রাউজানে বিএনপি নেতার ওপর হামলা

সহিংসতার বিষয়ে আগেই সতর্ক করেন গোয়েন্দারা

সোহাগ কুমার বিশ্বাস, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ০৩ আগস্ট ২০২৫, ০৬: ২২
আপডেট : ০৩ আগস্ট ২০২৫, ০৬: ৪০

চট্টগ্রামের রাউজানে বিএনপি নেতার ওপর ভয়াবহ হামলার ঘটনায় আগেই তথ্য পেয়েছিল সব পক্ষ। সহিংসতার আশঙ্কা করায় বিষয়টি জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে বিএনপি নেতাদের বিবদমান দুই পক্ষ এবং স্থানীয় পুলিশকেও সতর্ক করেছিলেন গোয়েন্দারা। এরপরও হামলা এবং ওই ঘটনায় ত্বরিত দলীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

গোয়েন্দারা সংঘর্ষের আশঙ্কা করে যে প্রতিবেদন জেলা প্রশাসনের কাছে সরবরাহ করেছিলেন, তা আমার দেশ-এর হাতে এসেছে। ২৮ জুলাই অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মাহবুবুল হক স্বাক্ষরিত চিঠিটি পাঠানো হয় চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার ও র‌্যাব-৭-এর অধিনায়ক বরাবর। অনুলিপি পাঠানো রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসককে।

বিজ্ঞাপন

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকারের আগামী ২৯ জুলাই গাড়িবহর ও মোটরসাইকেল শোভাযাত্রার মাধ্যমে রাউজান উপজেলার সাত্তার ব্রিজ হয়ে রাউজান পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের রাউজান ছালামত উল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়সংলগ্ন এলাকায় স্থানীয় এক বিএনপি নেতার কবর জিয়ারত করার কর্মসূচি আছে। কর্মসূচিতে রাজনৈতিক সহিংসতা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিধায় অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স ও র‌্যাব টহল জোরদারকরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হলো।’

সতর্কতার পরও ২৯ জুলাই বিকালে সেই সাত্তার ব্রিজ এলাকায় উত্তর জেলা বিএনপির সদ্যবিলুপ্ত কমিটির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকারের গাড়িবহরে হামলা হয়। একপর্যায়ে বিএনপির দুপক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এতে গোলাম আকবরসহ অন্তত ২৫ জন আহত হন। ঘটনার দুই ঘণ্টার মধ্যে গোলাম আকবর নেতৃত্বাধীন উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। বহিষ্কার করা হয় মিরসরাই উপজেলা বিএনপি ও যুবদলের পাঁচ নেতাকে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর পদও স্থগিত করা হয়।

পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম সানতু বলেন, জেলা প্রশাসনের সতর্কবার্তা পেয়ে বিএনপির বিবদমান দুপক্ষের নেতা গোলাম আকবর ও গিয়াস কাদেরের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়। একই সঙ্গে বিরোধ মীমাংসার পর কর্মসূচি পালনের অনুরোধ জানানো হয়েছিল। কিন্তু তারা কেউ হয়ত সমঝোতায় পৌঁছতে পারেননি। এরপরও নিরাপত্তা দিতে প্রশাসনের বাড়তি প্রস্তুতি ছিল। ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টগুলোয় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি র‌্যাব ও সেনাবাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছিল। এতকিছুর পরও সংঘাত এড়ানো সম্ভব হয়নি।

গিয়াস কাদের বলেন, গোয়েন্দা প্রতিবেদনটি প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরবরাহ করা হয়েছিল। এরপর নেতাকর্মীদের তিনি নিবৃত্ত করে রেখেছিলেন। কিন্তু গোলাম আকবর পরিকল্পিতভাবে ঝগড়া বাধাতে রাউজানে গিয়ে উসকানি দিয়েছিলেন। কথিত সংঘর্ষের ওই ঘটনার আধা ঘণ্টার মধ্যে পদ স্থগিতের নোটিস আসায় পুরো ঘটনাকে পরিকল্পিত মনে হচ্ছে। এছাড়া সংঘর্ষের ঘটনা ঘটল রাউজানে, বহিষ্কার হলো মিরসরাইয়ের নেতারা। এর কারণ খুঁজে বের করা দরকার।

গোলাম আকবর বলেন, গোয়েন্দা প্রতিবেদনের বিষয়টি তাকে জানানো হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে এবং কোনো সহিংসতা হবে না- এমন নিশ্চয়তা দেওয়ার পরই তিনি রাউজানে গিয়েছিলেন। পুলিশ সুপার, র‌্যাব ও সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের জানিয়ে কর্মসূচি পালন করার পরও তার ওপর হামলার ঘটনা পরিকল্পিত।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত