কট্টর আওয়ামী পরিবারের সন্তান নাজনীনকে সচিব পদমর্যাদা

জমির উদ্দিন, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ৩০ আগস্ট ২০২৫, ০৯: ৫৮
আপডেট : ৩০ আগস্ট ২০২৫, ০৯: ৫৯

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হারিয়েছে এক বছর আগে। পালিয়ে গেছেন দলটির শীর্ষ পর্যায়ের প্রায় সব নেতা। সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও গণহত্যার অভিযোগে কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের।

কিন্তু প্রশাসনে তাদের প্রভাব রয়ে গেছে অটুট। দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে ফ্যাসিবাদী দলটির নেতাকর্মী ও অনুসারীদের বহাল থাকা এবং নতুন করে নিয়োগÑতারই প্রমাণ। এর মধ্যে কট্টর আওয়ামী পরিবারের সন্তান ড. নাজনীন কাউসার চৌধুরীর পদোন্নতি অন্যতম।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রামের আওয়ামী ঘরানার রাজনৈতিক পরিবারের কন্যা ড. নাজনীন। সচিব পদে উন্নীত হয়ে এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন তিনি। গত ২৬ আগস্ট জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করে তাকে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এনএসডিএ) নির্বাহী চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। এনএসডিএ চেয়ারম্যানের পদ সচিব পদমর্যাদার।

ড. নাজনীনের রাজনৈতিক পরিচয় গোপন নয়। তার বাবা বদিউল আলম চৌধুরী ছিলেন ভাষাসংগ্রামী, মুক্তিযোদ্ধা এবং শেখ মুজিবুর রহমান ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ঘনিষ্ঠ সহযোদ্ধা। যুগ যুগ ধরে তারা কট্টর আওয়ামী পরিবার হিসেবে পরিচিত এবং রাজনীতিতে সক্রিয়। শুধু তাই নয়, ড. নাজনীনের ভাই মনোয়ার উল আলম চৌধুরী নোবেল বর্তমানে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। আবার খালা জোবাইরা নার্গিস খান চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক।

যুবলীগ নেতা নোবেল সাবেক স্বৈরাচার হাসিনার শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের রাজনীতি করতেন। চট্টগ্রামে সাবেক যুবলীগ সন্ত্রাসী ও জুলাই-আগস্টে চট্টগ্রামে একাধিক ছাত্রহত্যা মামলার আসামি হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরকে গুরু মানতেন তিনি। চট্টগ্রামে জমিদখল, অস্ত্রবাজি, টেন্ডারবাজিসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে আছে তাদের নাম।

নোবেলের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে বড় কলঙ্কের দাগ লেগেছে হত্যা মামলায় জড়িয়ে। ২০১৩ সালের ২৪ জুন নগরীর সিআরবিতে জোড়া খুনে তার জড়িত থাকার অভিযোগ। আলোচিত ওই হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি তিনি। এই মামলায় তার বিচার চলছে। কারাগারেও যেতে হয়েছিল তাকে। নোবেল নগরীর অলংকার, এ কে খান, কর্নেলহাট বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজি ও মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত।

ড. নাজনীনের পদোন্নতি ঘিরে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে একটি চিঠি। ২০২২ সালের ১৭ এপ্রিল লেখা সেই চিঠিটি দিয়েছেন তৎকালীন সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ। সেটি ছিল তৎকালীন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের কাছে। সেখানে মন্ত্রী সরাসরি উল্লেখ করেন, ড. নাজনীন আওয়ামী পরিবারের সন্তান। তাই তাকে ‘অর্থ বিভাগ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ অথবা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পদায়ন’ করার সুপারিশ করেন।

চিঠিতে নুরুজ্জামান আহমেদ লিখেছিলেন, ড. নাজনীন ব্যক্তিগতভাবে আমার পরিচিত। তিনি সততা, নিষ্ঠা ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। পারিবারিকভাবে ‘বঙ্গবন্ধুর’ আদর্শের অনুসারী। তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা, ভাষাসংগ্রামী ও ‘বঙ্গবন্ধুর’ সহযোদ্ধা ছিলেন। তার ভাই যুবলীগে গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন। খালা চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা। তাই তাকে উপযুক্ত জায়গায় দিলে তিনি আরো নিষ্ঠা নিয়ে কাজ করবেন।

এ সুপারিশপত্র পদোন্নতির খবর প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। প্রশাসনের ভেতরে-বাইরে শুরু হয় নতুন করে তর্কবিতর্ক।

ড. নাজনীন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব ছিলেন। এর আগে তিনি বাংলাদেশ চা বোর্ডের চট্টগ্রাম কার্যালয়ে সদস্য (অর্থ ও বাণিজ্য) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তার অভিজ্ঞতা রয়েছে, তিনি বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে বাংলাদেশ দূতাবাসে কাজ করেছেন।

অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের পতনের পরও প্রশাসনে তাদের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের পদোন্নতিÑএটিকে প্রশাসনের ভেতরে ‘আওয়ামী নেটওয়ার্কের সক্রিয়তা হিসেবেই দেখছেন অনেক কর্মকর্তা। কেউ কেউ বলছেন, সিনিয়র কর্মকর্তাদের বড় অংশ এখনো আওয়ামী ঘরানার, ফলে পদোন্নতি ও গুরুত্বপূর্ণ পোস্টিংয়ে সে প্রভাব কাজ করছে।

সাব-জেলে অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তারা, সরকারের কাছে যে আহ্বান জানালেন ব্যারিস্টার আরমান

অসদাচারণের দায়ে টঙ্গী পাইলট স্কুলের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে শোকজ

জরুরি অবস্থা জারি করলেন পেরুর প্রেসিডেন্ট

গুম-খুনে জড়িত ১৫ সেনা কর্মকর্তা চাকরিচ্যুত। ট্রাইব্যুনালে হাজির। সাবজেলে প্রেরণ

এবার ১ টাকায় গরুর মাংস বিতরণের ঘোষণা সেই এমপি প্রার্থীর

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত