রেলের জমি দখলে বাধা দেয়ায় কর্তৃপক্ষকে যুবলীগ সভাপতির হুমকি

রংপুর অফিস
প্রকাশ : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৮: ৪১

দিন দুপুরে প্রকাশ্যে যুবলীগের সভাপতি রেলের জমি দখল করায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছে বদরগঞ্জের মানুষ। দখলে বাধা দেয়ায় রেলের কর্মচারী ও স্টেশন মাস্টারকে হুমকি দেয়ারও অভিযোগ উঠেছে।

রংপুরের বদরগঞ্জ রেল স্টেশন সংলগ্ন রেলওয়ের জমি জোর করে দখল করছে উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি আওয়ামী লীগের জেলা কমিটির সদস্য আকরাম আলী সরকার।

বিজ্ঞাপন

বদরগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার ইমরুল কায়েস কর্মচারীরা জানান, উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বিভিন্ন মামলার আসামি আকরাম আলী সরকার জেল থেকে বেরিয়ে এসে রেলস্টেশন সংলগ্ন সরকারি জমিগুলো জোর করে দখল করে নিচ্ছে। তাকে জমি দখলে বাধা দেয়ায় তিনি রেলের কর্মচারী এবং স্টেশন মাস্টারদের নানাভাবে হুমকি দিয়ে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। জোর করে দখলের বিষয়টি আমরা বাংলাদেশ রেলওয়ের উদ্বোধন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় তিনি এখনো দখল প্রক্রিয়া চলমান রেখেছেন। এভাবে দখল করতে থাকলে রেলস্টেশনে মানুষের যাতায়াতসহ পানি নিষ্কাশনের রাস্তাগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। তাই আশা করি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দ্রুত আকরাম আলীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

রেলের কর্মচারী কেরামত আলী জানান, যুবলীগের সাবেক সভাপতি আকরাম আলী সরকার একজন মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারী।

তিনি একজন আওয়ামী লীগ নেতা হয়ে কীভাবে এত সাহস দেখিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের বদরগঞ্জ স্টেশন সংলগ্ন সরকারি জায়গাগুলো দখল করে। আমরা তাকে এ বিষয়ে বাধা প্রদান করতে গেলে তিনি আমাদেরকে দেখে নেয়ার হুমকি দেন। আমরা ব্যক্তিগতভাবে বিষয়টি উপরম হলে জানিয়েছি। আমি চাই এই মুহূর্তে আকরাম আলীকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে এসে রেলের সরকারি জমিটি গুলো উদ্ধার করার।

পথচারী মিজানুর রহমান নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা বদরগঞ্জ পৌর শহরের বালুয়া ভাটা প্রফেসর পাড়া লিচুবাগানসহ বিভিন্ন এলাকার লোকজন রেল স্টেশনের পাশের এই সরকারি জমি দিয়ে স্টেশনে প্রবেশ করি। এখানে পানি নিষ্কাশনের জন্য একটি ছোট কালভার্ট রয়েছে। আকরাম আলী সরকার জোর করে মাটি ভরাট করে কালভার্টের দু’প্রান্ত বন্ধ করে দিয়েছেন। এ ছাড়াও পাশে কিছু বসতবাড়ি ছিল।

তিনি রাতের বেলা তাদেরকে ভয় দেখিয়ে তাড়িয়ে দিয়ে জায়গাগুলো দখল করে নিচ্ছেন। তার দখল প্রক্রিয়া দেখে বদরগঞ্জের মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। এভাবে প্রকাশ্যে দখল করায় মনে হচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ে জমিগুলোর কোনো মা-বাবা নেই বলে তারা মন্তব্য করেন।

রেলস্টেশনের পাশের ব্যবসায়ী বজলুর রশিদ বুলেট আমার দেশকে জানান, আমাদের মাথায় আসে না ৩৬ জুলাই যারা ছাত্র-জনতার উপর হামলাকারী, হত্যাকারী-নির্যাতনকারী তারা কীভাবে এত সাহস নিয়ে রেলের সরকারি জমি প্রকাশ্যে দখল করছে। এটি রেলওয়ের ব্যর্থতা। আমরা ব্যক্তিগতভাবে রেল কর্তৃপক্ষকে অনেকবার ফোন দিয়েছি তারা এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

তিনি আরো বলেন, আমরা এলাকাবাসী হিসেবে আকরাম আলীকে রেলের জমি জোর করে দখল করা থেকে বিরত থাকতে বললে তিনি উলটো আমাদেরকে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘কার কি করার আছে করেন, আমি এই এলাকার এই জমিগুলো দখল করছি-আগামীতেও বাকি জমিগুলো দখল করব।’

তিনি বলেন, আকরাম আলী সরকার এখনো যদি এভাবে হুমকি দিয়ে সরকারি জমি দখল করে তাহলে যারা জুলাই আগস্টে আওয়ামী লীগ-যুবলীগ-ছাত্রলীগসহ তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বাংলাদেশকে নতুন করে স্বাধীনতা এনে দিয়েছে তাদের সাথে বেঈমানি করা হবে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ যদি দ্রুত এই যুবলীগের সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তাহলে বদরগঞ্জের রেলের অনেক সম্পত্তি তার দেখাদেখি অন্যরা দখল করে নিবে। অতি দ্রুত আকরাম আলী সরকারকে আইনের আওতায় নিয়ে এসে সরকারি জমিগুলো উদ্ধার করার দাবি জানান তিনি।

এ বিষয়ে যুবলীগের সাবেক সভাপতি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আকরাম আলী সরকারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এ বিষয়ে লালমনিরহাট রেলওয়ের বিভাগীয় ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম আমার দেশকে জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই এখন জানলাম আমি একজন লোক পাঠিয়ে দিয়ে ঘটনাটি তদন্ত করতে বলব।

তিনি তদন্ত করে এসে ঘটনাটি সঠিক হলে বিষয়টি দেখা হবে।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত