দ্রুত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের দাবি তরুণ চিকিৎসকদের

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ২৬ জুন ২০২৫, ২০: ৫৩

বাংলাদেশে তামাকজনিত রোগে প্রতিবছর ১ লক্ষ ৬১ হাজারেরও বেশি মানুষ অকালে প্রাণ হারাচ্ছেন—যা সম্পূর্ণ প্রতিরোধযোগ্য। এই মৃত্যুমিছিল থামাতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রস্তাবিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী দ্রুত পাসের দাবি জানিয়েছেন দেশের তরুণ চিকিৎসকরা।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত ‘তরুণদের সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন দ্রুত সংশোধনের দাবি’ শীর্ষক মানববন্ধনে এই দাবি জানানো হয়। কর্মসূচির আয়োজন করে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ।

এ সময় হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির উপদেষ্টা নাইমুল আজম খান, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস্-এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার আব্দুস সালাম মিয়া, সন্ধানী ও প্ল্যাটফর্ম ডক্টরস ফাউন্ডেশনসহ দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের শতাধিক শিক্ষার্থী, তামাক বিরোধী বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ ও গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া তরুণ চিকিৎসকরা বলেন, বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের দুর্বলতাগুলো দূর করে সংশোধন করলে তামাকজনিত অকাল মৃত্যুহার ও স্বাস্থ্যঝুঁকি উল্লেখযোগ্য হারে কমানো সম্ভব হবে।

তারা বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এফসিটিসি অনুযায়ী, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের অন্যতম ছয়টি ধারা সংশোধন করা জরুরি। সেগুলো হলো- ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান (ডিএসএ) নিষিদ্ধ করা, যাতে পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহন শতভাগ ধূমপানমুক্ত হয়। তামাক বিক্রয়স্থলে পণ্যের প্রদর্শনী নিষিদ্ধ করা, যাতে তরুণ ও সম্ভাব্য ব্যবহারকারীদের আকৃষ্ট করা না যায়। তামাক কোম্পানির সকল ধরনের সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কার্যক্রম পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা। ই-সিগারেটসহ সকল ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টসের ক্ষতিকর দিক থেকে কিশোর-তরুণদের রক্ষা করা। তামাক প্যাকেট ও কৌটায় সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা। বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা, মোড়কবিহীন ও খোলা ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রি নিষিদ্ধ করা।

বক্তারা আরও জানান, বর্তমানে বাংলাদেশের প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ তামাক ব্যবহার করেন। এছাড়া, ধূমপান না করেও প্রায় ৩ কোটি ৮৪ লক্ষ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ প্রতিনিয়ত পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহনে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন। অধূমপায়ীদের সুরক্ষায় বিদ্যমান আইন সংশোধন করে পাবলিক প্লেসকে শতভাগ ধূমপানমুক্ত করা প্রয়োজন।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ও সন্ধানী কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আব্দুর

রাজ্জাক বলেন, ‘চোখের সামনে দেখি কিভাবে মুদি দোকানে ঝুলতে থাকা সিগারেট শিশু-কিশোরদের টানে। আর এসব বেশির ভাগ দোকানই স্কুলকলেজের আশেপাশে স্থাপন করা হয়েছে। শিশু-কিশোরদের তামাকের ভয়াবহ ফাঁদ থেকে রক্ষা করতে সিগারেটের প্রদর্শন বন্ধ করতে বিদ্যমান আইন সংশোধন করা দরকার। তাহলে নতুন প্রজন্মকে সুরক্ষিত রাখা যাবে।’

প্ল্যাটফর্ম ডক্টরস ফাউন্ডেশনের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ডা. ফারজানা মুন বলেন, ‘তামাক কোম্পানির কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা বা সিএসআর কার্যক্রম একটি ধোঁকা। একদিকে তারা মৃত্যুর পণ্য বিক্রি করছে—অন্যদিকে নানা সমাজসেবামূলক কাজের নামে নিজেদের উপস্থাপন করছে। এটি আসলে একটি প্রহসন—ঘাতক আবার রক্ষকের মুখোশ পরে ঘুরছে!

দুর্ভাগ্যজনকভাবে এসব সিএসআর কর্মকাণ্ড নীতিনির্ধারকদের মাঝে বিভ্রান্তি তৈরি করে এবং জনসাধারণের মাঝে তামাক কোম্পানির ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে তোলে। আমরা চাই, বিদ্যমান আইন সংশোধন করে তামাক কোম্পানির সিএসআর কার্যক্রম বন্ধ করা হোক, যাতে তাদের প্রভাব খাটানোর পথ বন্ধ হয়।’

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত