প্রিমিয়ার ব্যাংকে ইকবালকে বিধিবহির্ভূত ভল্ট সুবিধা!

রোহান রাজিব
প্রকাশ : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১: ০০

বেসরকারি প্রিমিয়ার ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদ ছাড়ালেও ব্যাংকের ওপর এইচবিএম ইকবালের প্রভাব থামেনি। ব্যাংকের বনানী শাখার ভল্টে অবৈধভাবে নগদ প্রায় ৬০ লাখ টাকা রেখেছেন তিনি। একই সঙ্গে তার নামে ভল্টের ভেতরে বিভিন্ন নথিপত্র পাওয়া গেছে। যদিও আওয়ামী লীগের সাবেক এই সংসদ সদস্যসহ তার স্ত্রী আঞ্জুমান আরা শিল্পী ও তাদের তিন সন্তানের ব্যাংক হিসাব জব্দ রয়েছে। এরপরও তাদের এই ধরনের অনৈতিক সুবিধা দিয়েছে প্রিমিয়ার ব্যাংকের বনানী শাখা।

গত রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি পরিদর্শন দল ব্যাংকের বনানী শাখা গিয়ে এমন চিত্র দেখতে পায়। এরই মধ্যে ব্যাংকের কাছে এমন অসংগতি বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়ার পাশাপাশি ভল্টের সামনের সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ চেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন দল।

বিজ্ঞাপন

নিয়ম অনুসারে, ব্যাংকের ভল্টের ভেতরে আলমিরা থাকে তার মধ্যেই লেজার রাখা হয়। সেই লেজারে ব্যাংকের আগের দিনের ক্লোজিং ব্যালেন্স কত তা লেখা থাকে। ক্লোজিং ব্যালেন্স অনুযায়ী টাকা সাজানো থাকে ভল্টে। ক্লোজিং ব্যালেন্সে যে টাকা থাকার কথা সেটাই থাকতে হবে। কম বা বেশি থাকবে না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও প্রিমিয়ার ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগের একজন অতিরিক্ত পরিচালকের নেতৃত্বে একটি দল নিয়মিত বিশদ পরিদর্শনের অংশ হিসেবে ব্যাংকটির বানানী শাখায় যায়। পরিদর্শনের সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা ভল্টে রাখা টাকার হিসাব মিলিয়ে দেখেন। প্রিমিয়ার ব্যাংকের বনানী শাখার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন দল গত রবিবার সকালে ভল্টে গিয়ে দেখতে পান, তাদের লেজারে আগের দিনের ক্লোজিং ব্যালেন্স যা লেখা ছিল, তার চেয়ে প্রায় ৬০ লাখ টাকা বেশি। একই সঙ্গে ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যানের কিছু নথিপত্রও পাওয়া যায়। এসব নথিপত্রের মধ্যে ছিল ব্যাংকের চেক, এফডিআর রসিদ ও পে-অর্ডার। নথিপত্রে বিভিন্ন অঙ্কের টাকার পরিমাণ লেখা ছিল। সেখানে সাবেক চেয়ারম্যান এইচবিএম ইকবালের স্বাক্ষর ছিল।

পরিদর্শন দল তাৎক্ষণিক বনানী শাখার কাছে ব্যাখ্যা চাইলে তারা জানায়, দুজন গ্রাহক আগের দিন দেরি করে টাকা জমা দিয়েছেন। ক্লোজ করার কারণে ওই টাকা লেজারে তোলা হয়নি। যদিও ইকবালের নথিপত্রের বিষয়ে কোনো বক্তব্য দিতে পারেনি তারা। বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা আমার দেশকে বলেন, পুরো টাকাই সাবেক চেয়ারম্যানের রাখা। টাকার সঙ্গে তার বিভিন্ন নথিপত্র পাওয়া যায়। অধিক তদন্ত করলে পুরো ঘটনা বের হবে।

এ বিষয়ে গতকাল প্রিমিয়ার ব্যাংকের বনানী শাখার এসইভিপি ও ম্যানেজার ইনচার্জ মনিরুল করিম লিটন জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক অডিট করেছে। অডিটের সময় দেখা গেছে, ভল্টের ভেতর থেকে টাকা এনে ক্যাশ কাউন্টারে রাখা হয়েছে। এটাকেই তারা ইস্যু হিসেবে ধরেছে। ব্যাংকের ভল্টের টাকায় কোনো গরমিল হয়নি। তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র আমরা ভল্টে রেখেছি। নিরাপত্তার স্বার্থেই রাখা হয়েছে। এখানে সাবেক চেয়ারম্যানের কিছু ছিল না। এটা পুরোপুরি ভিত্তিহীন।

এ বিষয়ে জানতে প্রিমিয়ার ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবু জাফরকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। তার হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করা হলেও কোনো উত্তর দেননি তিনি।

জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান আমার দেশকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন দল গিয়ে ব্যাংকের ভল্টে বাড়তি টাকা পেয়েছে। আগের দিনের ক্লোজিং ব্যালেন্সের মিল ছিল না। তাদের কাছে ভিডিও ফুটেজ চাওয়া হয়েছে। এটা ব্যাংকিং আওয়ারের পরে জমা দিয়েছে কি না, তা বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত করা যাবে। নিশ্চিত হওয়া সাপেক্ষে পরে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালে প্রিমিয়ার ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর থেকে এইচবিএম ইকবাল ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। সম্প্রতি তিনি ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। টানা ২৬ বছর চেয়ারম্যান থাকার সুবাদে ব্যাংক থেকে নানা উপায়ে অনৈতিক ও অবৈধ সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। নিজের একাধিক ভবনে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ও শাখা ভাড়া দেওয়া এবং বেনামে ঋণ সুবিধা তার অন্যতম। ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তার ছেলে ইমরান ইকবালকে। ফলে ব্যাংকটি এখনো ইকবাল পরিবারের নিয়ন্ত্রণে রয়ে গেছে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত