আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

জনতা ব্যাংকে ছয় মাসে আদায় মাত্র ৯ কোটি টাকা

রোহান রাজিব
জনতা ব্যাংকে ছয় মাসে আদায় মাত্র ৯ কোটি টাকা
ফাইল ছবি

রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক খেলাপি ঋণের বোঝায় জর্জরিত। চলতি বছরের জুন শেষে ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৭২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে শুধু শীর্ষ ২০ খেলাপি গ্রাহকের কাছেই আটকে আছে প্রায় ৫৪ হাজার কোটি টাকা। এসব গ্রাহকের কাছ থেকে অর্থ আদায় করতে প্রায় ব্যর্থই ব্যাংকটি। এ বছরের প্রথম ছয় মাসে আদায় হয়েছে মাত্র ৯ কোটি টাকা। আদায়ের এ দুর্বল পরিস্থিতির কারণে ব্যাংকটি মারাত্মক তারল্য সংকটে রয়েছে। জনতা ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি বছরের জুন শেষে ব্যাংকটির বিতরণকৃত ঋণ দাঁড়িয়েছে ৯৪ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৭২ হাজার ১০৭ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ৭৫ দশমিক ৯১ শতাংশ। এসব খেলাপির মধ্যে আদায় অযোগ্য ঋণ রয়েছে ৬৬ হাজার ৯৫২ কোটি টাকা।

বিজ্ঞাপন

ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের মধ্যে শুধু শীর্ষ ২০ গ্রুপের কাছেই আটকে আছে ৫৩ হাজার ৮৪৮ কোটি টাকা। তাদের কাছ থেকে জানুয়ারি-জুন সময়ে নগদ আদায় হয়েছে মাত্র ৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। অন্য খেলাপি গ্রাহকের কাছ থেকে আদায় হয়েছে ২৩৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে গত ছয় মাসে জনতা ব্যাংক খেলাপি ঋণ থেকে আদায় করতে পেরেছে ২৪২ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুন শেষে ব্যাংকের আমানত দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১৮ হাজার ৬২৪ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বরে আমানত ছিল এক লাখ ৯ হাজার ২০৬ কোটি টাকা।

ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ আমলে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় জনতা ব্যাংকে ব্যাপক লুটপাট হয়েছে। এর মূল সুবিধাভোগী ছিলেন ক্ষমতাসীন দলের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা। গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অনেকেই দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন, আবার কেউ কেউ গ্রেপ্তার হয়েছেন। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের ঋণ আদায় কার্যক্রম প্রায় থেমে গেছে। এ কারণেই শীর্ষ ২০ খেলাপি গ্রাহকের কাছ থেকে আদায়ের পরিস্থিতি সবচেয়ে নাজুক।

জনতা ব্যাংকের শীর্ষ ২০ খেলাপি গ্রাহকের তালিকায় রয়েছেÑবেক্সিমকো গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, এননটেক্স গ্রুপ, ক্রিসেন্ট গ্রুপ, রানাকা গ্রুপ, রতনপুর গ্রুপ, রিমেক্স ফুটওয়্যার, শিকদার গ্রুপ, জনকণ্ঠ গ্রুপ, লিথুন ফ্যাব্রিক্স, হাবিব হোটেল, লেক্সকো লিমিটেড, চৌধুরী গ্রুপ, আনন্দ শিপইয়ার্ড, বিআর শিপিং মিলস, ঢাকা নর্থ পাওয়ার, ইব্রাহিম গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, ডেল্টা কম্পোজিট ও আদিল করপোরেশন।

খেলাপি ঋণ বাড়তে থাকায় জনতা ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতিও ভয়াবহ আকার নিয়েছে। জুন শেষে প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪৬ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা, যা গত ডিসেম্বরে ছিল মাত্র ১৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা। যদিও ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ডেফারাল সুবিধা নিয়ে ঘাটতির কিছুটা চাপ সাময়িকভাবে কমানো হয়েছিল। বিশাল প্রভিশন ঘাটতির কারণে ব্যাংকের মূলধন এখন ঋণাত্মক ১৭ হাজার ২৭ কোটি টাকা। ডিসেম্বরে এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১০ হাজার ৭৫৭ কোটি টাকা।

নিট সুদ আয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাওয়ায় ২০২৪ সালে জনতা ব্যাংক পিএলসি ব্যাপক লোকসানে পড়ে। গত বছর জনতা ব্যাংক তিন হাজার ৭০ কোটি টাকা লোকসানে পড়েছে। অথচ এর আগের বছর ব্যাংকটির মুনাফার পরিমাণ ছিল ৬২ কোটি টাকা। আর চলতি বছরের ছয় মাসে ব্যাংক লোকসানে দুই হাজার ৭১ কোটি টাকা।

শীর্ষ ঋণখেলাপি থেকে অর্থ আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মজিবুর রহমান আমার দেশকে বলেন, শুধু আমাদেরই নয়, প্রত্যেক ব্যাংকেরই শীর্ষ ঋণখেলাপি থেকে টাকা আদায়ের চিত্র একই। তবুও আমরা যতভাবে টাকা আদায় করা যায়, তার জন্য প্রতিটি পদক্ষেপ নিচ্ছি। আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন