ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদসহ (পুতুল) ২৩ জনের বিরুদ্ধে দুদকের করা পৃথক তিন মামলার রায় দেওয়া হবে বৃহস্পতিবার দুপুরে ।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে এই প্রথম কোনো মামলার রায় ঘোষণা হতে চলেছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকার পাঁচ নম্বর বিশেষ জজ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুনের আদালত এ রায় ঘোষণা করবে।
এর আগে গত ২৩ নভেম্বর এসব মামলায় রায় ঘোষণার জন্য ২৭ নভেম্বর দিন ধার্য করে আদালত। তবে শেখ হাসিনাসহ ২২ আসামি পলাতক থাকায় তাদের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন হয়নি। একইসঙ্গে আত্মপক্ষ শুনানিতে নিজেদের নির্দোষও দাবি করতে পারেননি তারা।
এ বিষয়ে দুদকের কৌঁসুলি খান মাইনুল হাসান (লিপন) বলেন, মেয়ে পুতুলের আবদার মেটাতে রাজউকের প্লট বরাদ্দ নিতে গিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করেন শেখ হাসিনা। আমরা দলিল-দস্তাবেজ ও সাক্ষীদের সাক্ষ্যে তাদের দুর্নীতির প্রমাণ করতে পেরেছি। আশা করছি শেখ হাসিনাসহ ২৩ আসামির সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন হবে।
তবে তিন মামলায় কারাগারে থাকা একমাত্র আসামি রাজউক কর্মকর্তা খুরশীদ আলমের আইনজীবী মো. শাহিনুর ইসলাম বলেন, এসব প্লট বরাদ্দে ওই সময় খুরশীদ আলমের কিছুই করার ছিল না। তিনি এসব কাজের জন্য কোনো পদোন্নতি বা বেনিফিট নেননি বা কোনো ধরনের সুযোগ-সুবিধাও গ্রহণ করেননি। তাই এসব মামলায় তিনি কোনোভাবেই অভিযুক্ত নন। আশা করছি ন্যায়বিচার পেলে খালাস পাবেন তিনি।
আদালত সূত্রে জানা যায়, প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে পৃথক ছয়টি মামলা করে দুদক। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ (পুতুল), বোন শেখ রেহানা, রেহানার মেয়ে টিউলিপ রিজওয়ান সিদ্দিক, ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও অপর মেয়ে আজমিনা সিদ্দিকসহ আরো অনেককে আসামি করা হয়।
শেখ পরিবার ছাড়া ছয় মামলায় অন্য আসামিরা হলেনÑজাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব শহীদ উল্লা খন্দকার, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী ওয়াছি উদ্দিন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) কবির আল আসাদ, সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস, সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) নুরুল ইসলাম, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সাবেক মেজর (ইঞ্জিনিয়ার) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী (অব.), পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-২) শেখ শাহিনুল ইসলাম, উপপরিচালক হাফিজুর রহমান, হাবিবুর রহমান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব সালাউদ্দিন।
গত ৩১ জুলাই ঢাকার পাঁচ নম্বর বিশেষ জজ আব্দুল্লাহ আল মামুন তিন মামলায় শেখ হাসিনাসহ সব আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এসব মামলায় বিচার চলাকালে চার মাসে সাক্ষ্য দেন ৯১ জন। তবে সাক্ষ্য গ্রহণের শেষ পর্যায়ে এসে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন রাজউক কর্মকর্তা খুরশীদ আলম। এরপর তিন মামলায় সাক্ষ্য দেওয়া সব সাক্ষীকে রিকল করে জেরা করেন তার আইনজীবী শাহিনুর ইসলাম। গত ২৩ নভেম্বর আত্মপক্ষ সমর্থনে খুরশীদ আলম নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। তবে পলাতক থাকায় এ সুযোগ পাননি হাসিনা, জয়, পুতুলসহ অন্য ২২ আসামি। এরপর ২৩ নভেম্বর দুদক ও আসামিপক্ষের আইনজীবীর যুক্তিতর্ক শেষে ২৭ নভেম্বর রায়ের দিন ধার্য করেন বিচারক।
প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির বাকি তিন মামলায় ঢাকার চার নম্বর বিশেষ জজ রবিউল আলমের আদালতে বিচারকাজ চলছে। একই অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী হাসিনা ও তার বোন রেহানা এবং তার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকসহ ১৭ আসামির বিরুদ্ধ ১ ডিসেম্বর রায় ঘোষণার দিন ধার্য রয়েছে। এ ছাড়া প্লট দুর্নীতির অভিযোগে রেহানার দুই সন্তান রাদওয়ান ও আজমিনার বিরুদ্ধে দুই মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের শুনানি চলমান রয়েছে।
এসব মামলার অভিযোগে বলা হয়, সরকারের সর্বোচ্চ পদে থাকাকালে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবার প্রভাব খাটিয়ে অযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও রাজউকের পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরে ১০ কাঠা করে মোট ছয়টি প্লট বরাদ্দ নেয়।


হাসিনা-জয়-পুতুলের বিরুদ্ধে রায় আজ