সরকারের নানা কৌশলে বেশ কিছুদিন ধরে দেশে চালের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। গত কয়েকদিনে মোটা ও মাঝারি চাল কেজিতে তিন থেকে চার টাকা কমেছে। তবে গত তিন সপ্তাহে সরু চালের দাম কমেনি। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার করপোরেট কোম্পানিগুলো সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়াতে পারেনি, বরং সরকারের আমদানি নীতি ও সংগ্রহ অভিযানে নতুন কৌশলের কারণে তারা অনেকটাই বেকায়দায় রয়েছে। তবে কোম্পানিগুলো সুযোগের অপেক্ষায়। বেসরকারি পর্যায়ে আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যেকোনো সময় দাম বাড়াতে পারে।
রাজধানীর তেজগাঁওয়ের পাইকারি ব্যবসায়ী চাঁদপুর রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী বাচ্চু মিয়া আমার দেশকে বলেন, আগের বছরগুলোতে বেসরকারি পর্যায়ে একসঙ্গে বিপুল চাল আমদানির অনুমতি দেওয়ার পর অনুমোদনের বেশি চাল কিনে নিয়ে মজুত করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করত করপোরেট হাউসগুলো। কিন্তু এবার চালের বাজার স্থিতিশীল থাকার পেছনে ভূমিকা রাখছে সরকারের আমদানি কৌশল। এবার পরিমাণে স্বল্প এবং দীর্ঘসময় ধরে আমদানির অনুমতি দেওয়ায় সিন্ডিকেট চক্র বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। ফলে চালের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে।
তিনি বলেন, গত তিন সপ্তাহে মাঝারি ও মোটা চালের দাম কেজিতে তিন থেকে চার টাকা করে কমেছে। এখন নতুন ধান বাজারে আসায় চালের দাম আরো কমতে পারে। তবে মিনিকেট চাল আগের বাড়তি দামেই বিক্রি করছে কোম্পানিগুলো।
গতকাল রোববার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গুটি, স্বর্ণা, পাইজাম, ব্রি-২৮ ও ব্রি-২৯সহ কয়েকটি জাতের চালের সরবরাহ বাড়ায় দাম কেজিপ্রতি দুই থেকে তিন টাকা কমেছে। খুচরা বাজারে নাজিরশাইল, জিরাশাইলসহ সরু চাল কেজিতে ৬৮-৭৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে ছিল ৭০-৮০ টাকা। নতুন গুটি স্বর্ণা মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৫ টাকায়। অন্যদিকে মিনিকেট চাল ৭৪ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তেজগাঁওয়ের জনতা রাইস এজেন্সির মালিক হাজি আবু ওসমান আমার দেশকে বলেন, ধীরে ধীরে সরবরাহ বাড়ছে। ফলে চালের দাম আরো কমার সম্ভাবনা রয়েছে। মোটা চাল ৫০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে, মাঝারি চাল ৬৫ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে আর সরু চাল ৭৫ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে সিদ্ধ চালের দাম কমলেও পোলাও চালের দাম মানভেদে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। মোজাম্মেল কোম্পানির পোলাও চাল সর্বোচ্চ ১৪০ টাকা এবং অন্যান্য কোম্পানির আতপ চাল মানভেদে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) গতকালের দৈনিক মূল্যতালিকা অনুযায়ী, প্রতি কেজি মোটা চালের দাম সর্বনিম্ন ৫৪ টাকা ও সর্বোচ্চ ৬০ টাকা, মাঝারি জাতের চাল ৫৮ থেকে ৬৮ এবং সরু চাল ৭০ থেকে ৮৫ টাকার মধ্যে। তবে টিসিবির হিসেবে গত এক মাসের ব্যবধানে সরু চালের দাম কমেছে ১ দশমিক ২৭ টাকা। মাঝারি চালের দাম ১ দশমিক ৫৬ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে।
খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে পর্যাপ্ত মজুত থাকার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম কমে যাওয়া এবং ভারতের বিকল্প উৎস থাকায় চালের বাজার আগামী দিনেও স্থিতিশীল থাকবে।
গতকাল বিকালে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক সংগ্রহ শাখার উপসচিব আরিফুল ইসলাম আমার দেশকে বলেন, দেশের কৃষক ও মিলারদের স্বার্থের কথা বিবেচনায় রেখে অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে সংগ্রহ অভিযান চলাকালে সাধারণত বিদেশ থেকে বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানি বন্ধ রাখা হয়। এবারও গত ৩০ নভেম্বর নাগাদ বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানির পর তা বন্ধ রাখা হয়েছে। সংগ্রহ অভিযান শেষ হলে প্রয়োজন অনুসারে আবারও অনুমতি দেওয়া হতে পারে। তবে সরকারি পর্যায়ে চাল আমদানি অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরে বেসরকারি পর্যায়ে ছয় লাখ টন অনুমতির বিপরীতে এ পর্যন্ত আমদানি হয়েছে পাঁচ লাখ ৯০ হাজার টনের মতো। গত ২০ নভেম্বর থেকে সারা দেশে আমন মৌসুমের সংগ্রহ শুরু হয়েছে, চলবে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এবার সাত লাখ টন ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
খাদ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে চাল আমদানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ দশমিক ৫ লাখ টন, যার মধ্যে ৯৭ হাজার মেট্রিক টন আতপ চাল এবং বাকিটা সিদ্ধ চাল। সম্প্রতি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির সভায় ভারত থেকে আরো ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
খাদ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন ১৬ লাখ মেট্রিক টন চাল মজুত রয়েছে, যেখানে ১২ লাখ মেট্রিক টন চালের মজুতকে নিরাপদ মজুত (সিকিউরড স্টক) হিসেবে ধরা হয়। ২০ নভেম্বর থেকে আমন সংগ্রহ শুরু হওয়ায় মজুত আরো বাড়বে।
খাদ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে মোট চাল আমদানি হয়েছে ১৩ লাখ টন। এর মধ্যে সরকারিভাবে আট লাখ ৩৫ হাজার টন এবং বেসরকারিভাবে প্রায় চার লাখ ৭০ হাজার টন আমদানি হয়েছে। সরকারিভাবে আমদানি হওয়া চালের মধ্যে ছয় লাখ টন ভারত থেকে, এক লাখ টন মিয়ানমার থেকে, এক লাখ টন ভিয়েতনাম থেকে এবং বাকিগুলো পাকিস্তান থেকে এসেছে। বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকার নতুন করে ভারত থেকে আরো ৫০ হাজার টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দুই লাখ ২০ হাজার টন গম আমদানি করা হবে, যেখানে প্রতি টনের দাম হবে ৩০৮ ডলার।


ডিসেম্বরের ১৩ দিনে এসেছে দেড় বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স
সিডনিতে বন্দুক হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৬
সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সবার সহযোগিতা চাইলেন সিইসি