মহান বিজয় দিবসের রাতে শরীয়তপুর সদর উপজেলার আংগারিয়া ইউনিয়নের নিয়ামতপুর গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান খানের কবরের ওপর আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে কবরের ওপরের অংশ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ভোরের আলো ফুটতেই ছাইভস্মে ঢাকা কবর দেখে পরিবার ও এলাকাবাসী হতবাক।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল (সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর) গভীর রাতে সদর উপজেলার আংগারিয়া ইউনিয়নের নিয়ামতপুর গ্রামে এই ঘটনা ঘটে।
পরিবারের সদস্যরা জানান, গভীর রাতে কে বা কারা পরিকল্পিতভাবে কবরের ওপর আগুন ধরিয়ে দেয়। সকালে কবর জিয়ারত করতে এসে এমন দৃশ্য দেখে তারা কান্নায় ভেঙে পড়েন। বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধা সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে জানানো হয়।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান খান ২০১০ সালে বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী ও চার সন্তান রেখে যান। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে কবরটি অক্ষত ছিল। প্রতি বছর স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে পরিবারের সদস্যসহ নানা শ্রেণি–পেশার মানুষ তার কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতেন। কিন্তু এবার বিজয়ের রাতে সেই কবরেই আগুন দেওয়ার ঘটনাকে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চরম অবমাননা বলে দাবি পরিবারের।
মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী মাহফুজা বেগম বলেন, আমার স্বামী বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন—এটাই আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় গর্ব। তিনি যুদ্ধ করে এই দেশ স্বাধীন করেছেন। সেই গর্ব নিয়েই আমি স্বামীর কবর আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছি। বিজয়ের এই রাতে যারা কবর পুড়িয়েছে, তারা শুধু একজন মুক্তিযোদ্ধাকেই নয়, পুরো মুক্তিযুদ্ধকেই অসম্মান করেছে।
মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নানের মেয়ে আফরোজা বলেন, বিজয়ের সকালে ঘুম থেকে উঠে বাবার কবরে এসে ছাই দেখে বুকটা ফেটে যাচ্ছিল। আজকের দিনে বাবার মুক্তিযুদ্ধের গৌরব স্মরণ করে আনন্দ করার কথা ছিল। কিন্তু দুর্বৃত্তরা সেই আনন্দ কেড়ে নিল। কে বা কারা এমন ঘৃণ্য কাজ করল—এটাই এখন জাতির প্রশ্ন।
সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের আহ্বায়ক আব্দুল আজিজ সিকদার বলেন, বিজয় দিবসের মতো দিনে এমন ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা যুদ্ধ করেছি শুধু স্বাধীনতার জন্য নয়, মর্যাদার জন্যও। জীবিত কিংবা মৃত—মুক্তিযোদ্ধারা সবসময়ই দেশের সম্মানিত নাগরিক। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইলোরা ইয়াসমিন বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। মুক্তিযোদ্ধার পরিবার থেকে ফোন পেয়ে আমরা অবগত হয়েছি। ঘটনাটি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বিজয়ের দিনে ঘটে যাওয়া এই ঘটনা শুধু একটি কবর পোড়ানোর ঘটনা নয়—এটি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনার ওপর সরাসরি আঘাত বলে মনে করছেন সচেতন মহল। এখন সবার একটাই দাবি—দুর্বৃত্তদের দ্রুত শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের মর্যাদা রক্ষা করা হোক।

