দেশের বাজারে আমদানিকৃত কসমেটিকসের অর্ধেকই ভেজাল

বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২০ মার্চ ২০২৫, ১৭: ১১

দেশের বাজারে বিপুল পরিমাণ ভেজাল ও নিম্নমানের কসমেটিকস বিক্রি হচ্ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে। বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) পরিচালিত সাম্প্রতিক একাধিক অভিযানে উঠে এসেছে উদ্বেগজনক তথ্য—আমদানি করা কসমেটিকস ও স্কিন কেয়ার পণ্যের প্রায় অর্ধেকই ভেজাল ও মানহীন। এসব পণ্য ব্যবহারের ফলে ত্বকের সমস্যা থেকে শুরু করে ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ভেজালকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।

বিজ্ঞাপন

সম্প্রতি বিএসটিআই বাজার থেকে ৩৪টি আমদানিকৃত কসমেটিকস পণ্য পরীক্ষা করে দেখতে পায়,এর মধ্যে ১৭টিই ভেজাল ও নিম্নমানের। এই চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ক্রেতাদের মাঝে ব্যাপক উদ্বেগের সৃষ্টি হয়। মিরপুরের শাহ আলি প্লাজায় পরিচালিত এক অভিযানে দেখা যায়, পূর্বে নিষিদ্ধ করা বিদেশি স্কিন কেয়ার পণ্য এখনো বাজারজাত ও বিক্রি করা হচ্ছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাবেকুন নাহার এর নেতৃত্বে পরিচালিত এই অভিযানে নকল ও ক্ষতিকর কসমেটিকস পণ্য জব্দ করা হয়।

এছাড়া, হাতিরঝিলে পুলিশ প্লাজায় অবস্থিত “দ্য কোরিয়ান মল বাংলাদেশ” নামের একটি ব্র্যান্ড শপে অভিযান চালায় বিএসটিআই। সেখানে বাধ্যতামূলক তালিকাভুক্ত বেশ কিছু কসমেটিকস পণ্য বিএসটিআই’র অনুমোদন ছাড়া বিক্রি করা হচ্ছিল। এসব পণ্যের আমদানি তথ্য বা ছাড়পত্র দেখাতে না পারায় প্রতিষ্ঠানটিকে ৭ দিনের সময় দিয়ে সতর্ক করা হয়। একই দিনে মিরপুরে সাজগোজ আউটলেটেও বিএসটিআই’র অনুমোদন ছাড়াই বিদেশি কসমেটিকস বিক্রির প্রমাণ পাওয়া যায়। অনুমোদনহীন এসব পণ্যের বিপরীতে জরিমানা ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত।

বিএসটিআই’র এই অভিযানে উদ্যোক্তারা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। তারা মনে করেন, বাংলাদেশ এখন নিজস্ব প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিশ্বমানের কসমেটিকস ও স্কিন কেয়ার পণ্য উৎপাদনে সক্ষম, ফলে নকল বা ভেজাল আমদানির প্রয়োজন নেই।

রিমার্ক-হারল্যানের ডিরেক্টর শাকিব খান বলেন, “আমি গর্বের সঙ্গে বলতে পারি, কসমেটিকস ও স্কিন কেয়ার খাতে বাংলাদেশ এখন পরনির্ভরশীল নয়। রিমার্ক-হারল্যান শুরু থেকেই কঠোর মান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সর্বোচ্চ মানসম্পন্ন পণ্য সরবরাহ করে আসছে। শুধু তাই নয়, আমরা সম্মানজনক হালাল সার্টিফিকেট অর্জন করে শত বিলিয়ন ডলারের বৈশ্বিক হালাল মার্কেটে প্রবেশ করতে যাচ্ছি। তাই আমি সবাইকে আহ্বান জানাই, নকল ও ভেজাল পণ্য বিক্রির পরিবর্তে অথেনটিক ও বিশ্বমানের পণ্যের বিপণনে যুক্ত হোন।”

তিনি বিএসটিআই’র কার্যক্রমের প্রশংসা করে বলেন, “এই প্রতিষ্ঠানটি দেশের মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। আমি তাদের আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই।”

অ্যাসোসিয়েশন অফ স্কিন কেয়ার অ্যান্ড বিউটি প্রোডাক্টস ম্যানুফ্যাকচারারস অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অফ বাংলাদেশ-এর জেনারেল সেক্রেটারি জামাল উদ্দীন বলেন, “বিএসটিআই’র অভিযানে যে চিত্র উঠে এসেছে তা উদ্বেগজনক। যারা ভেজাল ও নকল কসমেটিকস আমদানি করছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। বাংলাদেশ এখন বিশ্ববাজারে কসমেটিকস রপ্তানিকারক দেশ হতে চলেছে। যেখানে আমাদের পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে, সেখানে নিম্নমানের ও ভেজাল পণ্য আমদানি মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। বরং এখনই সময় এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়ার।”

তিনি আরও বলেন, “বর্তমানে দেশেই সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে অ্যাক্রিডিটেড ল্যাবরেটরিতে কঠোর মান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বিশ্বমানের কালার কসমেটিকস ও স্কিন কেয়ার পণ্য উৎপাদন করা হচ্ছে। আমাদের অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য প্রতিষ্ঠান রিমার্ক-হারল্যান ইতোমধ্যেই সারাদেশে হারল্যান স্টোরের মাধ্যমে অথেনটিক কসমেটিকস সরবরাহ করছে। তাই যখন হাতের কাছেই গুণগত মানসম্পন্ন পণ্য পাওয়া যাচ্ছে, তখন নিম্নমানের ও ভেজাল পণ্য আমদানি করা অন্যায় ও অযৌক্তিক।

বিষয়:

কসমেটিকস
এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত