চার মাস ধরেই দাম কমছে নির্মাণসামগ্রীর

ইমদাদ হোসাইন
প্রকাশ : ১০ আগস্ট ২০২৫, ১২: ৪৪

টানা চার মাস দেশের বিল্ডিং নির্মাণ-সংশ্লিষ্ট রড, সিমেন্ট, ইট, বালুসহ সব ধরনের পণ্যের দাম কমেছে। পাশাপাশি এসব পণ্যের পরিবহন খরচও কমে গেছে। ফলে এ খাতের শ্রমিকদের মজুরি কমেছে এ সময়ে। জুলাইয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালস প্রাইস ইনডেক্সে এসব তথ্য উঠে এসেছে। নির্মাণশিল্প-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ড্যাপ সংশোধন প্রক্রিয়া স্থগিত থাকার কারণে রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীরাও কাজ গুটিয়ে নিয়েছেন। ফলে এ খাতের ব্যবসাও থেমে গেছে।

বিজ্ঞাপন

বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালস প্রাইস ইনডেক্সের তথ্যানুযায়ী, জুলাই মাসে ভবন নির্মাণের প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৬২ শতাংশে। গত এপ্রিলেও এ খাতের মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৯ শতাংশে। এপ্রিলের পরই এ খাতের পণ্যের দাম কমতে শুরু করে, এরপর প্রতি মাসেই নিম্নগামী ছিল। তিন বছরের বেশি সময় দেশের উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সুদহার বাড়িয়ে কঠোর মুদ্রানীতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত অর্থবছরের শুরু থেকে নেওয়া উচ্চনীতি সুদহারের কারণে বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি তলানিতে ঠেকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমতে কমতে গত ডিসেম্বরে ৭ দশমিক ২৮ শতাংশে নামে। পরের মাস জানুয়ারিতে আরো কমে ৭ দশমিক ১৫ শতাংশ হয়। আর ফেব্রুয়ারিতে নেমে যায় ৬ দশমিক ৮২ শতাংশে। সেখান থেকে বৃদ্ধি কমার মধ্যে গত মে মাসে প্রবৃদ্ধি দাঁড়ায় ৭ দশমিক ১৭ শতাংশ। এর আগে বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের প্রকোপ শুরু হলে ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে আসে। ওই সময় ঋণ চাহিদা তেমন ছিল না। এরপরও সাড়ে ৭ শতাংশের নিচে নামেনি। সাম্প্রতিক সময়ের আগে ২০২১ সালের মে মাসে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশে নেমেছিল। পরের মাসে আবার বেড়ে ৮ দশমিক ৩৫ শতাংশে ওঠে।

কারওয়ান বাজারে রড-সিমেন্টের ব্যবসা করেন আমিনুল ইসলাম। তার দাবি, গত কয়েক মাসে বিক্রি কমে গেছে। আমার দেশকে তিনি বলেন, গত কয়েক মাসে সব ধরনের পণ্যের দাম কমে যাওয়ার খবরটি পুরোপুরি সঠিক নয়। ইট, খোয়ার দাম আগের তুলনায় বেড়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার লাল বালির দাম প্রতি ট্রাকে ১০ হাজার টাকা বেড়েছে। তবে শুধু সিমেন্টের দাম স্থিতিশীল রয়েছে।

এ খাতের কাজ কমে গেছে দাবি করে তিনি বলেন, বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। তবে মানুষ এখন বিল্ডিং নির্মাণে খুব একটা মনোযোগী নয়। তারা দাবি করেন, এখন তাদের হাতে টাকা নেই। সেজন্য কাজও কম, আমাদের বিক্রিও কম।

বিবিএসের তথ্য বলছে, বিল্ডিং নির্মাণের বিভিন্ন পণ্যের মূল্যস্ফীতি জুলাইয়ে কমে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৫৭ শতাংশে, এপ্রিলেও এসব পণ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ। নির্মাণশিল্পের পরিবহন খরচও কমেছে এ মাসে। এ সময় পরিবহন খরচ কমে ৫ দশমিক ৪৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

জুলাইয়ে নির্মাণ খাতে শ্রমিকদের খরচের প্রবৃদ্ধি কমে ৫ দশমিক ৮২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এপ্রিলেও এ খাতের মজুরির প্রবৃদ্ধি কমে ৬ দশমিক ৩৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এ খাতের ব্যয় কমে যাওয়ার যৌক্তিকতা জানিয়ে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) পরিচালক ও রিসার্স স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান ড. হারুন অর রশিদ আমার দেশকে বলেন, মূল সমস্যা হলো ড্যাপ ২০২২ যেটি প্রণয়ন হয়েছে, তার আলোকে নির্মাণ বিধিমালা যেটি ২০২৪, পরবর্তীতে নাম সংশোধন করে নির্মাণ বিধিমালা ২০২৫ করা হয়েছে। দীর্ঘ তিন বছরের কাছাকাছি নির্মাণ বিধিমালা গ্যাজেট আকারে প্রকাশ হয়নি।

তিনি বলেন, ঢাকা শহরের নির্মাণ বিধিমালা গ্যাজেট আকারে প্রকাশ না হওয়ায় ঢাকায় ভূমি উন্নয়ন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ভবন নির্মাণে রাজউকের অনুমোদনও ইতোমধ্যে বন্ধ। সেটি বন্ধের কারণে নির্মাণও বন্ধ। পূ্র্বে যারা নির্মাণ অনুমোদন নিয়েছিলেন, তারাই শুধু ভবন নির্মাণের কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন। ফলে এর প্রভাব পড়েছে রড, সিমেন্টসহ নির্মাণ খাতের সব পণ্যের ওপর।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত