হাসিনার দুঃশাসনে বিধ্বস্ত জনপদ
মহব্বত হোসেন, টাঙ্গাইল
দল-মত নির্বিশেষে সারা দেশে ফ্যাসিবাদী দল আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরে যে তাণ্ডব চলেছে, টাঙ্গাইলও তার ব্যতিক্রম নয়। ভিন্নমতের মানুষের বিরুদ্ধে মামলা, গুম, খুন, তাদের জমিজমা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দখল ছিল অনেকটা স্বাভাবিক ঘটনা। জেলা শহর থেকে তৃণমূল পর্যায়ে একই কায়দায় চলেছে নির্যাতন। এ সময়ে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ২৮১টি মামলায় অন্তত ৯ হাজার আসামি করা হয়।
রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা জানান, টাঙ্গাইল থেকে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীকে নিধন করতে নেওয়া হয় বিশেষ পরিকল্পনা। এর অংশ হিসেবে বিএনপির অর্ধডজন নেতাকর্মীকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে আওয়ামী লীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। অনেক নেতাকর্মীকে চিরতরে পঙ্গু করে দেওয়া হয়। দখল করে নেওয়া হয় বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও জায়গাজমি। নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেয়ে অনেকে দেশত্যাগ করতে বাধ্য হন।
অভিযোগ রয়েছে, শহরে মার্কেট নির্মাণের নামে সরকারি জায়গা দখল করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। এ সময় মধুপুর বনের প্রায় তিন হাজার একর জমি দখল করেন তারা।
ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার সময়ে টাঙ্গাইলে গণহারে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স পান আওয়ামী নেতাকর্মী ও সন্ত্রাসীরা। পুলিশের গুলিতে জুলাই বিপ্লবে টাঙ্গাইলের ৯ ছাত্র-জনতা শহীদ হন। আহত হন অন্তত ২৭০ জন।
ওয়ান-ইলেভেনের পর ক্ষমতায় এসে টাঙ্গাইলে বিএনপি নিধনের ছক কষতে শুরু করে আওয়ামী লীগ। বিএনপি-ছাত্রদল ও যুবদলসহ ভিন্নমতের অন্তত ৫০ জনের একটি তালিকা করে কিলিং মিশনের কাজ শুরু হয়। ২০১৩ সালে টাঙ্গাইলে একটি চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার এক আসামি গ্রেপ্তার হলে রিমান্ডে এ তথ্য ফাঁস করে দেয় গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে।
জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম পিন্টুকে ফাঁসানো হয় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায়। বিষয়টি বিএনপি নিধন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দেখছেন বিএনপি নেতারা। চাঞ্চল্যকর এ মামলায় পিন্টুর দুই ভাই তাজউদ্দিন ও রাতুলকেও আসামি করা হয়। আদালতে পিন্টু ও তাজউদ্দিনের ফাঁসির আদেশ আর রাতুলের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়।
আব্দুস সালাম পিন্টু এ মামলায় দীর্ঘ ১৭ বছর কারাবরণ করেন। তার দুই ভাই ছিলেন পলাতক। পিন্টুর আরেক ভাই জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কৃষিবিদ শামছুল আলম তোফা একাধিক মামলার আসামি হয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। আরেক ভাই বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর ওপর চলে নির্যাতন। ৩৫০ মামলায় তাকে আসামি করা হয়। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদের পতনের পর ২৪ ডিসেম্বর আব্দুস সালাম পিন্টু কারামুক্ত হন।
বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ১২৯ মামলা
ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের সময়ে মিথ্যা ও গায়েবি মামলায় ভারাক্রান্ত ছিলেন বিএনপি ও দলটির অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। জেলা শহর থেকে ওয়ার্ড পর্যায়ে বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল, শ্রমিক দলসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দেওয়া হয় গায়েবি মামলা। মৃত অনেক ব্যক্তিকে জীবিত দেখিয়ে মামলা করে আওয়ামী লীগ ক্যাডাররা। বাড়িঘর ছেড়ে বছরের পর বছর পলাতক জীবনযাপন করেন হাজার হাজার নেতাকর্মী। গুমের শিকার হয়ে মাসের পর মাস আয়নাঘরে কাটে অনেকের জীবন। মামলায় জর্জরিত ও কিলিং মিশন থেকে বাঁচতে দেশ ছাড়েন অনেকে।
টাঙ্গাইলে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের প্রস্তুত করা তালিকা অনুযায়ী, জেলায় ১২৯টি মামলায় বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের প্রায় সাত হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। এ তালিকার বাইরেও অনেক মামলা রয়েছে, যা ব্যক্তিগতভাবে পরিচালনা করা হয়। বিস্ফোরক আইন, মাদকদ্রব্য আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইন, সন্ত্রাসবিরোধী আইন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, অস্ত্র আইন ও বন মামলাসহ কোনো মামলাই বাদ যায়নি।
বিএনপি নেতাকর্মীদের হত্যা, দমন-পীড়ন
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, টাঙ্গাইলে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন বিএনপির অন্তত অর্ধডজন নেতাকর্মী। এর মধ্যে ২০১৩ সালের মে মাসে সদরের পৌর এলাকা সাবালিয়ায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয় জেলা শ্রমিক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আজমকে। শহর ছাত্রলীগের নেতা ও সন্ত্রাসী ডন সোহেলের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫ জন আজমের বুকে কয়েক রাউন্ড গুলি করে। পরে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে।
একই বছরের ২০ ডিসেম্বর সদর উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি ও বারবার নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়। এর আগে জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুর রউফ ও রুমী চৌধুরীকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। আওয়ামী লীগের শাসনামলে মামলা দুটি রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রত্যাহার করা হয়।
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী লিয়াকত জানান, আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের দুঃশাসনে অনেককেই পলাতক জীবনযাপন করতে হয়েছে। মাসের পর থাকতে হয়েছে আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে। খোলা আকাশের নিচে কত রাত কেটেছে, তার হিসাব নেই। ২০১৩ সালের ১৮ মার্চ গোপালপুর সদরে কাজী লিয়াকত ও তার বড় ভাইয়ের বাড়িতে একসঙ্গে আগুন ধরিয়ে দেয় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। নগদ অর্থ, স্বর্ণালংকার ও আসবাবপত্র লুটে নেয় ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগ ক্যাডাররা।
২০২৪ সালের নির্বাচনের কদিন আগে যুবদলকর্মী পলাশ ও বিএনপির সভাপতি খালিদ হাসানকে কুপিয়ে আহত করা হয়। ২০১৩ সালে ছাত্রদল নেতা মোহাম্মদ আলী খান মঞ্জুর কসমেটিকস দোকানের মালামাল লুট করে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। ২০১৮ সালে ভুয়া নির্বাচনে তানভীর হাসান ছোট মনি সংসদ সদস্য (এমপি) নির্বাচিত হওয়ার পর ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে আওয়ামী লীগ। চাঁদাবাজি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও জমি দখল, যত্রতত্র ড্রেজিং মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন এবং মাদকে ছেয়ে যায় পুরো গোপালপুর উপজেলা।
গত ১৭ বছর শান্ত-সবুজ পাহাড়ি এলাকা ও আনারসের রাজধানী মধুপুর সন্ত্রাসের অভয়ারণ্যে পরিণত নেয়। ড. আব্দুর রাজ্জাক মধুপুর-ধনবাড়ি আসনে জালিয়াতির ভোটে এমপি হয়ে কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। তার আশীর্বাদপুষ্ট মধুপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সরোয়ার আলম আবু খাঁ ও পৌর মেয়র সিদ্দিক হোসেন খান ভয়ংকর গডফাদারের ভূমিকায় ছিলেন সে সময়। মামলা-হামলা আর নির্যাতনের শিকার হয়ে মধুপুর ছেড়ে যেতে বাধ্য হন বিএনপির অনেক নেতাকর্মী।
সাবেক মন্ত্রী রাজ্জাকের নির্বাচনি এলাকা ধনবাড়ীতে তার দুই মামাতো ভাই পৌর মেয়র মঞ্জুরুল ইসলাম তপন ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হারুনুর রশীদ হীরা ছিলেন এলাকার মূর্তিমান আতঙ্ক। বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন, হামলা-মামলা, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দখল ও চাঁদাবাজিসহ সব অপকর্ম নিয়ন্ত্রণ করতেন তারা।
মধুপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন জানান, আব্দুর রাজ্জাক মন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই শান্ত মধুপুরে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়। সভা-সমাবেশে জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে অরুচিকর বক্তব্য আর মিথ্যা তথ্য ছড়ানো ছিল তার কাজ।
জামায়াতে ইসলামীর ওপর নিপীড়ন
টাঙ্গাইলে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে ১৫২টি মামলা দায়ের করা হয়। এতে আসামি করা হয় প্রায় দুই হাজার ৫০০ নেতাকর্মীকে। জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির আহসান হাবিব মাসুদকে ১২ মামলা মাথায় নিয়ে প্রায় ১২ বছর পলাতক জীবনযাপন করতে হয়। ২০১৫ সালে গ্রেপ্তার হয়ে দুই মাস কারাবরণ করেন।
জামায়াতের তথ্যমতে, শেখ হাসিনার দুঃশাসনের সাড়ে ১৫ বছরে এক হাজার ২০০ নেতাকর্মী পুলিশ ও আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের নির্যাতনের শিকার হন। অনেকেই আজ পঙ্গুত্ব বরণ করছেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ৫ আগস্ট জেলা ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদকসহ সাত নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হন। তাদের ১২৭টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দখল করে নেয় আওয়ামী লীগ ক্যাডাররা। ২০১২ সালে আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে সাজানো মামলায় ফাঁসির আদেশের প্রতিবাদের পরপরই নির্যাতনের মাত্রা চরম আকার ধারণ করে। এ সময় শহরের ভিক্টোরিয়া রোডে জামায়াত নেতাকর্মীদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান কসমস কম্পিউটার সেন্টারে আগুন ধরিয়ে দেয় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। এ সময় প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়।
একই বছর করটিয়া জমিদার বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত জামায়াত নেতাকর্মীদের লাইট হাউস নামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আগুনে পুড়িয়ে দেয় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। শহরের ময়মনসিংহ রোডে অবস্থিত জেলা আমিরের পিস হসপিটাল নামের সেবামূলক প্রতিষ্ঠান উৎখাত করা হয়। ২০২৪ সালের মে মাসে ভুয়াপুর উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির আব্দুল্লাহ আল মামুনের কাপড়ের দোকান দখল করে যুবলীগ নেতাকর্মীরা।
এভাবে জেলা থেকে তৃণমূল পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের প্রায় ১২৭টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দখল করে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। জেলা জামায়াতের আমির ও ছাত্রশিবিরের নেতা মো. হাবিবুল্লাহ এবং আল আমিনকে কিলিং মিশনের চূড়ান্ত তালিকায় রাখা হয়।
২০১৩ সালে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মুক্তি দাবিতে ঢাকায় সমাবেশে যাওয়ার সময় জামায়াতের অন্তত ৪০ নেতাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে তাদের অমানবিক নির্যাতন ও সাত দিন গুম করে রাখা হয়। পরে আদালতে পাঠানো হলেও নির্যাতনের কারণে এজলাসে দাঁড়ানোর মতো অবস্থা ছিল না তাদের। ছাত্রশিবির শহর শাখার সাবেক সভাপতি সারোয়ারকে ঢাকায় রিমান্ডে নিয়ে হাত-পায়ের ২০টি আঙুলের নখ প্লায়ার্স দিয়ে টেনে তুলে ফেলে। এক পর্যায়ে সরোয়ার আলমের ডান পায়ের রগ ছিঁড়ে যায়।
জুলাই বিপ্লবে জেলার ৯ ছাত্র-জনতা শহীদ, আহত ২৭০
জুলাই বিপ্লবে পুলিশের গুলিতে টাঙ্গাইলের ৯ ছাত্র-জনতা শহীদ হয়েছেন। এর মধ্যে শহরের সাবালিয়া এলাকার স্কুলছাত্র মারুফ মিয়া ৫ আগস্ট আনন্দ মিছিলে গিয়ে সদর থানার কাছে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। গোপালপুরের হেমনগর ইউনিয়নের নলিন উত্তরপাড়া গ্রামের কলেজছাত্র মো. ইমন ঢাকা-টাঙ্গাইল মহসড়কে গোড়াই পুলিশ ফাঁড়ির সামনে গুলিবিদ্ধ হন। পরে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। বাকি সাতজন আহনাফ আবির, ছাদিক, ইকরামুল হক, ফিরোজ তালুকদার, লাল মিয়া, মো. বিপ্লব ও ইসমাইল মোল্লা ঢাকা, সাভার এবং গাজীপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত হন। বিপ্লবে জেলায় আহত হয়েছেন ২৭০ জন, তাদের বেশিরভাগই বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী।
গণহারে আ.লীগ নেতাদের আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স
আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরে টাঙ্গাইলে তাদের দলীয় নেতাকর্মীদের গণহারে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়। এমপি থেকে শুরু করে পাতিনেতা ও হত্যা মামলার আসামিরাও বাদ পড়েনি অস্ত্রের লাইসেন্স পাওয়া থেকে। দলটির ২৩ নেতা আগ্নেয়াস্ত্রের ২৭টি লাইসেন্স পেয়েছিলেন। এদের মধ্যে চারজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা ও অন্যদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার গত ১৭ বছরে যেসব আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে, তা স্থগিত করে অস্ত্র জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু টাঙ্গাইল-২ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি তানভীর হাসান ছোট মনি ও তার ভাই টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি গোলাম কিবরিয়া বড় মনি চারটি অস্ত্র এখনো জমা দেননি।
রাজনৈতিক দলের ভুক্তভোগী নেতাদের বক্তব্য
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের গত ১৭ বছর বিএনপি-জামায়াতসহ সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতনের বিষয়ে টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ঘনিষ্ঠ সহচর মুক্তিযোদ্ধা হামিদুল হক মোহন বলেন, আওয়ামী মুসলিম লীগ পরে আওয়ামী লীগ হয়ে উঠেছিল ক্ষমতালোভী উচ্চবিত্ত রাজনৈতিক দর্শনের একটি দল। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় যাওয়ার পর বিরোধী মতের প্রতি তাদের অনেকটা সহনশীলতা দেখেছি। কিন্তু ওয়ান-ইলেভেন সরকারের পর ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনা ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে ফ্যাসিজমের পথ বেছে নেন। যার পরিণতি হলো ৫ আগস্ট।
হামিদুল হক মোহন আরো বলেন, আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক শামছুল হক দুজনই ছিলেন টাঙ্গাইলের। অথচ পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ গোপালগঞ্জের সম্পত্তি হয়ে যায়। এটা টাঙ্গাইলবাসীর জন্য দুঃখজনক।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরে টাঙ্গাইলে আমরা অভিনব সব নির্যাতনের চিত্র দেখেছি। পুলিশের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীরা একসঙ্গে গ্রেপ্তার অভিযান পরিচালনা করত। বিএনপি নেতাকর্মীরা ছিলেন দেশের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক।
টাঙ্গাইল আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মো. শফিকুল ইসলাম রিপন বলেন, শেখ হাসিনার সময়ে আমরা মামলার যে ধরন দেখেছি, তা স্বৈরাচার এরশাদের শাসনকেও হার মানিয়েছে। জেলা শহর থেকে তৃণমূল পর্যায়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা মামলার জালে পড়ে যে হয়রানির শিকার হয়েছেন, তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। তিনি জানান, ৫ আগস্টের পর টাঙ্গাইল জেলার ৭৩টি মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে।
দল-মত নির্বিশেষে সারা দেশে ফ্যাসিবাদী দল আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরে যে তাণ্ডব চলেছে, টাঙ্গাইলও তার ব্যতিক্রম নয়। ভিন্নমতের মানুষের বিরুদ্ধে মামলা, গুম, খুন, তাদের জমিজমা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দখল ছিল অনেকটা স্বাভাবিক ঘটনা। জেলা শহর থেকে তৃণমূল পর্যায়ে একই কায়দায় চলেছে নির্যাতন। এ সময়ে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ২৮১টি মামলায় অন্তত ৯ হাজার আসামি করা হয়।
রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা জানান, টাঙ্গাইল থেকে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীকে নিধন করতে নেওয়া হয় বিশেষ পরিকল্পনা। এর অংশ হিসেবে বিএনপির অর্ধডজন নেতাকর্মীকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে আওয়ামী লীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। অনেক নেতাকর্মীকে চিরতরে পঙ্গু করে দেওয়া হয়। দখল করে নেওয়া হয় বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও জায়গাজমি। নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেয়ে অনেকে দেশত্যাগ করতে বাধ্য হন।
অভিযোগ রয়েছে, শহরে মার্কেট নির্মাণের নামে সরকারি জায়গা দখল করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। এ সময় মধুপুর বনের প্রায় তিন হাজার একর জমি দখল করেন তারা।
ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার সময়ে টাঙ্গাইলে গণহারে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স পান আওয়ামী নেতাকর্মী ও সন্ত্রাসীরা। পুলিশের গুলিতে জুলাই বিপ্লবে টাঙ্গাইলের ৯ ছাত্র-জনতা শহীদ হন। আহত হন অন্তত ২৭০ জন।
ওয়ান-ইলেভেনের পর ক্ষমতায় এসে টাঙ্গাইলে বিএনপি নিধনের ছক কষতে শুরু করে আওয়ামী লীগ। বিএনপি-ছাত্রদল ও যুবদলসহ ভিন্নমতের অন্তত ৫০ জনের একটি তালিকা করে কিলিং মিশনের কাজ শুরু হয়। ২০১৩ সালে টাঙ্গাইলে একটি চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার এক আসামি গ্রেপ্তার হলে রিমান্ডে এ তথ্য ফাঁস করে দেয় গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে।
জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম পিন্টুকে ফাঁসানো হয় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায়। বিষয়টি বিএনপি নিধন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দেখছেন বিএনপি নেতারা। চাঞ্চল্যকর এ মামলায় পিন্টুর দুই ভাই তাজউদ্দিন ও রাতুলকেও আসামি করা হয়। আদালতে পিন্টু ও তাজউদ্দিনের ফাঁসির আদেশ আর রাতুলের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়।
আব্দুস সালাম পিন্টু এ মামলায় দীর্ঘ ১৭ বছর কারাবরণ করেন। তার দুই ভাই ছিলেন পলাতক। পিন্টুর আরেক ভাই জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কৃষিবিদ শামছুল আলম তোফা একাধিক মামলার আসামি হয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। আরেক ভাই বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর ওপর চলে নির্যাতন। ৩৫০ মামলায় তাকে আসামি করা হয়। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদের পতনের পর ২৪ ডিসেম্বর আব্দুস সালাম পিন্টু কারামুক্ত হন।
বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ১২৯ মামলা
ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের সময়ে মিথ্যা ও গায়েবি মামলায় ভারাক্রান্ত ছিলেন বিএনপি ও দলটির অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। জেলা শহর থেকে ওয়ার্ড পর্যায়ে বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল, শ্রমিক দলসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দেওয়া হয় গায়েবি মামলা। মৃত অনেক ব্যক্তিকে জীবিত দেখিয়ে মামলা করে আওয়ামী লীগ ক্যাডাররা। বাড়িঘর ছেড়ে বছরের পর বছর পলাতক জীবনযাপন করেন হাজার হাজার নেতাকর্মী। গুমের শিকার হয়ে মাসের পর মাস আয়নাঘরে কাটে অনেকের জীবন। মামলায় জর্জরিত ও কিলিং মিশন থেকে বাঁচতে দেশ ছাড়েন অনেকে।
টাঙ্গাইলে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের প্রস্তুত করা তালিকা অনুযায়ী, জেলায় ১২৯টি মামলায় বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের প্রায় সাত হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। এ তালিকার বাইরেও অনেক মামলা রয়েছে, যা ব্যক্তিগতভাবে পরিচালনা করা হয়। বিস্ফোরক আইন, মাদকদ্রব্য আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইন, সন্ত্রাসবিরোধী আইন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, অস্ত্র আইন ও বন মামলাসহ কোনো মামলাই বাদ যায়নি।
বিএনপি নেতাকর্মীদের হত্যা, দমন-পীড়ন
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, টাঙ্গাইলে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন বিএনপির অন্তত অর্ধডজন নেতাকর্মী। এর মধ্যে ২০১৩ সালের মে মাসে সদরের পৌর এলাকা সাবালিয়ায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয় জেলা শ্রমিক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আজমকে। শহর ছাত্রলীগের নেতা ও সন্ত্রাসী ডন সোহেলের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৫ জন আজমের বুকে কয়েক রাউন্ড গুলি করে। পরে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে।
একই বছরের ২০ ডিসেম্বর সদর উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি ও বারবার নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়। এর আগে জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুর রউফ ও রুমী চৌধুরীকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। আওয়ামী লীগের শাসনামলে মামলা দুটি রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রত্যাহার করা হয়।
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী লিয়াকত জানান, আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের দুঃশাসনে অনেককেই পলাতক জীবনযাপন করতে হয়েছে। মাসের পর থাকতে হয়েছে আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে। খোলা আকাশের নিচে কত রাত কেটেছে, তার হিসাব নেই। ২০১৩ সালের ১৮ মার্চ গোপালপুর সদরে কাজী লিয়াকত ও তার বড় ভাইয়ের বাড়িতে একসঙ্গে আগুন ধরিয়ে দেয় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। নগদ অর্থ, স্বর্ণালংকার ও আসবাবপত্র লুটে নেয় ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগ ক্যাডাররা।
২০২৪ সালের নির্বাচনের কদিন আগে যুবদলকর্মী পলাশ ও বিএনপির সভাপতি খালিদ হাসানকে কুপিয়ে আহত করা হয়। ২০১৩ সালে ছাত্রদল নেতা মোহাম্মদ আলী খান মঞ্জুর কসমেটিকস দোকানের মালামাল লুট করে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। ২০১৮ সালে ভুয়া নির্বাচনে তানভীর হাসান ছোট মনি সংসদ সদস্য (এমপি) নির্বাচিত হওয়ার পর ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে আওয়ামী লীগ। চাঁদাবাজি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও জমি দখল, যত্রতত্র ড্রেজিং মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন এবং মাদকে ছেয়ে যায় পুরো গোপালপুর উপজেলা।
গত ১৭ বছর শান্ত-সবুজ পাহাড়ি এলাকা ও আনারসের রাজধানী মধুপুর সন্ত্রাসের অভয়ারণ্যে পরিণত নেয়। ড. আব্দুর রাজ্জাক মধুপুর-ধনবাড়ি আসনে জালিয়াতির ভোটে এমপি হয়ে কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। তার আশীর্বাদপুষ্ট মধুপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সরোয়ার আলম আবু খাঁ ও পৌর মেয়র সিদ্দিক হোসেন খান ভয়ংকর গডফাদারের ভূমিকায় ছিলেন সে সময়। মামলা-হামলা আর নির্যাতনের শিকার হয়ে মধুপুর ছেড়ে যেতে বাধ্য হন বিএনপির অনেক নেতাকর্মী।
সাবেক মন্ত্রী রাজ্জাকের নির্বাচনি এলাকা ধনবাড়ীতে তার দুই মামাতো ভাই পৌর মেয়র মঞ্জুরুল ইসলাম তপন ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হারুনুর রশীদ হীরা ছিলেন এলাকার মূর্তিমান আতঙ্ক। বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন, হামলা-মামলা, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দখল ও চাঁদাবাজিসহ সব অপকর্ম নিয়ন্ত্রণ করতেন তারা।
মধুপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন জানান, আব্দুর রাজ্জাক মন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই শান্ত মধুপুরে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়। সভা-সমাবেশে জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে অরুচিকর বক্তব্য আর মিথ্যা তথ্য ছড়ানো ছিল তার কাজ।
জামায়াতে ইসলামীর ওপর নিপীড়ন
টাঙ্গাইলে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে ১৫২টি মামলা দায়ের করা হয়। এতে আসামি করা হয় প্রায় দুই হাজার ৫০০ নেতাকর্মীকে। জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির আহসান হাবিব মাসুদকে ১২ মামলা মাথায় নিয়ে প্রায় ১২ বছর পলাতক জীবনযাপন করতে হয়। ২০১৫ সালে গ্রেপ্তার হয়ে দুই মাস কারাবরণ করেন।
জামায়াতের তথ্যমতে, শেখ হাসিনার দুঃশাসনের সাড়ে ১৫ বছরে এক হাজার ২০০ নেতাকর্মী পুলিশ ও আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের নির্যাতনের শিকার হন। অনেকেই আজ পঙ্গুত্ব বরণ করছেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ৫ আগস্ট জেলা ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদকসহ সাত নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হন। তাদের ১২৭টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দখল করে নেয় আওয়ামী লীগ ক্যাডাররা। ২০১২ সালে আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে সাজানো মামলায় ফাঁসির আদেশের প্রতিবাদের পরপরই নির্যাতনের মাত্রা চরম আকার ধারণ করে। এ সময় শহরের ভিক্টোরিয়া রোডে জামায়াত নেতাকর্মীদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান কসমস কম্পিউটার সেন্টারে আগুন ধরিয়ে দেয় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। এ সময় প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়।
একই বছর করটিয়া জমিদার বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত জামায়াত নেতাকর্মীদের লাইট হাউস নামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আগুনে পুড়িয়ে দেয় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। শহরের ময়মনসিংহ রোডে অবস্থিত জেলা আমিরের পিস হসপিটাল নামের সেবামূলক প্রতিষ্ঠান উৎখাত করা হয়। ২০২৪ সালের মে মাসে ভুয়াপুর উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির আব্দুল্লাহ আল মামুনের কাপড়ের দোকান দখল করে যুবলীগ নেতাকর্মীরা।
এভাবে জেলা থেকে তৃণমূল পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের প্রায় ১২৭টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দখল করে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। জেলা জামায়াতের আমির ও ছাত্রশিবিরের নেতা মো. হাবিবুল্লাহ এবং আল আমিনকে কিলিং মিশনের চূড়ান্ত তালিকায় রাখা হয়।
২০১৩ সালে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মুক্তি দাবিতে ঢাকায় সমাবেশে যাওয়ার সময় জামায়াতের অন্তত ৪০ নেতাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে তাদের অমানবিক নির্যাতন ও সাত দিন গুম করে রাখা হয়। পরে আদালতে পাঠানো হলেও নির্যাতনের কারণে এজলাসে দাঁড়ানোর মতো অবস্থা ছিল না তাদের। ছাত্রশিবির শহর শাখার সাবেক সভাপতি সারোয়ারকে ঢাকায় রিমান্ডে নিয়ে হাত-পায়ের ২০টি আঙুলের নখ প্লায়ার্স দিয়ে টেনে তুলে ফেলে। এক পর্যায়ে সরোয়ার আলমের ডান পায়ের রগ ছিঁড়ে যায়।
জুলাই বিপ্লবে জেলার ৯ ছাত্র-জনতা শহীদ, আহত ২৭০
জুলাই বিপ্লবে পুলিশের গুলিতে টাঙ্গাইলের ৯ ছাত্র-জনতা শহীদ হয়েছেন। এর মধ্যে শহরের সাবালিয়া এলাকার স্কুলছাত্র মারুফ মিয়া ৫ আগস্ট আনন্দ মিছিলে গিয়ে সদর থানার কাছে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। গোপালপুরের হেমনগর ইউনিয়নের নলিন উত্তরপাড়া গ্রামের কলেজছাত্র মো. ইমন ঢাকা-টাঙ্গাইল মহসড়কে গোড়াই পুলিশ ফাঁড়ির সামনে গুলিবিদ্ধ হন। পরে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। বাকি সাতজন আহনাফ আবির, ছাদিক, ইকরামুল হক, ফিরোজ তালুকদার, লাল মিয়া, মো. বিপ্লব ও ইসমাইল মোল্লা ঢাকা, সাভার এবং গাজীপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত হন। বিপ্লবে জেলায় আহত হয়েছেন ২৭০ জন, তাদের বেশিরভাগই বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী।
গণহারে আ.লীগ নেতাদের আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স
আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরে টাঙ্গাইলে তাদের দলীয় নেতাকর্মীদের গণহারে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়। এমপি থেকে শুরু করে পাতিনেতা ও হত্যা মামলার আসামিরাও বাদ পড়েনি অস্ত্রের লাইসেন্স পাওয়া থেকে। দলটির ২৩ নেতা আগ্নেয়াস্ত্রের ২৭টি লাইসেন্স পেয়েছিলেন। এদের মধ্যে চারজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা ও অন্যদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার গত ১৭ বছরে যেসব আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে, তা স্থগিত করে অস্ত্র জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু টাঙ্গাইল-২ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি তানভীর হাসান ছোট মনি ও তার ভাই টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি গোলাম কিবরিয়া বড় মনি চারটি অস্ত্র এখনো জমা দেননি।
রাজনৈতিক দলের ভুক্তভোগী নেতাদের বক্তব্য
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের গত ১৭ বছর বিএনপি-জামায়াতসহ সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতনের বিষয়ে টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ঘনিষ্ঠ সহচর মুক্তিযোদ্ধা হামিদুল হক মোহন বলেন, আওয়ামী মুসলিম লীগ পরে আওয়ামী লীগ হয়ে উঠেছিল ক্ষমতালোভী উচ্চবিত্ত রাজনৈতিক দর্শনের একটি দল। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় যাওয়ার পর বিরোধী মতের প্রতি তাদের অনেকটা সহনশীলতা দেখেছি। কিন্তু ওয়ান-ইলেভেন সরকারের পর ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনা ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে ফ্যাসিজমের পথ বেছে নেন। যার পরিণতি হলো ৫ আগস্ট।
হামিদুল হক মোহন আরো বলেন, আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক শামছুল হক দুজনই ছিলেন টাঙ্গাইলের। অথচ পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ গোপালগঞ্জের সম্পত্তি হয়ে যায়। এটা টাঙ্গাইলবাসীর জন্য দুঃখজনক।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরে টাঙ্গাইলে আমরা অভিনব সব নির্যাতনের চিত্র দেখেছি। পুলিশের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীরা একসঙ্গে গ্রেপ্তার অভিযান পরিচালনা করত। বিএনপি নেতাকর্মীরা ছিলেন দেশের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক।
টাঙ্গাইল আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মো. শফিকুল ইসলাম রিপন বলেন, শেখ হাসিনার সময়ে আমরা মামলার যে ধরন দেখেছি, তা স্বৈরাচার এরশাদের শাসনকেও হার মানিয়েছে। জেলা শহর থেকে তৃণমূল পর্যায়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা মামলার জালে পড়ে যে হয়রানির শিকার হয়েছেন, তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। তিনি জানান, ৫ আগস্টের পর টাঙ্গাইল জেলার ৭৩টি মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে ১২টার দিকে তিনটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় করে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার সময় স্থানীয় বাসিন্দারা ধাওয়া করে। এসময় চালসহ একটি অটোরিকশা জব্দ করলেও বাকি দুটি রিকশা দ্রুত গতিতে পালিয়ে যায়।
৭ মিনিট আগেবিএনপি নেতা সামছুল ইসলাম জেলার সদর উপজেলার সাধারণ সম্পাদক। ছাড়া পাওয়া দুই আসামি হলেন, সদর উপজেলার লস্করপুর ইউনিয়ন যুবলীগ সহ-সভাপতি মাহবুবুর রহমান ওরফে রানা (৪০) ও একই কমিটির সদস্য মামুন আহমেদ (৩৮)।
১৮ মিনিট আগেমৌলভীবাজারে শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়কের জানকিছড়া এলাকায় হাঁটতে হাঁটতে বাড়ি ফেরার পথে অজ্ঞাত গাড়িচাপায় এক কমিউনিটি পেট্রোলিং গ্রুপ (সিপিজি) সদস্য নিহত হয়েছেন। বুধবার ভোরে কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
২ ঘণ্টা আগেকুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগে প্রবাসীর স্ত্রীকে লাঠিপেটার অভিযোগ পাওয়া গেছে ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে। ইউপি সদস্য বজলুর রহমান শ্রীপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সভাপতি । এ ঘটনার ২ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
২ ঘণ্টা আগে