জবানবন্দিতে সাক্ষী

আশুলিয়া বাইপাইলে ছাত্র-জনতার ওপর পুলিশের গুলিতে নিহত হয় ২৫ জন

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৬: ৫০
আপডেট : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩: ৩২

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ তে গতকাল মঙ্গলবার আশুলিয়ার লাশ পোড়ানো মামলায় মতিবর রহমান বুইদ্দার সাক্ষ্য জেরা শেষ হয়। এরপর সাক্ষী দেন শফিকুল ইসলাম এর জবানবন্দি নেয়া হয়।

ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী বলেন, আমার নাম মো. শফিকুল ইসলাম। আমি বাঘাবাড়ি বাজার, আশুলিয়ায় থাকি। আমি আশুলিয়া বাইপাইল বাঘাবাড়ি বাজারে ফলের ব্যবসা করি। আমি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিলাম। আমি ৪ আগস্ট এবং ৫ আগস্ট তারিখে আমার বড় ভাই নাজমুল এর সাথে আন্দোলনে যোগ দেই। ৪ আগস্ট তারিখে সকাল ১০-১১টার দিকে বাইপাইল থেকে পল্লীবিদ্যুৎয়ের দিকে মিছিল নিয়ে যাই। সেখানে যাওয়ার পর দেখি স্থানীয় সাইফুল এমপির লোকজন ও ক্যাডারবাহিনী অবস্থান করছে। তারা সেখান থেকে এলোপাথাড়ি গুলি করতে থাকে এবং বিভিন্ন অস্ত্র নিয়ে আমাদের উপর হামলা করে। আমরা তখন বাইপাইলের দিকে ফেরত আসতে থাকি। তখন তারা আমাদের দিকে গুলি ছুরতে থাকে। আনুমানিক দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত গুলি ছুড়তে থাকে। একজন আন্দোলনকারী মারা যায় এবং অনেকে আহত হয়।

বিজ্ঞাপন

৫ আগস্ট তারিখে আমরা বাইপাইল থেকে নবীনগরের দিকে যাইতে থাকি। যাওয়ার পথে পল্লীবিদ্যুৎ এলাকায় এমপি সাইফুল তার ক্যাডারবাহিনী নিয়ে অবস্থান করে। তারা আমাদের ওপর গুলি ছুড়ে। তখন আনুমানিক দুপুর ১টা। ওই হামলায় সাইফুল এমপির সাথে তার ক্যাডারবাহিনী, পুলিশবাহিনী একত্রিত হয়ে বাইপাইল এলাকায় এসে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি বর্ষণ করে। প্রায় ২০/২৫ জন ছাত্র-জনতা নিহত হয় এবং অনেকেই আহত হয়। সেখানে আমরা সন্ধ্যা পর্যন্ত অবস্থান করি। সেখানে বিভিন্ন লোকজন আহত হয়, নিহত হয়।

এই ঘটনার জন্য সাইফুল এমপি, আশুলিয়া থানার ওসিসহ জড়িত সকল পুলিশ সদস্য এবং সাইফুল এমপির ক্যাডার বাহিনীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

মামলার অপর সাক্ষী জবানবন্দিতে বলেন, আমার নাম মতিবর রহমান ওরফে বুইদ্দা। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৬০ বৎসর। আমার ঠিকানা: গ্রাম: পুড়ারচর পিঠাপাড়া, থানা। মেলান্দহ, জেলা: জামালপুর। বর্তমানে নামাপাড়া, বটতলা, খানা-আশুলিয়া, জেলা- ঢাকা। আমি কোন পড়াশোনা করি নাই। আমি ভাংগারির ব্যবসা করি।

৫ আগস্ট দুপুর ২টার পর যখন সরকার পদত্যাগ করে তখন ছেলেরা মিছিল বের করে। আশুলিয়ার থানার সামনে দিয়ে মিছিল যাওয়ার সময় পুলিশেরা গুলি করে লাশগুলো থানার সামনে পুলিশের গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। বিকেল ৪টা পর্যন্ত গুলি চলতে থাকে। বিকাল ৪টা ৩০টার সময় পুলিশ সেনাবাহিনীর গাড়ি দিয়ে গুলি করতে করতে চলে যায়।

আমরা সন্ধ্যা পর্যন্ত ঐ জায়গাতেই থাকি। রাতের বেলা বাসায় চলে যাই। এই লাশগুলো থানার সামনেই পোড়ানো হয় এবং কেউ রাতের বেলায় বাইপাইল মসজিদের সামনে রেখে আসে।

৬ আগস্ট বেলা ১ টার পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা আসে এবং বেলা ২টার সময় সেনাবাহিনী আসে। ছয়টি লাশ গাড়ি থেকে বের করে পলিথিনে প্যাকেট করি এবং জানাজা পড়ায়। ৪টি লাশের মধ্যে মোবাইল নম্বর পাওয়া যায় এবং তাদের অভিভাবকদেরকে ফোন করা হলে তারা এসে লাশ নিয়ে যায়। ২টি লাশের অভিভাবকদের পাওয়া যায়নি। ২টি লাশ আমতলা কবরস্থানে দাফন করি। একদিন পরে আবুলের স্ত্রী হলুদ গেঞ্জি ও লুঙ্গি পড়া কোন লাশ দাফন করেছি কিনা জিজ্ঞাসা করলে আমি বলি যে, হলুদ গেঞ্জি ও লুঙ্গি পড়া একটি লাশ পেয়েছি এবং দাফন করেছি।

এসময় প্রসিকিউটর বিএম সুলতানসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। ট্রাইব্যুনাল-২–এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে এ জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত