একবাজারে সবজির চার রকমের দাম!

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ২৬ জুন ২০২৫, ২০: ১৪
আপডেট : ২৬ জুন ২০২৫, ২০: ২৪

রাজধানীর সবচেয়ে বড় সবজির পাইকারি বাজারগুলোর মধ্যে অন্যতম কারওয়ান বাজার। এই বাজারে কয়েক কোটি টাকার সবজি বেচাকেনা হয়। পাইকারি ও খুচরা উভয় বাজারেই বিভিন্ন ধরনের সবজি পাওয়া যায়।

বৃহস্পতিবার মেট্রোস্টেশনের সিঁড়ি বেয়ে নেমে একটু সামনে এগুতেই চোখে পড়ে সারি সারি কাঁচা সবজির দোকান নিয়ে বসে আছে বিক্রেতারা। সবজির দাম জিজ্ঞেস করতেই বিক্রেতা শামসুল আলম (৫০) বললেন, কয়েকদিন ধরে সবজির দাম এমনিতেই চড়া, গত ২-৩দিন থেকে আরো বেড়েছে।

বিজ্ঞাপন

হঠাৎ সবজির দাম বাড়ার কারণ হিসেবে তিনি বলছেন, ঈদের ছুটি আর বৃষ্টির কারণে এতোদিন ক্রেতা কম ছিল তাই কম দামেই বিক্রি হয়েছে। এখন রাজধানীতে সবাই ফিরেছে এতে চাহিদা তুলনায় সরবরাহ কমে যাওয়ায় সবজির দাম বেড়েছে।

তার মতে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে টমেটো, গাজর, কাকরোল, করলা, ধুন্দল ও বেগুনের দাম। এখানে বৃহস্পতিবার প্রতি কেজি টমেটো ১২০ থেকে ১৪০টাকা, গাজর ১২০টাকা, কাকরোল ৭০টাকা, করলা ৮০ টাকা ধুন্দল ৫০ থেকে ৬০টাকা এবং বেগুন ৬০ থেকে ৮০টাকায় বিক্রি করছেন। এছাড়া পটল ৪০ টাকা, লতি ৬০টাকা, কচু ৫০ থেকে ৬০টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, শসা ৪০ থেকে ৫০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, ঢেরস ৫০ থেকে ৬০টাকা, বটবটি ১০০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৪০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

আরেকটু সামনে কয়েকগজ পূর্বদিকে এগিয়ে গেলে চোখে পড়ে সাঁড়ি সাঁড়ি কাঁচা সবজির খাঁচি কিংবা ভাগা নিয়ে বসে আছেন নারী বিক্রেতারা। এখানে সবজির দাম সবচেয়ে কম। এখান থেকে সাধারণত নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা সবজি কিনেন বেশি। এখানে সব ধরনের সবজি কেজি প্রতি ১০ থেকে ২০টাকা কমে পাওয়া যায়। আর যদি কেউ ভাগা কিনেন তাহলে দাম আরো অনেক কমে পাওয়া যায়।

রুমা (৪০) নামের এক নারী বিক্রেতা বলেন, এক জায়গা থেকেই সবাই একদামে সবজি কিনলেও পশ্চিম ও উত্তরদিকের দোকানগুলোতে বেশি দামে সবজি বিক্রি হচ্ছে। এর কোনো কারণ নেই। তবে তারা বড় খাঁচিতে সাজিয়ে রাখেন বড়লোকেরা ওইসব দোকান থেকে বেশি দামে সবজি কিনেন। এছাড়া ভোক্তা অধিকারের বাজার মনিটরিংয়ের অভাবে যথেচ্ছাভাবে সবজি বিক্রি হয়।

এরপর আরেকটু উত্তর দিকে এগিয়ে গেলে খোলাবাজারের কোণায় বেশ কয়েকটি কাঁচা সবজির দোকান সুন্দরভাবে সাজিয়ে রেখেছেন বিক্রেতারা। এখানে সব ধরনের সবজির দাম সবচেয়ে বেশি। এখানে ৭০-৮০ টাকার নীচে কোনো সবজি পাওয়া যায় না।

এসব দোকানে দাম বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে উজ্জ্বল নামের এক সবজি বিক্রেতা বলেন, খোলাবাজারের কোণার দোকানগুলোতে বাছাইকৃত সবজি খুবই সুন্দরভাবে সাজিয়ে রাখেন দোকানিরা, যা দেখে বড়লোকেরা আকৃষ্ট হয়ে বেশি দামেই সবজি কিনেন।

এখানকার সানোয়ার হোসেন নামের এক দোকানি বলেন, এই বাজারে সবচেয়ে তাজা ও ভালোমানের সবজি বিক্রি করা হয়, তাই দামও একটু বেশি।

৫০ গজ এগিয়ে পাইকারি আড়তে গিয়ে দেখা গেল, বাইরে যে পেঁপে খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি সেই পেঁপেই এখানে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায় ৫ কেজি। তেমনিভাবে ৫ কেজি শসা ১২০ থেকে ১৫০টাকা, ৫ কেজি পটল ১১০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর এভাবেই সব ধরনের কাঁচা সবজি খুচরাবাজারের তুলনায় অর্ধেকেরও কম দামে বিক্রি হচ্ছে আড়তে।

রাজধানীর কাজীপাড়া থেকে কয়েকদিন পরপর কারওয়ান বাজারে সবজি কিনতে আসেন রমজান আলী নামের এক বেসরকারি চাকরিজীবী। তিনি বলেন, কারওয়ান বাজারে ৫০০ টাকার সবজি কিনলে অন্তত ২০০ থেকে ২৫০টাকা সেইভ হয়। এলাকার বাজারের তুলনায় কারওয়ান বাজারে সবজির দাম কম। তাই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই সময়ে সপ্তাহে ২০০ থেকে ২৫০টাকা বাজার খরচ কমলে তাতে মন্দ কী!

রমজান আলীর মতো আরও অনেকে কারওয়ান বাজারে আসেন কম খরচে কেনাকাটা করতে।

কাঁচাবাজারের জন্য কারওয়ান বাজারের খ্যাতি আছে। রাজধানীর সবচেয়ে বড় কাঁচাবাজার হিসেবে পরিচিত এই বাজারের মূল অংশের আশেপাশের রাস্তা-ফুটপাতে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সবজি নিয়ে বসেন খুচরা বিক্রেতারা। তাদের কাছেই কম দামে পাওয়া যায় নানা ধরনের সবজি। শহরের যেকোনো বাজারের তুলনায় এখানে সবজির দাম কম থাকে।

সাধারণত মধ্যরাত থেকে সকাল ৭টার মধ্যে পাইকারি বিক্রি শেষ হয়ে যায়। বিক্রির পর যা থেকে যায় পাইকাররা তা খুচরা বিক্রেতাদের কাছে কম দামে বিক্রি করে দেন। তারপর সেগুলো বিক্রি হয় রমজানের মতো নানান জায়গা থেকে আসা সকালের খুচরা গ্রাহকদের কাছে।

খুচরা বিক্রেতা জাকিয়া বলেন, পাইকারি বাজার বন্ধ হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বড় ব্যবসায়ীরা তাদের বিক্রি না হওয়া সবজিগুলো কম দামে ছেড়ে দেন। আমরা সেগুলো কিনি। পরে সেগুলো খুচরা গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করি। তাই আমরা কিছুটা কমদামেই সবজি বিক্রি করে থাকি।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত