছে। কোথাও পর্যটক হয়রানির অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে মাঠে কাজ করছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

কক্সবাজার পুলিশ সুপার সাইফুদ্দিন শাহীন বলেন, বাড়তি পর্যটক ও দর্শনার্থীদের কথা মাথায় রেখে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্বপালন করছে পুলিশ। অনাকাঙ্ক্ষিত যেকোনো ঘটনা রোধে পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে এবং পর্যটক বেশেও পুলিশের নারী সদস্যরা সৈকতে ঘুরছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তার মতে, প্রচুর পর্যটক আর দুর্গাপূজার প্রতিমা বিসর্জন- সব মিলিয়ে এলিট ফোর্স র‌্যাব ও সেনাবাহিনীও মাঠে নেমেছে।

ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে আইআরআই প্রতিনিধি দলের বৈঠক

শুক্র-শনিবারও চলবে বিমানবন্দরের শুল্কায়ন কার্যক্রম

প্রধান উপদেষ্টার আদেশে জুলাই সনদের আইনি রূপ দিতে হবে

নভেম্বরের মধ্যে তিস্তা মহাপরিকল্পনা শুরুর দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি

আইআরআই’র সঙ্গে নির্বাচনের প্রক্রিয়া ও ইসির নিরপেক্ষতা নিয়ে আলোচনা এনসিপির

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত