বিএনপি প্রার্থীর নির্বাচনি প্রচারে গুলি

‘তোর সময় শেষ, যা খাওয়ার খেয়ে নে’, বাবলাকে মুঠোফোনে সন্ত্রাসী রায়হান

জমির উদ্দিন, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ১৮: ৪১

চোখের সামনে ছেলেকে গুলি করে ফেলে দিল সন্ত্রাসীরা। ঘাড়ে ঠেকানো পিস্তলের নল থেকে বেরোল ছয়টি গুলি-একটির পর একটি। মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন সরোয়ার হোসেন ওরফে বাবলা। রক্তে ভেসে গেল রাস্তা। তবু কোনো দ্বিধা না করে ছেলের রক্তাক্ত দেহ নিজের কাঁধে তুলে নিলেন বাবা, আবদুল কাদের।

বিজ্ঞাপন

‘যেমন করে ছোটবেলায় তাকে কাঁধে নিয়ে ঘুরেছি, তেমন করেই এবার কাঁধে নিলাম... কিন্তু এবার বাঁচাতে পারলাম না’ কথাগুলো বলতে বলতে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন কাদের।

বুধবার বিকেলে চট্টগ্রাম মহানগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার চালিতাতলী এলাকায় বিএনপি প্রার্থী এরশাদ উল্লাহর নির্বাচনী গণসংযোগে এ গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলেই গুলিতে নিহত হন বাবলা। গুলির একটি বুলেট তার বুক ও গলা ভেদ করে বেরিয়ে যায়। সেই বেরিয়ে যাওয়া গুলিতেই গুলিবিদ্ধ হন প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ। ঘটনাস্থল থেকে বাবা কাদের বাবলাকে হাসপাতালে নিয়ে যান।

আব্দুল কাদের জানান, বাড়ির পাশেই ছিল গণসংযোগ। ছেলেকে বারবার বলেছিলাম, না যেতে। কিন্তু সে বলেছিল, ‘রাজনীতি থেকে পালাব না, বাবা’। অথচ আজ আমার ছেলেকে বাড়ির সামনেই গুলি করে মারল।’ ঘটনার তিন দিন আগে ‘সন্ত্রাসী’ মো. রায়হান মুঠোফোনে হুমকি দিয়েছিল। ফোনে বলেছিল, ‘তোর সময় শেষ, যা খাওয়ার খেয়ে নে।’ আমার ছেলেকে আমি রক্তাক্ত অবস্থায় কোলে তুলেছিলাম। গাড়ি করে নিয়ে যাচ্ছিলাম হাসপাতালে। কিন্তু যাওয়ার আগেই সে আমার কোলে নিঃশ্বাস ত্যাগ করে।

আব্দুল কাদেরের দাবি, তার ছেলেকে দীর্ঘদিন ধরে হুমকি দিয়ে আসছিলেন বিদেশে পলাতক সাজ্জাদ আলী, তার সহযোগী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদ এবং মো. রায়হান। ‘আমার ছেলে সব সময় ভয় নিয়ে চলত, সঙ্গে লোকজন রাখত। কিন্তু বুধবার নিজের বাড়ির পাশেই ওদের হাতে মারা গেল,’ বলেন তিনি।

রক্তমাখা পাঞ্জাবি গায়ে আব্দুল কাদের বলেন, রিকশাতেই আমার ছেলে আমার কোলে মারা যায়। তারপরও আমি তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই, ভাবলাম হয়তো বাঁচবে। কিন্তু ডাক্তার এসে বলল, সব শেষ।

চালিতাতলীর খন্দকারপাড়া এলাকায় বাবলার বাড়ির সামনে এখন শোকের মাতম। প্রতিবেশীরা বলছেন, ছেলেকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন বাবা কাদের। তবে ছেলে বাবলাও পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী।

পুলিশ সূত্র জানায়, নিহত সরোয়ার হোসেন ওরফে বাবলার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, অস্ত্র ও হত্যাসহ অন্তত ১৫টি মামলা রয়েছে। তবে স্থানীয়দের দাবি, সাম্প্রতিক সময়ে তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন এবং প্রার্থী এরশাদ উল্লাহর ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে কাজ করছিলেন। গুলিবিদ্ধ বিএনপি প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ ও অপর চারজন বর্তমানে চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এদিকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (উত্তর) উপ-পুলিশ কমিশনার আমিরুল ইসলাম আমার দেশকে বলেন, নির্বাচনী গণসংযোগের সময় গুলির ঘটনায় বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত থানায় মামলা হয়নি। পরিবার অভিযোগ দিলে আমরা মামলা হিসেবে রেকর্ড করবো। গোলাগুলির ঘটনায় অভিযুক্তদের ধরতে মাঠে নেমেছে পুলিশ। আমরা বেশ কিছু ক্লু উদ্ধার করতে পেরেছি। আশা করি আজকের মধ্যে ভালো খবর পাওয়া যাবে।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত