বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতা এখন সোনালী ব্যাংক জিয়া পরিষদের সভাপতি

এম কে মনির, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ০১ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ১১
আপডেট : ০১ নভেম্বর ২০২৫, ১১: ৩২

সোনালী ব্যাংকের চট্টগ্রাম জেনারেল ম্যানেজারের কার্যালয়ের (জিএমও) এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার রাশেদুল ইসলামকে ঘিরে চলছে তুমুল আলোচনা। দীর্ঘদিন আওয়ামীপন্থি হিসেবে পরিচিত এ কর্মকর্তা এখন হয়েছেন বিএনপিপন্থি সংগঠন সোনালী ব্যাংক জিয়া পরিষদের চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সভাপতি। এতে ক্ষুব্ধ ব্যাংকের বিএনপিপন্থি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

আগে বঙ্গবন্ধু পরিষদ ও আওয়ামী লীগের শ্রমিক সংগঠন সোনালী ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সক্রিয় নেতা ছিলেন রাশেদুল ইসলাম। বঙ্গবন্ধুর জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকীসহ দলীয় বিভিন্ন আয়োজনে নিয়মিত অংশ নিতেন তিনি। অভিযোগ রয়েছে, জিএমদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে অফিস, বাসা ও নানা সুযোগ-সুবিধা নিতেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

৫ আগস্টের পর হঠাৎই তার রাজনৈতিক আনুগত্যের পরিবর্তন ঘটে। বর্তমানে তিনি সোনালী ব্যাংক জিয়া পরিষদ চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ নিয়ে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে বিএনপিপন্থিদের মধ্যে।

অভিযোগ আছে, যখন যে জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) আসতেন তার সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলে ব্যাংকের প্রশাসনিক নানা বিষয় হাতের মুঠোয় রাখতেন রাশেদুল ইসলাম। এভাবেই ব্যাংক নীতিমালা অনুযায়ী তিন বছরের বেশি একই কর্মস্থলে থাকা নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও রাশেদুল ইসলাম টানা এক যুগ সোনালী ব্যাংকের চট্টগ্রাম জিএমও (উত্তর ও দক্ষিণ) অফিসে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৪ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত উত্তরে এবং পরে বদলি হলেও একই ভবনের দক্ষিণ জিএমও অফিসে যোগ দেন তিনি।

অভিযোগ রয়েছে, ২০১৪ সাল থেকে নগরের মা ও শিশু হাসপাতালের পেছনে সোনালী ব্যাংক স্টাফ কলোনির ‘এ’ ভবনের একটি কর্মচারী কোয়ার্টারে অবৈধভাবে বসবাস করে আসছেন তিনি। গত মে মাসে পরিবারসহ অফিসার্স কলোনির ‘সি’ ভবনে উঠলেও সেটি আবার সনেট মল্লিক নামে অন্য এক কর্মকর্তার নামে বরাদ্দ। এছাড়া কলোনির আঙিনা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, রাশেদুল ইসলাম প্রভাবশালী জিএম ও সিবিএ নেতাদের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তাদের মাধ্যমে বাসা, পদোন্নতি ও প্রশাসনিক সুবিধা নিতেন। রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে এক যুগ ধরে ব্যাংকের কোয়ার্টারে ভাড়া ছাড়া বসবাস করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। বঙ্গবন্ধু পরিষদ ও সোনালী ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের প্রভাব খাটিয়ে তিনি এসব করতেন বলে অভিযোগ করেছেন খোদ তার সংগঠনের নেতারা।

গত ২১ সেপ্টেম্বর সোনালী ব্যাংক জিয়া পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুভাষ চন্দ্র চাকমা ও সাধারণ সম্পাদক এসএম আবুল বাশার নতুন চট্টগ্রাম জেলা কমিটি অনুমোদন দেন। ৩৫ সদস্যবিশিষ্ট কমিটিতে সভাপতি হন রাশেদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মো. নুর উদ্দিন চৌধুরী। তবে বিএনপিপন্থি কর্মকর্তাদের অভিযোগ, পুরো কমিটিতেই আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠরা রয়েছেন।

সোনালী ব্যাংকের বিএনপিপন্থি কর্মকর্তারা বলছেন, রাশেদুল ইসলাম ২০১৪ সাল থেকে আওয়ামী লীগের বি২০২ সংগঠন (আওয়ামী লীগের কর্মচারী সংগঠন) ও সোনালী ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের (আওয়ামী লীগের কর্মকর্তাদের সংগঠন) সঙ্গে নানাভাবে যুক্ত ছিলেন। এখন তিনি কীভাবে জিয়া পরিষদের সভাপতি হয়েছেন তা আমাদের বোধগম্য নয়। বিএনপিপন্থিরা এ কমিটিকে পকেট ও আওয়ামী ‍কমিটি হিসেবেও আখ্যা দিয়েছেন।

এ কারণে সংগঠনের চারজন কর্মকর্তা মঞ্জুর মোর্শেদ, আব্দুর রউফ, আলমগীর মো. নোমান চৌধুরী ও কাওসার জোহরা পদত্যাগ করেছেন। তারা প্রত্যেকে জিয়া পরিষদ সোনালী ব্যাংক কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে পদত্যাগপত্র দিয়েছেন। এতে তারা উল্লেখ করেছেন, কোনো ধরনের আলাপ না করেই তাদের কমিটিতে যুক্ত করা হয়েছে।

আওয়ামীপন্থি সোনালী ব্যাংক এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের এক নেতা রাশেদুল ইসলাম সম্পর্কে জানান, তিনি আমাদের সংগঠনেরই সদস্য ছিলেন। প্রেস রিলিজ লিখতেন, সব অনুষ্ঠানে থাকতেন। আওয়ামী লীগের পরিচয় দিয়ে নানা সুবিধা ভোগ করতেন। তিনি কীভাবে জিয়া পরিষদের সভাপতি হলেন সেটা আমাদের বোধগম্য নয়।

তিনি আরো জানান, রাশেদুল ব্যাংকের হাউস বিল্ডিং লোন প্রকল্পে জমি পরিদর্শনের সনদ দিয়ে অনিয়মের মাধ্যমে প্রচুর অর্থ নেন।

তবে রাশেদুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো অস্বীকার করে বলেন, আমি আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। কোনো প্রমাণও নেই। জিএমের নির্দেশে মাঝে মাঝে অনুষ্ঠানে ছবি তুলেছি। কলোনির কোনো আঙিনা তিনি ভাড়া দেননি বলেও দাবি করেন।

তবে তিনি বাসা দখলের অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, আমি জিএমের মাধ্যমে কিছুদিন স্টাফ কলোনিতে ছিলাম। বর্তমানেও সনেট মল্লিকের নামে বরাদ্দ বাসায় থাকছি। কিছুদিন পর বাসাটি ছেড়ে দেব। আসলে আমি হাউস বিল্ডিং লোন গ্রহণ করাতে বাসা পাইনি।

অবৈধভাবে বাসা ভোগ করার বিষয়ে জানতে চাইলে এ বিষয়ে জিএমও দক্ষিণের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার মশিউর রহমান বলেন, স্টাফ কলোনিতে কেউ থাকার কথা নয়। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। প্রমাণ মিললে বাসা বাতিল করা হবে। কলোনির মাঠ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দেওয়ার বিষয়টি সত্য নয় বলেও জানান তিনি।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত