মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এবারও কঠোর মুদ্রানীতি অব্যাহত

রোহান রাজিব
প্রকাশ : ০১ আগস্ট ২০২৫, ০৭: ১৩
ফাইল ছবি

মূল্যস্ফীতি আরো কমানোর লক্ষ্য নিয়ে কঠোর মুদ্রানীতির ধারা অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এজন্য চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের জন্য নীতি সুদহার অপরিবর্তিত রাখা হয়। আর বেসরকারি খাতের ঋণের লক্ষ্য আগের বছরের তুলনায় কমানো হয়েছে। তবে প্রকৃত অর্জনের তুলনায় লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ৭ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। গত মে পর্যন্ত বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি অর্জন হয়েছিল ৬ দশমিক ৪০ শতাংশ।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকে এক সংবাদ সম্মেলনে চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ের জন্য নতুন এ মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। সংবাদ সম্মেলনে মুদ্রানীতির বিভিন্ন কৌশল তুলে ধরেন নির্বাহী পরিচালক এজাজুল ইসলাম।

বিজ্ঞাপন

মুদ্রানীতির বিবৃতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, জুলাই-ডিসেম্বর সময়ের জন্য ১০ শতাংশ নীতি সুদহার বহাল থাকবে। যদিও ২০২৫ সালের জুনে মাসিক মূল্যস্ফীতি কমে ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশে নেমে এসেছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২২ সালের মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত নীতি সুদহার বা রেপো রেট ১১ বার বাড়িয়েছে। সর্বশেষ ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে এই হার ১০ শতাংশে উন্নীত করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার প্রেক্ষাপটে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথমার্ধে কঠোর আর্থিক নীতি বজায় থাকবে। এতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও মূল্যস্ফীতি সম্পর্কিত প্রত্যাশা স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, মূল্যস্ফীতির হার যদি ধীরে ধীরে আরো কমতে থাকে, তাহলে রেপো হার কমানো হতে পারে। তবে ব্যাংক থেকে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, মূল্যস্ফীতির হার ৭ শতাংশের নিচে না আসা পর্যন্ত রেপো হার ১০ শতাংশেই অপরিবর্তিত থাকবে।

গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, মূল্যস্ফীতি ধীরে ধীরে কমছে। তবে এখনো আমাদের কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় আসেনি। আমাদের লক্ষ্য মূল্যস্ফীতি ৩ থেকে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা। মূল্যস্ফীতি কমে গত জুনে ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশে নেমেছে। বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকা এবং উৎপাদন ভালো হওয়ায় এটি কমছে। চাল ছাড়া সব পণ্যের দর স্থিতিশীল রয়েছে।

তিনি বলেন, বর্তমান বাস্তবতায় ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি খারাপ না। এ বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে যে প্রবৃদ্ধির জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা একটা বড় বিষয়।

বেসরকারি খাতে ঋণ কমবে

বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন আগামী ডিসেম্বরে ৭ দশমিক ২ এবং জুনে ৮ শতাংশ অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। আগের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণ গত জুনে ৯ দশমিক ৮ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে অর্জিত হয়েছে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। সরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করা হয়েছে ১৮ দশমিক ১০ শতাংশ। গত অর্থবছর ১৮ দশমিক ১০ শতাংশ ঋণ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলনের বিপরীতে অর্জিত হয়েছে ১৩ দশমিক ৬০ শতাংশ।

অব্যাহত থাকবে সামষ্টিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ

চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে প্রথম ছয় মাসে সামষ্টিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারে দেশের অর্থনীতি। যার মধ্যে রয়েছে ক্রমাগত মুদ্রাস্ফীতি, আসন্ন নির্বাচনের সঙ্গে সম্পর্কিত অনিশ্চয়তা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধীরগতি এবং স্থবির বেসরকারি বিনিয়োগ। এছাড়া উচ্চ খেলাপি ঋণ আদায় না হওয়া চ্যালেঞ্জ হিসেবে থাকবে।

একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পারস্পরিক শুল্ক ব্যবস্থার ফলে টাকার মূল্য হ্রাসের সৃষ্ট চলমান ব্যয়ের কারণে মূল্যস্ফীতি হ্রাস অনিশ্চিত। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে যে শুল্কের প্রভাবে রপ্তানি বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

ব্যাংক মার্জার হলেও আমানতকারীদের ভয় নেই

গভর্নর বলেন, দুর্বল ব্যাংক মার্জার করা হলেও আমানতকারীদের অর্থ সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকবে। তারা তাদের পুরো অর্থই ফেরত পাবেন। ব্যাংকগুলোর বর্তমান যে চিত্র, মার্জার হলে আরো ভালো হবে। এবার বড় আকারে সার্জারি করা হবে। সরকার বড় অঙ্কের তহবিল জোগান দেবে। মুনাফাসহ সেই টাকা ফেরত নিতে পারবে সরকার।

তিনি বলেন, সরকার ব্যাংক কেনার জন্য যায়নি। জনগণের স্বার্থ রক্ষার জন্য গেছে। এসব ব্যাংকে এক বছরের সময় দেওয়া হয়েছিল। তারা উন্নতি করতে পারেনি। তাই এখন আমরা এখানে হস্তক্ষেপ করছি।

এক বছর বিনিয়োগ না হলেও রপ্তানি কমবে না

গভর্নর বলেন, ‘গত বছরের এই সময়ে কেউ আমদানি করতে চাইলেও আমরা তা দিতে পারিনি। এখন কিন্তু সেই পরিস্থিতি নেই। যে কেউ চাইলেই আমদানি করতে পারছে । এখন যে যার ইচ্ছামতো আমদানি করবে তাতে বাধা নেই।’

তিনি বলেন, কাঁচামাল আমদানি বেড়েছে। আগামী দু-এক বছর যদি গার্মেন্ট খাতে বিনিয়োগ নাও হয়, তবুও আমাদের রপ্তানি কমবে না। কারণ গার্মেন্টগুলো তাদের সক্ষমতার সর্বোচ্চ ধাপে এখনো পৌঁছায়নি। বিনিয়োগ বাড়ানো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাজ নয়। ঋণের উপযোগী তহবিল বেশি হলেই বিনিয়োগ বাড়বে।

ব্যালেন্স অব পেমেন্টে উদ্বৃত্ত থাকার কথা তুলে ধরে গভর্নর বলেন, ব্যাংক খাত থেকে ডলার কেনার কারণে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা বাজারে ঢুকেছে। ফলে শেয়ারবাজারও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।

তিনি বলেন, কর্মসংস্থান একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। এটিকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। কর্মসংস্থান আগামীতে আরো চ্যালেঞ্জিং হবে এআই প্রযুক্তির কারণে। তা নিয়ে বিশ্বব্যাপী চিন্তা হচ্ছে। তবে বাংলাদেশে মানসম্পন্ন লোক তৈরি হচ্ছে না। এখানে এক ধরনের অস্থিরতাও রয়েছে। কেউ দীর্ঘদিন চাকরিতে স্থির হয়ে থাকতে পারছে না।

আর্থিক স্থিতিশীলতা ফিরেছে

গভর্নর বলেন, বর্তমান সরকারের সময়ে অন্য অনেক খাত থেকে আর্থিক খাতে সবচেয়ে বেশি স্থিতিশীলতা ফিরেছে। ব্যালেন্স অব পেমেন্ট, ডলার রেট, মূল্যস্ফীতি ও রিজার্ভের ক্ষেত্রে স্থিতিশীলতা আনতে পেরেছি। এছাড়া সম্পদ পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। দেশের মধ্যে অনেক সম্পদ জব্দ করা হয়েছে। বিচার প্রক্রিয়া শেষ হলে এসব অর্থ সরকারি মালিকানায় চলে আসবে।

ফ্যাসিবাদী আমলে ঋণে প্রদানে ছিল স্বেচ্ছাচারিতা

গভর্নর বলেন, গত সরকারের আমলে নিয়ম ছিল যে যত পারো ঋণ দাও ও নাও। এখনকার চিত্র সেটি নেই। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা। ব্যাংক কোম্পানি আইন পরিবর্তন করছি। যেখানে পরিবারতন্ত্র ও পরিচালকদের হার কমানো হচ্ছে। আশা করি আগামী তিন-চার বছরের মধ্যে ব্যাংক খাত ঘুরে দাঁড়াবে।

ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে আইআরআই প্রতিনিধি দলের বৈঠক

শুক্র-শনিবারও চলবে বিমানবন্দরের শুল্কায়ন কার্যক্রম

প্রধান উপদেষ্টার আদেশে জুলাই সনদের আইনি রূপ দিতে হবে

নভেম্বরের মধ্যে তিস্তা মহাপরিকল্পনা শুরুর দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি

আইআরআই’র সঙ্গে নির্বাচনের প্রক্রিয়া ও ইসির নিরপেক্ষতা নিয়ে আলোচনা এনসিপির

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত