'জুলাই গণঅভ্যুত্থান ২৪ প্রেক্ষিত শহীদ তিতুমীরের সংগ্রাম' শীর্ষক আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেছেন, বিপ্লব, স্বাধীনতা ও সংগ্রামের আদিপিতা শহীদ মীর নিসার আলী তিতুমীরের নাম দীর্ঘ সময় রাষ্ট্রীয়ভাবে অবজ্ঞা ও উপেক্ষা করে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছিলো। বর্তমান সময়েও মহাকালের এই দ্রোহী সেনাপতিকে যথাযথভাবে স্মরণ না করাটা রাষ্ট্রযন্ত্রের দৈন্যতার বহিঃপ্রকাশ। মহাবীর তিতুমীরের পদাঙ্ক অনুসরণ করে জুলাই অভ্যুত্থানে বাঁশের লাঠি হাতে নিয়ে প্রজন্মের ছাত্র-জনতা জীবন দিয়ে বিজয় ছিনিয়ে এনেছে। লাখো শহীদের কাঙ্খিত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে তিতুমীরের সংগ্রামী জীবনদর্শন অনুকরণ ও অনুসরণ করতে হবে।
বুধবার শহীদ মীর নিসার আলী তিতুমীরের ১৯৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সরকারী তিতুমীর কলেজ সাংবাদিক সমিতি আয়োজিত আলোচনা সভায় অতিথিরা এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, সিভিল সোসাইটি রিপ্রেজেন্টেটিভ, ইউনাইটেড নেশনস-এর আবুল কাশেম শেখ। বিশেষ অতিথি ছিলেন তিতুমীর কলেজের ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এ. টি. এম. যায়েদ হোসেন, কলেজ শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক এম. এম. আতিকুজ্জামান, ঢাকা-১৭ আসনের জামায়াতের প্রার্থী ডা. এস. এম. খালিদুজ্জামান এবং সতিকসাসের শিক্ষক উপদেষ্টা সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস মল্লিক। উপস্থিত ছিলেন, কলেজ সাংবাদিক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও এশিয়ান টেলিভিশনের প্ল্যানিং এডিটর রফিকুল ইসলাম রলি, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সিনিয়র রিপোর্টার মানিক মুনতাসির এবং বিক্ষুব্ধ কবি-লেখক সমাজের আহ্বায়ক কবি আবিদ আজম।
আবুল কাশেম শেখ বলেন, শহীদ তিতুমীর ইংরেজ ও জমিদারদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে স্মরণীয় বিদ্রোহ করেন। আমি মনে করি, আজকের অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রত্যেকেই একেকজন তিতুমীর। কারণ তিতুমীর মানুষের জন্য কাজ করেছেন, কৃষকের জন্য কাজ করেছেন। আজ তাঁর স্মরণে রাষ্ট্রীয়ভাবে আলাদা বাজেট থাকার কথা ছিল, কিন্তু তা করা হয়নি। আপনাদের এই সাংবাদিক সমিতির সংগঠনকে আমি ইউনেস্কোর সাথে সমন্বয় করে দেব, যাতে ভবিষ্যতে বৃহত্তর পরিসরে আয়োজন করতে পারে।
অনুষ্ঠানে ডা. এস. এম. খালিদুজ্জামান বলেন, ভারতবর্ষের মানুষের অধিকার আদায়ে প্রথম শহীদ তিতুমীর। তাঁর ইতিহাস আমাদের তরুণ প্রজন্মসহ সকলকে অনুপ্রেরণা দেয়। ২৪-এর আন্দোলন মূলত তিতুমীরের আন্দোলনেরই ধারক-বাহক। দুঃখজনক হলেও সত্য, রাষ্ট্রীয়ভাবে তাঁর যথাযথ মর্যাদা ও আলোচনা আমরা দেখতে পাই না। আরও দুঃখের বিষয় হলো, যে কলেজ তাঁর নামে সেখানে বড় কোনো আয়োজন করা হয়নি।
লেখক ও সাংবাদিক আবিদ আজম বলেন, বিপ্লবী জাতিসত্তার আদিপিতা শহীদ তিতুমীর কিভাবে রাষ্ট্রযন্ত্রের এতটা অনাদরীও হয়ে উঠলেন, ভাবতে বিস্ময় জাগে। তিতুমীরের সংগ্রামের প্রেরণাকে অনুসরণ করে বঙ্গভঙ্গ থেকে সাতচল্লিশ বায়ান্ন-একাত্তরের ধারাবাহিকতায় চব্বিশের অভ্যুত্থান সাধিত হয়েছে। ফলে হাজার-লাখো শহীদের কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে তিতুমীরের সংগ্রামী অভিযাত্রাকে সামনে রাখতে হবে।
আলোচনা সভায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশিদের সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহিনের সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক সমিতির উপদেষ্টা শামিম হোসেন শিশির, তাওসীফ মাইমুন, সতিকসাসের সদস্যসহ বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও শিক্ষার্থীরা।

