পাবনার বেড়া সাঁথিয়া সুজানগর উপজেলায় মানুষ কেনাবেচার কাশিনাথপুর হাটে শ্রমজীবী মানুষের ভিড় বাড়ছে। একই সাথে বেড়েছে শ্রমজীবী মানুষের কদর। তারা এখন আর কম টাকায় বিক্রি হচ্ছেন না। তাই শ্রমের দাম বাড়ায় শ্রমিকদের মুখে ফুটে উঠেছে সুখের হাসি। জানা গেছে, সপ্তাহের দুদিন রবি ও বৃহস্পতিবার এখানে মানুষ বিক্রির হাট বসে। মানুষ কিনতে আসেন এ তিন উপজেলার কৃষক। তারা চাহিদামতো দিনচুক্তিতে কিনে নেন কৃষিশ্রমিক। চলতি ররি শুরুতেই শ্রমের সঠিক মূল্য পাওয়ায় শ্রমিকদের মুখে ফুটেছে হাসির ঝিলিক।
সরেজমিন কাশিনাথপুর হাটে গিয়ে দেখা যায় ক্রেতা-বিক্রেতায় মুখর হয়ে উঠছে শ্রমজীবী মানুষের হাট। আমন ধান কাটা শেষ করে মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষ শুরু হওয়ায় কৃষকেরা চাহিদামতো শ্রমিক কিনছেন। সেই সঙ্গে বোরো ধান চাষ শুরু হওয়ায় চাহিদা বেড়ে গেছে শ্রমিকদের। কৃষকদের অভিযোগ সার, বীজ ও অন্যান্য কৃষি উপকরণের সঙ্গে বেড়েছে শ্রমিকের দাম। অনেক কৃষক বলেছেন, এবার অধিকাংশ কৃষক পেঁয়াজ, রসুন চাষে লোকসান গুনে পেঁয়াজ চাষে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছে। শ্রমিকের মজুরি বাড়ায় প্রভাব পড়বে পেঁয়াজ ও ধান উৎপাদনে। সাঁথিয়া উপজেলার পূর্বভবানীপুর গ্রামের কৃষক আব্দুর রাজ্জাক মেম্বার বলেন, তিনি হাটে এসেছেন চারজন শ্রমিক কিনতে। কয়েকদিন আগে এ বাজার থেকে ৫০০ টাকা মজুরিতে শ্রমিক নিয়ে আমন ধান কেটেছেন। মাত্র এক-দেড় সপ্তাহের ব্যবধানে আবার হাটে এসেছেন মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষের শ্রমিক কিনতে। তবে শীতের কারণে শ্রমিকরা গত সপ্তাহের চেয়ে ২০০ টাকা মজুরি বাড়িয়ে দিয়ে ৭০০-৭৫০ টাকা দাম হাকাচ্ছেন।
হাটে কথা হয় সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার করশালিখা থেকে আসা আমোদ আলী, রমজান আলী, সোলেমান প্রামাণিকসহ পাঁচজন শ্রমিকের সঙ্গে। তারা জানান, বাজারে চাল, ডাল, তেল, ময়দাসহ প্রতিটি জিনিসের দাম বেশি। সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার শৈলজানাচর থেকে হাটে শ্রম বিক্রি করতে এসেছেন ষাটোর্ধ্ব আবু বক্কার। তিনি বলেন, ‘হাটে কামলা কিনতে আসা গৃহস্থরা বয়স্কদের নিব্যার চায় না। যদিও বা কেউ কেউ নিব্যার চায়, জোয়ানদের চেয়ে কম দাম কয়। অথচ আমরা ওদের সঙ্গে সমানতালে কাম করি।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাবনা সিরাজগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলা নানা বয়সের কৃষি শ্রমিকরা আসেন এ হাটে শ্রমবিক্রি করতে। চাহিদার সঙ্গে শ্রমিকদের উপস্থিত নির্ভর করে নির্ধারিত হয় তাদের মজুরি। গত এক সপ্তাহ ধরে এ হাটে শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানা গেছে। তারা জানিয়েছেন, এক সপ্তাহের ব্যবধানে জনপ্রতি শ্রমের মূল্য বেড়েছে এক থেকে দেড়শ টাকা। গত দুই সপ্তাহ আগে যে শ্রমিক ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে সেই শ্রমিক ৭০০ টাকায় বিক্রি হতে পারায় তাদের মুখে বিরাজ করছে সুখের হাসি।
বেড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুসরাত কবির বলেন, এ বছর পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল থাকায় বেশিরভাগ কৃষক মজুত পেঁয়াজে সুবিধা করতে পারেনি। তবে মৌসুমে একেবারেই শেষ দিকে বাজার বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমান বাজারে মুড়িকাটা পেঁয়াজের ভালো দাম পাচ্ছে। সে কারণে কৃষকরা পেঁয়াজ চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে। তবে বর্তমান বাজারে যে মূল্যতে শ্রম বিক্রি হচ্ছে এটাকে অতিরিক্ত বলা যাবে না।

