কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের যুবক শান্তকে ৫ ডিসেম্বর বিএসএফের গুলিতে সীমান্তে নয় ভারতে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজিবি- ৪৭ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রাশেদ কামাল রনি। গতকাল বুধবার বিকেলে বর্ডার গার্ড পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে ৪৭ বিজিবি কর্তৃক শীত বস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
নিহত শান্ত ‘বিএসএফকে আক্রমণ করার চেষ্টা করেছিল জানিয়ে তিনি আরো বলেন, যাকে হত্যা করা হয়েছে বা যাকে বিএসএফ কর্তৃক গুলি করা হয়েছে শান্ত নামের ছেলেটা আসলে ভারতের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছিল। অবৈধ অনুপ্রবেশ এবং তারই পরিপ্রেক্ষিতে তাদের বক্তব্য অনুযায়ী শান্ত চোরাকারবারি ছিল। সে সেখানে যেয়ে বিএসএফকে আক্রমণ করার চেষ্টা করেছিল। তার পরিপ্রেক্ষিতে আত্মরক্ষার্থে তারা গুলি করেছিল।
বিজিবির ৪৭ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক বলেন, আমাদের কুষ্টিয়া মেহেরপুর এই সীমান্তে সীমান্ত হত্যার বিষয়ে আপনারা যেভাবে সীমান্ত হত্যার কথা বলেন বিষয়টা আমি দ্বিমত পোষণ করছি। এখানে কোনো উদ্বেগের কারণ নেই। আমাদের সীমান্ত এলাকায় মানুষদের যথেষ্ট পরিমাণে মোটিভেট করার চেষ্টা করছি। যাতে এই ধরনের কার্যক্রমে তারা লিপ্ত না হয়। এই ধরনের কার্যক্রম কেউ যদি করার চেষ্টা করে থাকে, তার সম্পর্কে যাতে আমরা অগ্রিম ইনফরমেশন পাই আগে থেকেই আমরা তাকে থামিয়ে দিতে পারবো। সীমান্ত সুরক্ষার পাশাপাশি বিজিবি সব সময় সামাজিক কর্মকাণ্ডে ভূমিকা রেখে চলেছে।
তিনি আরো বলেন, বিজিবির প্রধান কাজ হচ্ছে সীমান্তকে রক্ষা করা। চোরাচালান সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা। এর পাশাপাশি সবসময় দুস্থ মানুষদের পাশে থাকার চেষ্টা করি। সীমান্ত পাহারা দেয়ার জন্য আমাদের ট্রহল কার্যক্রম আশেপাশের রাস্তায় বৃদ্ধি করেছে। এছাড়া আমরা বিভিন্ন রকম পয়েন্টে চেকপোস্ট বসে আছি। যে গাড়িগুলোকে আমাদের সন্দেহ হয়, সেই গাড়িগুলোকে আমরা চেক করি। আমরা মোটামুটি নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি কোন অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশের প্রবেশ করতে পারবে না, কোনো দুষ্কৃতিকারী আমাদের বাংলাদেশ ত্যাগ করে বের হতে পারবে না। আমরা তাদেরকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হব। আমাদের কাছে যে ইনফরমেশন আছে, এই সীমান্ত দিয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো দুষ্কৃতিকারী পাশের দেশে পালিয়ে যেতে পারেনি। আমরা সেজন্য সতর্ক অবস্থায় আছি। এখনো পর্যন্ত আমাদের কোনো ইনফরমেশন নেই।
কাঁটাতারের বেড়ার এপার বা ওপারে কত মিটার বা কিলোমিটার এলাকাকে সীমান্ত বলা হবে। আর বাংলাদেশিরা সীমান্ত পার হলে সেটা বিজিবির ব্যর্থতা বলা যাবে কি? এই প্রশ্নের জবাবে বিজিবির ৪৭ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রাশেদ কামাল রনি আমার দেশকে বলেন, শূন্য রেখা হতে ১৫০ গজ এপার বা ওপারে গেলে সীমান্ত শুরু। কিন্তু ভারত শূন্য রেখা হতে ১৫০ গজ এগিয়ে কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছে, এই বেড়ার এক ইঞ্চি ওপারে গেলেই ভারতীয় সীমান্ত। আর বাংলাদেশিদের সীমান্ত পারাপারের ক্ষেত্রে বিজিবি ৯৯ শতাংশ প্রতিরোধ করছে।
এ সময় কুষ্টিয়া ব্যাটালিয়নের সহকারী পরিচালক জাকিরুল ইসলাম, বিজিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, আমন্ত্রিত সাংবাদিকসহ উপকারভোগীরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ৫ ডিসেম্বর রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে কুষ্টিয়া ব্যাটালিয়ন (৪৭ বিজিবি)-এর আওতাধীন আশ্রায়ন বিওপি সংলগ্ন সীমান্ত পিলার ১৫৪/৩-এস-এর পাশদিয়ে ১০ থেকে ১২ জন বাংলাদেশি ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করে। এ সময় বিএসএফ সদস্যদের গুলিতে বিদ্ধ হয়ে শান্ত নামে একজন গুরুতর আহত হয়। এবং তার সহযোগীরা পালিয়ে যায়।
বিএসএফের ভাষ্যমতে, শান্তকে চিকিৎসার জন্য ভারতের করিমপুর রুরাল হাসপাতালে ভর্তি করে তারা। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই দিন বিকেলে তার মৃত্যু হয়। পরে শান্ত নিহত হওয়ার ঘটনা তার পরিবার বিজিবিকে জানালে শান্তর লাশ ফেরত চেয়ে বিএসএফকে পত্র দেয় বিজিবি।
শান্ত নিহতের ৮ দিন পর সীমান্ত পিলার ১৫২/৭-এস সংলগ্ন ভারত ভূখন্ডে কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ের পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে লাশ ফেরত দেয় বিএসএফ। নিহত শান্ত (২৪) দৌলতপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের সীমান্ত সংলগ্ন মোহাম্মদপুর ডাংয়েরপাড়া গ্রামের শিপন আলীর ছেলে।
আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

