আইনের কঠোর ও কার্যকর প্রয়োগ, বিচারহীনতার সংস্কৃতির অবসান এবং নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে পরিবার ও সমাজের মানসিকতার পরিবর্তনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন সভায় বক্তারা।সোমবার বনানী ক্লাবে 'নারী অধিকার আন্দোলন' আয়োজিত একটি গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। নারী নির্যাতন প্রতিরোধ এবং সুশাসন নিশ্চিতকরণের ওপর জোর দিয়ে গোল টেবিলের আয়োজন করা হয়।
সভানেত্রী মমতাজ মাননান (অবসরপ্রাপ্ত ডিভিশন চীফ, পরিকল্পনা কমিশন) তার উদ্বোধনী বক্তব্যে সুশাসন এবং নারী নির্যাতন প্রতিরোধে সরকারের কার্যকর ভূমিকার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
জনাব আফিফা মুশতারী (অবসরপ্রাপ্ত সহযোগী অধ্যাপক, লালমাটিয়া সরকারি মহিলা কলেজ) আইনের প্রয়োগে নানা সমস্যার কথা উল্লেখ করে বলেন, "আইনের বাস্তব প্রয়োগ খুবই জরুরি" যাতে অপরাধীরা শাস্তি থেকে মুক্তি না পায়।
প্রফেসর ডা. হাবিবা চৌধুরী সুইট (বিভাগীয় প্রধান, রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগ, ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ) প্রধান অতিথির বক্তব্যে নারী-পুরুষকে প্রতিপক্ষ না হয়ে সমাজের উন্নয়নে একত্রে কাজ করার আহ্বান জানান।
জনাব আজিজুন নাহার মুনমুন (সহকারী অধ্যাপক, এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়) "বিচারহীনতার সংস্কৃতি: নারী নির্যাতন বৃদ্ধির অন্যতম কারণ" হিসেবে চিহ্নিত করেন।
ডা. তাহেরা বেগম (কনসালট্যান্ট, বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হসপিটাল) নারীর ক্ষমতায়নকে নির্যাতন প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, "শিক্ষিত ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন নারী কখনো নির্যাতনের শিকার হতে চুপ করে থাকবে না।"
ড. শারমিন ইসলাম (প্রফেসর, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি) জোর দিয়ে বলেন, নারীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল সমাজ গঠনে মানসিকতার পরিবর্তন, শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধি অত্যাবশ্যক, কারণ আইন করে সব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে না।
আলোচনার মূল বিষয়বস্তু ও বক্তারা:
বৈঠকের প্রতিপাদ্য ছিল "সুশাসন ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধ"। সভায় সুশাসন, সমাজে ন্যায়, ইনসাফ এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে সমাজের সকল স্তরের মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নারী নির্যাতন প্রতিরোধে পদক্ষেপ গ্রহণের গুরুত্ব দেওয়া হয়।
বেগম ও এন সিদ্দিকা খানম (অবসরপ্রাপ্ত সচিব): সুশাসনের মূল প্রতিশ্রুতি হিসেবে সমাজে ন্যায়, ইনসাফ ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার কথা বলেন এবং নারীদের ব্যাপারে প্রচলিত ভুল ধারণা সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
এডভোকেট শাহানারা স্বপ্না (উপদেষ্টা, নারী অধিকার আন্দোলন): অনলাইন হয়রানি বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রফেসর ডা. নাঈমা মোয়াযযম (অবসরপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান, ঢাকা মেডিকেল কলেজ): ইসলামের দৃষ্টিতে নারী-পুরুষের সমান অধিকার এবং পুরুষের দায়িত্ব হলো পরিবারে শান্তি ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা, নারীর উপর অন্যায় করা নয়—এই বিষয়ে আলোচনা করেন।
জনাব নাজমুন নাহার (অবসরপ্রাপ্ত সহকারী প্রধান শিক্ষিকা): নারী নির্যাতন রোধে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও আইনি ব্যবস্থার যথাযথ কার্যকারিতার অভাবের কথা উল্লেখ করেন।
ড. সাজেদা হোমায়রা (লেখক ও গবেষক): নারী নির্যাতন প্রতিরোধে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা ও নীতির প্রতি ফিরে যাওয়ার গুরুত্ব তুলে ধরেন, যেখানে নারীকে সম্মান ও মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।
সঞ্চালনায় ছিলেন -ফাতমা আক্তার হ্যাপী।
গোল টেবিল বৈঠকটি সমগ্র দেশের নারীদের প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধের কার্যকর পন্থা এবং সুশাসনের বাস্তবায়নে শক্তিশালী পরিকল্পনার প্রতি মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেষ হয়। এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে 'নারী অধিকার আন্দোলন' বাংলাদেশের নারী সমাজের সুরক্ষা ও উন্নয়নের জন্য নিজেদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখার দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে।

