চট্টগ্রামে ভারতীয় কূটনৈতিক কার্যালয়ে হামলার অভিযোগ ঘিরে যে গুজব ও বিভ্রান্তিকর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। মাঠপর্যায়ের তথ্য, দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের বক্তব্য এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও বিশ্লেষণে তা প্রমাণিত হয়েছে।
জানা গেছে, ঘটনার সূত্রপাত হয় শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) রাত ১০টার দিকে ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর। ওই খবরের প্রতিক্রিয়ায় চট্টগ্রাম নগরীর কয়েকটি এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে প্রথমে একদল বিক্ষুব্ধ মানুষ ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনারের বাসভবনের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। তারা সড়কের ওপর অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উত্তর জোনের উপকমিশনার (ডিসি) আমিনুর ইসলাম জানান, ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনের অফিসে হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি। একটি গ্রুপ ওই এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় কয়েকজন পাথর নিক্ষেপ করে। পাথরগুলো কার্যালয়ের বাইরের গেটে পড়েছে। এর বাইরে ভেতরে প্রবেশ, ভাঙচুর কিংবা অগ্নিসংযোগের কোনো ঘটনা ঘটেনি। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়।
ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হাসিব আজিজ রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতি সরেজমিনে পর্যালোচনা করেন। পরে তিনি জানান, চট্টগ্রামে ভারতীয় কোনো কার্যালয়ে হামলার ঘটনা ঘটেনি। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখেছে এবং কূটনৈতিক স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক এবং নিরাপত্তা বিশ্লেষক অধ্যাপক এম শাহীদুজ্জামান বলেন, সংবেদনশীল কূটনৈতিক স্থাপনা ঘিরে গুজব ছড়ানো একটি পরিকল্পিত অস্থিতিশীলতার কৌশলও হতে পারে। বাস্তবে ছোট আকারের বিক্ষোভ বা বিচ্ছিন্ন পাথর নিক্ষেপের ঘটনাকে ‘হামলা’ হিসেবে উপস্থাপন করলে জনমনে আতঙ্ক তৈরি হয় এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
অধ্যাপক শাহীদুজ্জামানের মতে, প্রশাসনের উচিত ঘটনার পরপরই একক, স্বচ্ছ ও তথ্যভিত্তিক ব্রিফিং দেওয়া যাতে সত্য-মিথ্যার ফারাক স্পষ্ট থাকে। একই সঙ্গে দায়িত্বশীল রাজনৈতিক আচরণ ও মিডিয়ার ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া জোরদার করা না গেলে ভবিষ্যতে এমন গুজব আরো বিপজ্জনক রূপ নিতে পারে।
আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

