আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

একসময়ের উপদ্রব বিলের ঝাই এখন মাছের প্রিয় খাবার

শাহরিয়ার মিল্টন, শেরপুর

একসময়ের উপদ্রব বিলের ঝাই এখন মাছের প্রিয় খাবার

শেরপুরের নকলা উপজেলার পেকুয়া বিলের ঝাই স্থানীয় শতাধিক পরিবারের জীবিকার উৎস হয়ে উঠেছে। ঝাই হলো শ্যাওলা জাতীয় ভাসমান জলজ উদ্ভিদ। বিল বা খালের পানির ওপর চাদরের মতো ভেসে থাকে।

আঞ্চলিকভাবে এটি নেওড়া ঘাস, পানি তরুলতা, পাইনসে ঘাস ও জলঢাকনা নামেও পরিচিত। একসময় পেকুয়া বিল ঢেকে রাখা এই ঝাইকে অভিশাপ মনে করা হতো। কারণ, এটি মাছের চলাচল ও প্রজননে বাধা দিত, এমনকি জাল ফেলে মাছ ধরাও অসম্ভব হয়ে উঠেছিল। কিন্তু বর্তমানে এই ঝাই বিলপাড়ের দরিদ্র পরিবারগুলোর আয়ের প্রধান উৎস।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয় মাছচাষি ও ঝাই ব্যবসায়ীরা জানান, ২১৯ একর আয়তনের পেকুয়া বিল তার প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের জন্য পরিচিত। মাছচাষিরা পেকুয়া বিলের ঝাই কিনে খাদ্য হিসেবে মাছের খামারে ব্যবহার করছেন। রুই, কাতলা, মৃগেল, শিং, মাগুর ও তেলাপিয়া মাছের খাদ্য হিসেবে ঝাই খুব জনপ্রিয়। চাষ করা মাছের সাশ্রয়ী খাবার হিসেবে ঝাই স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

নকলা উপজেলার গণপদ্দি ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুর রফিক। এক সময় তিনি পেকুয়া বিলে মাছ ধরতেন। সেই আয়েই চলত তার সংসার। তবে বিলজুড়ে কচুরিপানা ও ঝাই ছড়ানো থাকায় মাছ ধরার জাল আটকে পড়ত। স্থানীয় মাছচাষিরা বিল থেকে ঝাই সংগ্রহ করে খাদ্য হিসেবে মাছের খামারে ব্যবহার শুরু করেন। তা দেখে আব্দুর রফিকও ভ্যানে করে এসব ঝাই বিভিন্ন মাছের খামারে বিক্রি শুরু করেন। এখন ঝাই বিক্রির টাকা দিয়েই চলছে তার সংসার। শুধু আব্দুর রফিক নন, উপজেলার পেকুয়া বিলপাড়ের গণপদ্দি, জালালপুর ও গজারিয়া এই তিন গ্রামের শতাধিক পরিবার এখন ঝাই বিক্রি করে। এই আয়েই চলে তাদের সংসার।

ঝাই ব্যবসায়ী মোতালেব, ছামিদুল, রহমান আলী জানান, আমরা বিল থেকে ঝাই সংগ্রহ করি। এক ভ্যান ঝাইয়ের ওজন ৮ থেকে ১০ মণ হয়। আকারভেদে প্রতিভ্যান ঝাই ৫০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়। প্রতিদিন সকাল থেকেই আমরা নৌকা নিয়ে বিলে গিয়ে ঝাই সংগ্রহ করি। নৌকায় ভরে ডাঙায় নিয়ে পানি ঝরিয়ে ভ্যানে উঠানো হয়। এরপর মাছচাষিদের খামারে পৌঁছে দিয়ে আসি। গত ছয়-সাত বছর ধরে এই ঝাই বিক্রি করছি।

স্থানীয় মাছচাষি মনির হোসেন বলেন, পেকুয়া বিলের ঝাই আমার প্রজেক্টের মাছের প্রিয় খাবার। দুই ভ্যান ঝাই দিয়ে চারটি পুকুরের প্রায় ১০ দিনের খাবার হয়ে যায়। এজন্য এখন ফিড কম লাগে। তাছাড়া প্রাকৃতিক খাবারে মাছের রোগ সংক্রমণের ঝুঁকিও কম হয়।

নকলা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অনিক রহমান বলেন, মাছচাষিরা বিভিন্ন কোম্পানির প্রস্তুতকৃত ফিড মাছের খাবার হিসেবে প্রজেক্টে ব্যবহার করেন। এতে তাদের প্রচুর খরচ হয়। কিন্তু পেকুয়া বিল থেকে সংগ্রহ করা ঝাই স্থানীয়ভাবে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এর ফলে মাছচাষিদের ফিডের পরিমাণ অনেকাংশে কম ব্যবহার করতে হচ্ছে। অন্যদিকে পেকুয়া বিল সংলগ্ন জেলে ও এলাকাবাসীর বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন