ওসিসহ আহত ২৫

পাটগ্রামের ঘটনায় আশঙ্কাজনক ২ পুলিশ সদস্যকে রমেক হাসপাতালে ভর্তি

হাসান উল আজিজ, লালমনরিহাট
প্রকাশ : ০৩ জুলাই ২০২৫, ২০: ১৬
আপডেট : ০৩ জুলাই ২০২৫, ২০: ৫৯
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম থানায় হামলা

লালমনিরহাটের পাটগ্রামে বিএনপি কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ, হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় ওসিসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে দুই পুলিশ সদস্যের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, বুধবার লালমনিরহাট-বুড়িমারী আঞ্চলিক মহাসড়কের পাটগ্রাম বাজার এলাকায় পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উত্তম কুমার দাশ চাঁদাবাজির অভিযোগে বেলাল ও সোহেল নামে দুইজনকে আটক করে এক মাসের কারাদণ্ড দেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে প্রথমে পুলিশের সঙ্গে কথা বলতে থানায় যান বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও উপজেলা বিএনপির সমন্বয়ক এবং আগামী নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ব্যারিস্টার হাসান রাজিব প্রধান,বাদশা জাহাঙ্গীর, মোস্তাজির চপলসহ কয়েকজন।

এ সময় বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের কথা কাটাকাটি হয়। এক পযায়ে থানার বাইরে অবস্থানরত উপজেলা বিএনপির ২৫০-৩০০ নেতাকর্মী একযোগে থানা চত্বরে ঢুকে পড়ে এবং ভাংচুর শুরু করে। তারা থানার চেয়ার, টেবিল, কম্পিউটার ও ল্যাপটপ ভাঙচুর করে। গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র তছনছ করে, ইট-পাটকেল ছুড়ে থানার জানালার কাঁচ ও দরজা ভেঙে ফেলে। পুলিশ তাদের বাধা দিলে উভয়পক্ষে সংঘর্ষ বাঁধে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে।

পাটগ্রাম থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, ‘গুরুতর আহত দুই পুলিশ সদস্যকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আমিসহ ছয়জন পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘দুর্বৃত্তরা পুলিশের কাছ থেকে জোরপূর্বক হাজতখানার তালার চাবি নিয়ে সাজাপ্রাপ্ত দুই আসামি বেলাল হোসেন ও সোহেল রানা চপলকে ছিনিয়ে নেয়।’

ওসি আরও জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করলেও উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়। পরে লালমনিরহাট, হাতিবান্ধা ও কালীগঞ্জ থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বিজিবি সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

হামলাকারীদের সম্পর্কে ওসি বলেন, ‘হামলায় জড়িত অনেককে চিনতে পেরেছি। তারা স্থানীয় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত।’

সাজাপ্রাপ্ত বেলাল ও সোহেল স্থানীয় শ্রমিক দলের নেতা উল্লেখ করে পুলিশ জানিয়েছে, তাদের মুক্ত করতেই ওয়ালিউর রহমান সোহেলের নেতৃত্বে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা এই সংঘবদ্ধ হামলা চালিয়েছে।

তবে পাটগ্রাম উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ওয়ালিউর রহমান সোহেল এই দাবি অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি থানায় ছিলাম না। আমাদের কোনো নেতাকর্মীও এই হামলায় জড়িত নন।’

সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে বেলাল হোসেন পাটগ্রাম উপজেলার মমিনপুর গ্রামের লিয়াকত আলীর ছেলে এবং সোহেল রানা চপল মির্জার কোর্ট এলাকার সামসুল হকের ছেলে বলে জানা গেছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আমিনুল ইসলাম,অতিরিক্ত ডিআইজি শরিফ উদ্দিন, লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার, পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলামসহ প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

এ সময় রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আমিনুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, মহাসড়কে দুষ্কৃতকারীরা চাঁদা আদায় করেছে- এমন সংবাদ পেয়ে ইউএনও ও ওসি গিয়ে বেলাল ও সোহেল নামে দুইজনকে আটক করে এক মাসের জেল দেন। রাত বেশি হওয়ার কারণে আসামিদের থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। যখন তাদেরকে থানা হাজতে নিয়ে আসা হয়, তখন উচ্ছৃংখল জনতা তাদেরকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় এবং থানার ভিতরে এসে হামলা চালায়। এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে লালমনিরহাট পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় আমাদের ৮ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে দুইজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক; তাদেরকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাপসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এই ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে, দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও উপজেলা বিএনপির সমন্বয়ক এবং বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ব্যারিস্টার হাসান রাজিব প্রধান বলেন, ইজারাদার ও বিএনপি নেতাকমীদের সঙ্গে বাক-বিতণ্ডার পর এ ঘটনা ঘটে। এর বেশি কিছু বলতে রাজি হননি তিনি।

উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি এবং সাবেক উপমন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, আমি ঢাকায় আছি, আমি শুনেছি শুধু পুলিশ নয়, বিএনপির নেতাকমীরাও আহত হয়েছে। এর বেশি কিছু জানি না।

এ ঘটনা প্রসঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে রাত ১টার দিকে লিখেছেন, ‘বিএনপি নেতাকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে পাটগ্রামে পরিবহন থেকে চাঁদা আদায় করে আসছে। চাঁদাবাজির সময় হাতেনাতে ধরা পড়লে তাদের ছিনিয়ে আনতেই পরিকল্পিতভাবে থানা ঘেরাও, হামলা ও ভাঙচুর করা হয়। হামলাকারীরা পুলিশ সদস্যদেরও মারধর করে।’

গভীর রাতে বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে ওএমএসের চাল বিক্রির অভিযোগ

শপথ নিলেন পিএসসির নতুন সদস্য আফতাব হোসেন

মোটরবাইক নিষেধাজ্ঞায় বিলিয়ন ডলারের বাজার হারানোর শঙ্কায় ভিয়েতনাম

বিএনপি নেতার চাপে জুলাই হত্যা মামলার দুই আসামিকে ছেড়ে দিলেন ওসি

সাবেক আইজিপি মামুন অন্যের ঘাড়ে বন্দুক রেখে বাঁচার চেষ্টা করছেন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত