ফের সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা!

সরদার আনিছ
প্রকাশ : ২৮ মার্চ ২০২৫, ২০: ৩৯
আপডেট : ২৮ মার্চ ২০২৫, ২২: ৪৫

আবারও সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা শুরু হয়েছে। চার মাসের ব্যবধানে দ্বিতীয় দফায় লিটারে ১৮ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে ব্যবসায়িকদের পক্ষ থেকে। এর আগে গত বছরের অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে ভোজ্য তেলের সংকট দেখা দিলে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর দাবি তুলে। ব্যবসায়ীদের দাবির কাছে নতি স্বীকার করে ৯ ডিসেম্বর সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে আট টাকা বাড়ায় সরকার।

বিজ্ঞাপন

এরপরও বাজারে সয়াবিন তেলের সংকট না কাটায় রোজার আগে দাম সহনীয় রাখতে সরকার ভোজ্যতেলের শুল্ক–করে রেয়াতি সুবিধা দিয়েছিল। এতে রমজানের মাঝামাঝি সময়ে এসে বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেল সরবরাহ স্বাভাবিক হয়।

এদিকে ভোজ্যতেলের শুল্ক–করে রেয়াতি সুবিধার মেয়াদ শেষ না হতেই সয়াবিনের দাম লিটারে ১৮ টাকা বাড়ানোর ঘোষণায় ঈদের পর আবারো ভোজ্যতেল সয়াবিনের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ভোক্তা ও খুচরা পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্যমতে, ভোজ্যতেলের শুল্ক–করে যে রেয়াতি সুবিধা দেওয়া হয়েছিল তার মেয়াদ শেষ হবে ৩১ মার্চ। সরকার নতুন করে এর মেয়াদ বাড়াবে কিনা তা এখনো সুস্পষ্ট নয়। কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ব্যবসায়িকদের বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ১৮ টাকা বাড়ানোর ঘোষণায় রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার ভোজ্যতেল পরিশোধনের কারখানাগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন এক চিঠিতে বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ১৮ টাকা এবং খোলা সয়াবিনের দাম লিটারে ১৩ টাকা বাড়ানোর কথা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনকে লিখিতভাবে জানিয়েছে। আগামী ১ এপ্রিল থেকে এই দর কার্যকরেরও ঘোষণা দিয়েছেন তারা।

ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ সময়ে ভোজ্যতেলের শুল্ক–করে যে রেয়াতি সুবিধা রয়েছে তার মেয়াদ বাড়ানো হলে দাম আগের মতোই থাকবে। আর যদি শুল্ক–করের রেয়াতি এ সুবিধা উঠে যায়, তাতে আমদানির খরচ বাড়বে, তখন দাম বাড়ানো ছাড়া আর উপায় থাকবে না।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, শুল্ক–কর অব্যাহতির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় মূল্য সমন্বয়ের কথা বলা হয়েছে সংগঠনটির চিঠিতে। চিঠিতে বলা হয়েছে আগামী ১ এপ্রিল থেকে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিয়ে সয়াবিন ও পাম তেল বাজারজাত করতে হবে। এ অবস্থায় মূল্য সমন্বয় করে পাম ও সয়াবিনের দাম উল্লেখ করা হয় চিঠিতে।

বোতলজাত সয়াবিনের দাম সর্বশেষ গত ৯ ডিসেম্বর বাড়ানো হয়েছিল। তখন লিটারপ্রতি দাম নির্ধারণ করা হয় ১৭৫ টাকা। আগামী ১ এপ্রিল থেকে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিনের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯৩ টাকা। সেই হিসাবে লিটারে দাম বাড়ছে ১৮ টাকা। পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিনের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৩৫ টাকা।

একইভাবে খোলা সয়াবিন ও খোলা পাম তেলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে লিটারপ্রতি ১৭০ টাকা। এখন সরকার–নির্ধারিত দাম লিটারপ্রতি ১৫৭ টাকা। এ হিসাবে খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের দাম বাড়ছে লিটারপ্রতি ১৩ টাকা।

রোজার আগে দাম সহনীয় রাখতে গত বছরের নভেম্বর–ডিসেম্বরে কয়েক দফায় ভোজ্যতেল আমদানি, উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট ছাড় দেয় সরকার। এসব সুবিধার মেয়াদ বাড়িয়ে ৩১ মার্চ পর্যন্ত উন্নীত করা হয়েছিল। অবশ্য ভোজ্যতেলের দাম সহনীয় রাখতে আমদানি পর্যায়ের অব্যাহত শুল্ক-কর রেয়াত ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানোর সুপারিশ করেছিল বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের কাছে এ–সংক্রান্ত চিঠি দেওয়া হয় সংস্থাটির পক্ষ থেকে। তবে এ পর্যন্ত শুল্ক–করের সুবিধা অব্যাহত রাখার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি এনবিআর। এ অবস্থায় ঈদের ছুটির আগে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তের কথা সরকারকে জানিয়ে দিয়েছে ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের সংগঠন।

নাবিল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিনুল ইসলাম স্বপন বলেন, চাহিদার তুলনায় আমদানি কম হচ্ছে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মিল রেখে তিন মাস পরপর দাম নির্ধারণ করা উচিত। ১ এপ্রিল থেকে সয়াবিন ও পাম তেল বাজারজাত করার পর থেকে আগের মতোই মূল্য সংযোজন কর দিতে হবে। মূল্য সংযোজন কর বাবদ এই খরচ সমন্বয় করে ভোজ্যেতেলের নতুন দাম নির্ধারণ করা উচিত।

এছাড়া তিনি বলেন, সরকার আগেভাগে পদক্ষেপ না নিলে ঈদের পর আবারো বাজারে সয়াবিন তেলের কৃত্রিম সংকট দেখা দিতে পারে। ১-২ লিটারের বোতল উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থায়ও সংকটের কারণে বাজারে বোতলজাত ভোজ্য তেলের সংকট সৃষ্টি হতে পারে।

তিনি আরো বলেন, বেশ কয়েক বছর থেকে দেশীয় বাজারের মোট চাহিদার ৪০শতাংশের বেশি ভোজ্য তেল সরবরাহ করে আসছিল এস আলম গ্রুপ এবং বসুন্ধরা গ্রুপ। জুলাই বিপ্লবের পর সরকার কঠোর অবস্থান নেওয়ায় এই দুটি গ্রুপ ভোজ্য তেল উৎপাদন ও সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। এতে করে বাজারে বড় ধরনের অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছে।

অপর একটি সূত্র বলছে, এস আলম গ্রুপের কর্ণধার দেশ থেকে পালিয়ে গেলেও এখনো ব্যবসা ক্ষেত্রে অনেক কিছু নিয়ন্ত্রণ করছে বিদেশে বসে। সাম্প্রতিকালের ভোজ্যতেল সংকটের পেছনে তাদের হাত থাকতে পারে।

শুক্র-শনিবারও চলবে বিমানবন্দরের শুল্কায়ন কার্যক্রম

প্রধান উপদেষ্টার আদেশে জুলাই সনদের আইনি রূপ দিতে হবে

নভেম্বরের মধ্যে তিস্তা মহাপরিকল্পনা শুরুর দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি

আইআরআই’র সঙ্গে নির্বাচনের প্রক্রিয়া ও ইসির নিরপেক্ষতা নিয়ে আলোচনা এনসিপির

দেশে মুক্তি পাচ্ছে জাপানি অ্যানিমে সিরিজ, শিশুদের দেখা নিষেধ

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত