চট্টগ্রামে শুনানি ৭ ও ৮ নভেম্বর

ভুয়া ভোটের কারিগরদের ডেকেছে নির্বাচন কমিশন

সোহাগ কুমার বিশ্বাস, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৫: ৪৮

আওয়ামী আমলে ২০১৪ থেকে ২৪ পর্যন্ত তিনটি ভুয়া ভোটের কারিগরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের দেওয়া সাক্ষ্য পর্যালোচনা করে আগামীতে যেন আর কোনো সরকার ভুয়া ভোটের আয়োজন করতে না পারে সে লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনাও তৈরি করা হবে। ঢাকার পর চট্টগ্রামে এই শুনানি অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৭ ও ৮ নভেম্বর।

ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন থেকে এই সংক্রান্ত একাধিক নির্দেশনা চট্টগ্রাম সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে এসেছে। নির্বাচন অফিস থেকে এসব ভুয়া ভোটে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের নির্দিষ্ট সময়ে উপস্থিত হওয়ার তাগিদ দিয়ে চিঠি পাঠানো শুরু করেছে।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এই শুনানি গ্রহণ করবেন জাতীয় নির্বাচন তদন্ত কমিশনের সদস্য তাজরিয়ান আকরাম হোসেন ও ড. মো. আব্দুল আলীম।

এর মধ্যে বেশ কয়েকটি চিঠি আমার দেশ-এর হাতে এসেছে। নির্বাচন কমিশন থেকে চট্টগ্রাম সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে আসা চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে দি কমিশন অর ইনকোয়ারি অ্যাক্ট ১৯৫৬-এর আওতায় ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ এ অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে পর্যালোচনাপূর্বক ভবিষ্যতে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য কমিশন গঠন করা হয়। তদন্তের জন্য কমিশন আগামী ৭ নভেম্বর আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

এতে ২০১৮-এর নির্বাচনে বাংলাদেশের যে কোনো সংসদীয় আসনে দায়িত্ব পালনকারী পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সহকারী পুলিশ সুপার, অফিসার ইনচার্জ, উপ-পরিদর্শক মিলিয়ে কমপক্ষে ১০ জন কর্তকর্তাকে শুনানিতে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

একই ভাষায় লেখা অন্য একটি চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৪ সালের নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৫ আসনে অংশগ্রহণকারী সব প্রার্থী। ২০১৮ সালের নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১১ আসনের দায়িত্বে থাকা রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, প্রিসাইডিং অফিসার (যে কোনো ৫ জন), সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার (যে কোনো ৫ জন), পোলিং এজেন্ট (যে কোনো ৫ জন)।

২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৫ আসনের দায়িত্বে থাকা রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, প্রিসাইডিং অফিসার (যে কোনো ৫ জন), সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার (যে কোনো ৫ জন), পোলিং এজেন্ট (যে কোনো ৫ জন)। কর্মকর্তাদের শুনানিতে হাজির করতে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

২০১৮ সালের নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা ছিলেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল মান্নান। পরবর্তীতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে বর্তমানে অবসরে আছেন তিনি। ২০২৪-এর নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল আহমেদ। বর্তমানে তিনিও অবসরে আছেন।

দুজন সহকরী রিটার্নিং কর্মকর্তার মধ্যে একজন বর্তমানে বরিশালের জেলা প্রশাসক অন্যজন কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে কর্মরত। ৭ ও ৮ নভেম্বরের শুনানিতে তারা সবাই উপস্থিত হবেন বলে নিশ্চিত করেছে নির্বাচন কমিশন।

চট্টগ্রাম সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বশির আহমেদ জানান, নির্বাচন কমিশনের চিঠি পেয়ে শুনানি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সবার নামে আলাদাভাবে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে, মূলত এমন শুনানি প্রতিটি বিভাগীয় শহরে অনুষ্ঠিত হবে। যার মূল লক্ষ্য তিনটি ভুয়া ভোটের আদ্যপান্ত খুঁজে বের করে এর সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করা। একই সঙ্গে সরকারের কোন পর্যায় থেকে দিক নির্দেশনা এসেছিল। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কী শুধুই চাকরির ভয়ে জনগণের ভোটাধিকার হরণ করেছিলেন নাকি তারাও ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হয়েছিলেন এই বিষয়টি খুঁজে বের করবে কমিশন।

জানা যায়, ভবিষ্যতে যাতে আর কোনো সরকার এমন ভুয়া নির্বাচনের আয়োজন করতে না পারে সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনার সুপারিশ করা হবে। পাশাপাশি উল্লিখিত তিনটি বিতর্কিত নির্বাচনে অতিউৎসাহী ভূমিকা পালন করা ও প্রভাব বিস্তার করা সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার সুপারিশও করা হবে। সে অনুযায়ী সরকার ব্যবস্থা নেবে।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত