রাজসাক্ষী আব্দুল্লাহ আল-মামুন যা যা বললেন আদালতে

আমার দেশ অনলাইন
প্রকাশ : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২২: ৩১

গত বছরের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যার জন্য অনুতপ্ত ও লজ্জিত পুলিশের তৎকালীন মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পরিবারের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন তিনি।

মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দিতে ক্ষমাপ্রার্থনা করেন মামুন।

বিজ্ঞাপন

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে রাজসাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে এ জবানবন্দি দেন তিনি।

রাজসাক্ষী হওয়ার কারণ:

তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালে স্বজন হারানো পরিবারের আহাজারি ও আন্দোলনে সংগঠিত নৃশংসতা দেখে আমার রাজসাক্ষী হওয়ার সিদ্ধান্তটি যৌক্তিক ছিলো বলে আমি মনে করি।

লাশ আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে:

তিনি বলেন, আন্দোলনে মানুষ মেরেছে, আবার কতগুলো লাশ একত্রিত করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আবার চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা দিতে বাধা দেয়া হয়েছে। এসব বীভৎসতা আমাকে ভীষণ ভাবে মর্মাহত করেছে।

গণহত্যার দায় আমি এড়াতে পারি না:

তিনি বলেন, পুলিশ একটি ট্রিকি চাকরি করে। পুলিশের বিরুদ্ধে সব সময়ই বিভিন্ন অভিযোগ আসে। কিন্তু আমার সাড়ে ৩৬ বছরের পুলিশে চাকরি করার সময় আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আসেনি। আমি পুলিশের আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব পালনের শেষ সময়ে এসে এত বড় গণহত্যার দায় আমি এড়াতে পারি না। এজন্য আমি দেশবাসীর কাছে ক্ষমা প্রার্থী।

র‌্যাব-১ এ টিআইএফ নামে গোপন বন্দিশালা ছিল:

মামুন জবানবন্দিতে বলেন, র‌্যাব-১ এ টিআইএফ নামে গোপন বন্দিশালা ছিল। অন্যান্য র‌্যাবের ইউনিটে ছিল এমন বন্দিশালা। রাজনৈতিক ভিন্নমত ও সরকারের জন্য হুমকি হয়- এমন মানুষদের ধরে আনা হতো এখানে।

কখনো নির্দেশনা দিতেন তারেক সিদ্দিকী:

মামুন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে আসতো এসব নির্দেশনা। কখনো নির্দেশনা দিতেন তারেক সিদ্দিকী। আর আয়নাঘরে আটক ও ক্রসফায়ারে হত্যার মতো কাজগুলো করতেন র‌্যাবের এডিসি অপারেশন ও গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালক।

২০১৮ সালের পর পুলিশে রাজনৈতিক প্রভাব আরো বেড়ে যায়:

জবানবন্দিতে সাবেক এই আইজিপি বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর পুলিশে রাজনৈতিক প্রভাব আরো বেড়ে যায়। প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন কিছু কিছু কর্মকর্তা। ঊর্ধ্বতন রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে তাদের সরাসরি যোগাযোগ ছিল।

যেসব কর্মকর্তা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় বৈঠক করতেন:

সাবেক আইজিপি বলেন, এসব কর্মকর্তা প্রায় রাতেই সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বাসায় বৈঠক করতেন। গোপন সেসব বৈঠক গভীর রাত পর্যন্ত চলত। বৈঠকে অংশ নেওয়া কর্মকর্তারা হলেন- সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিবিপ্রধান হারুনুর রশীদ, এসবির মনিরুল ইসলাম, ঢাকার ডিআইজি নুরুল ইসলাম, অ্যাডিশনাল ডিআইজি বিপ্লব কুমার, এএসপি কাফী, ওসি মাজহার, ফোরকান অপূর্বসহ আরো অনেকে। এর মধ্যে কারও কারও সঙ্গে শেখ হাসিনার সরাসরি যোগাযোগ ছিল।

চেইন অব কমান্ড মানতেন না কর্মকর্তা:

রাজসাক্ষী মামুন আরো বলেন, সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের ব্যক্তিদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ থাকায় চেইন অব কমান্ড মানতেন না এসব কর্মকর্তা।

দুইটি গ্রুপ যে সব কর্মকাণ্ড চালাত:

তার দাবি, আমি চাইতাম তারা (পুলিশ কর্মকর্তারা) পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করুক। মূলত পুলিশ বাহিনীতে গড়ে তোলা দুটি গ্রুপই এসব কর্মকাণ্ড চালাত। এছাড়া দুই গ্রুপের নেতৃত্বদানকারীরা চাইতেন তাদের নিজস্ব বলয়ের লোকজন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পোস্টিং পাক এবং ঢাকায় থাকুক।

আসাদুজ্জামান খান কামালের নির্দেশে সমন্বয়কদের মানসিক নির্যাতন:

সমন্বয়কদের আটক ও নির্যাতনের বিষয়ে মামুন বলেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের নির্দেশে সমন্বয়কদের আটক করে মানসিক নির্যাতন করা হয়। একইসঙ্গে আন্দোলন প্রত্যাহারের বক্তব্য দিতে বাধ্য করা হয়।

এ বছরের ২৪ মার্চ মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি জানান, স্বেচ্ছায় আসামি থেকে রাজসাক্ষী হয়ে সত্য উন্মোচন করতে চান তিনি।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত