জামায়াত নেতাদের আশ্রয়ে আ.লীগ নেতারা প্রকাশ্যে

জমির উদ্দিন, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ১৭: ০৮
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ১৭: ৩৯

জামায়াতের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রামের সাতকানিয়া-লোহাগাড়া। এখানেই প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন আওয়ামী লীগের পদধারী নেতারা। এরা সেই নেতাই, যারা গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালিয়েছিল, হত্যা মামলার আসামিও বটে।

রোববার (২ অক্টোবর) মাগরিবের পর সাতকানিয়ার কেরানিহাটের ‘আল হাইয়াত রেস্টুরেন্টের’ সামনে গল্প করতে দেখা গেছে এই আওয়ামী লীগ নেতাকে।

বিজ্ঞাপন

শুধু তাই নয়, জামায়াত নেতারা তাদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠকও করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানো আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীর খোঁজ নিয়েছে আমার দেশ -এর এই প্রতিবেদক। যাদের মধ্যে রয়েছেন, আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ও জুলাই আগস্টে ছাত্র হত্যা মামলার আসামি শামসুল ইসলাম। অপারেশন ডেভিল হান্ট অভিযানে যাকে চলতি বছরের ২ মার্চ চট্টগ্রাম চকবাজার চট্টেশ্বরী এলাকা থেকে পুলিশ গ্রেপ্তারও করেছিল। পরে জামিন থেকে বের হয়ে এখন সাতকানিয়ায় প্রকাশ্যে রাজনীতি করছেন।

অভিযোগ রয়েছে, তিনি বৈঠক করেছেন জামায়াত নেতাদের সঙ্গেও। তার ছয়টি ইটভাটা রয়েছে, জামায়াত নেতাদের সহায়তায় যেগুলো তিনি নিয়মতি দেখাশোনাও করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শামসুল ইসলাম আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়ার রাজনীতি করতেন। ফ্যাসিস্ট-স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সময়ে বিপ্লব বড়ুয়ার প্রভাব খাটিয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব করেছিলেন। অনেক ব্যবসায়ীর সহায়-সম্পত্তি জোর করে দখলও করেছিলেন। তার সঙ্গে ছবি রয়েছে সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত, আওয়ামী লীগের এমপি আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী, এম এ মোতালেবসহ একডজন মন্ত্রী-এমপিদের সঙ্গে।

তার পার্টনার হিসেবে থাকা সাতকানিয়া সদর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. ফরিদুল আলম। তিনি নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের রাজনীতি করতেন। জুলাই-আগস্টে ছাত্র জনতার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান চলাকালে ছাত্রদের আন্দোলন দমাতে আ জ ম নাছিরকে ২০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। সেই আওয়ামী লীগ নেতাও এখন সাতকানিয়ায় প্রকাশ্যে। তিনি আবার সাতকানিয়ার ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদকও। নির্বাচনবিহীন এই সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বপালন করছেন গত ১৫ বছর ধরে। সাতকানিয়ার কেরানিহাটের গরুর বাজারের সামনে রয়েছে তার অফিস। সেখানে নিয়মিত অফিস করছেন।

এই দু’নেতা শুধু জামায়াত বা পুলিশ নয়, সাতকানিয়ার নিরাপত্তাবাহিনীর ক্যাম্পেও যাওয়া আসা করেন প্রকাশ্যেই। সম্প্রতি তাদের দু’জনকে কয়েকবার ক্যাম্পে যাওয়া আসা করতে দেখা গেছে। অভিযোগ রয়েছে, চট্টগ্রাম নগর জামায়াতের এক জৈষ্ঠ নেতার প্রশ্রয়ে তারা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

এনসিপি এই দু’জনের বিষয়ে পুলিশকে গ্রেপ্তার করার জন্য বললেও, জামায়াতের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নিতে বলেনি বলে পুলিশের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করেছে। ফলে, পুলিশ কিংবা নিরাপত্তাবাহিনী এই দু’জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না।

শুধু এই দু’জন নয় ফরিদুল আলমের ভাই দিদারুল আলমও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

তিনি এখন জামায়াত নেতাদের সঙ্গে উঠবস করছেন। সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও ছদাহা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোসাদ হোসাইন চৌধুরী ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় প্রথম সারির কয়েকজন ছাড়া বেশিরভাগই এখন এলাকায় অবস্থান করছেন। প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

এনসিপির দক্ষিণ জেলার যুগ্ম সমন্বয়কারী মো. সিফাত হোসাইন আমার দেশকে বলেন, শামসুল ইসলাম ও ফরিদুল আলম আওয়ামী লীগের পদধারী নেতা। শামসুল ইসলামের সঙ্গে স্থানীয় প্রভাবশালী জসিম উদ্দিন বৈঠক করেছেন। জসিম উদ্দিন জামায়াতের রাজনীতি করে কি-না, জামায়াত ভালো জানবে। শামসুলসহ আরো যারা আওয়ামী লীগের পদধারী তাদের গ্রেপ্তার করার জন্য পুলিশকে অনেকবার বলেছি। কিন্তু তারা অজ্ঞাত কারণে চুপ।

অভিযোগের বিষয়ে সাতকানিয়া জামায়াতের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন আমার দেশকে বলেন, তিনি (শামসু) এখন এলডিপি করেন। আগে আওয়ামী লীগের কমিটিতে ছিলেন। আমার সঙ্গে তার বৈঠকের খবরটি মিথ্যা। শামসুল দুষ্ট লোক। আর এনসিপির যে নেতা অভিযোগ করেছেন, তারা ছোট ছেলে কী আর বলব।

সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু মাহমুদ কাওসার হোসেন বলেন, আমাকে তথ্যগুলো দেন, আমি গ্রেপ্তার করব। এরকম প্রকাশ্যে অবস্থান করার কথা না। তাদের না ধরা বা গ্রেপ্তার না করার বিষয়ে জামায়াতের কোনো চাপ নেই।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত