উচ্চ আদালতে হাইকোর্ট বিভাগ ও আপিল বিভাগে বিচারক নিয়োগে নতুন নীতিমালা চূড়ান্ত করেছে সরকার। আইন মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত করা নীতিমালা প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হলে বিচারক নিয়োগের জন্য পৃথক স্থায়ী কমিশন গঠন করা হবে। আগামী দু-চার দিনের মধ্যেই বিচারক নিয়োগে কমিশন গঠনের বিষয় উপদেষ্টা পরিষদের সভায় চূড়ান্ত করা হবে। আইন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
সরকারের প্রস্তাবিত খসড়া চূড়ান্ত করা হলে উচ্চ আদালতে হাইকোর্ট বিভাগ ও আপিল বিভাগে বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী কারও ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে বিচারক নিয়োগের প্রথা বন্ধ হয়ে যাবে।
নিয়োগ হবে পুরোপুরি পরীক্ষার মাধ্যমে। নিয়োগের আগে একটি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আগ্রহীদের কাছ থেকে সিভি আহ্বান করা হবে। সিভি যাচাই-বাছাইয়ের পর অনুষ্ঠিত হবে পরীক্ষা। বিচারক হওয়ার জন্য আগ্রহী প্রার্থীদের নির্ধারিত কিছু যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতাও থাকতে হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ৮ সদস্যের নিয়োগ কমিশন হবে। তবে কমিশনে সরকারের কোনো মন্ত্রী বা আমলা সদস্য হিসেবে থাকবেন না। বাকি সদস্যদের মধ্যে থাকবেন অবসরপ্রাপ্ত একজন প্রধান বিচারপতি, আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি, হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারপতি ও সুপ্রিম কোর্ট বার-এর সভাপতি, অ্যাটর্নি জেনারেল ও একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।
আবেদনের জন্য সর্বনিম্ন বয়সসীমা রাখা হয়েছে ৪৫ বছর। আবেদনকারীর আরও কিছু যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতার কথা বলা হয়েছে নীতিমালায়। এর মধ্যে রয়েছে মামলা পরিচালনার অভিজ্ঞতা এবং ডিএলআর-এ রিপোর্টেড কেইস থাকতে হবে।
অনুরূপভাবে জুডিশিয়াল সার্ভিস থেকে যারা হাইকোর্ট বিভাগে বিচারক হওয়ার জন্য আগ্রহী তাদের জন্যও একটি নির্ধারিত ক্রাইটেরিয়া তৈরি করা হয়েছে। জুডিশিয়াল সার্ভিস থেকে বিচারক হওয়ার জন্য নিম্ন আদালতের পারফরম্যান্স যাচাই-বাছাই করা হবে।
যারা বিচারক হিসেবে নিয়োগের জন্য চূড়ান্ত হবেন, তাদের নাম কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। জনগণের পক্ষ থেকেও ওয়েবসাইটে তাদের সম্পর্কে মতামত যাচাই করা হবে। গুরুত্ব দেওয়া হবে জনগণের পক্ষ থেকে তথ্যভিত্তিক মতামতকে। বিচারক নিয়োগের জন্য চূড়ান্ত হওয়া প্রার্থীদের সম্পদ বিবরণী প্রকাশ করা হবে ওয়েবসাইটে।
আপিল বিভাগে নিয়োগের ক্ষেত্রেও বলা হয়েছে চূড়ান্ত হওয়া খসড়ায়। এতে আপিল বিভাগে নিয়োগের ক্ষেত্রেও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারকদের পক্ষ থেকে যারা আগ্রহী তাদের পরীক্ষা-নেওয়া হবে এবং হাইকোর্ট বিভাগের রায়গুলো যাচাই-বাছাই করবে কমিশন। কতগুলো মামলায় রায় দেওয়া হয়েছে এবং কতটি রায় ডিএলআর রিপোর্টেড কেস হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে সেটার তালিকা নির্ধারণ করা হয়েছে খসড়া প্রস্তাবে।
উল্লেখ্য, বিদ্যমান বিচারক নিয়োগ পদ্ধতি নিয়ে বারবার বিতর্ক হয়েছে। বিতর্কিত এই নিয়োগ পদ্ধতি অনুযায়ী যে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় যায়, তারা তাদের দলীয় ক্যাডারদেরই নিয়োগ দিতে চেষ্টা চালায়।
বিশেষ করে সর্বশেষ গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত দলীয়করণ করেছে। দলীয় ক্যাডারই শুধু নয়, চিহ্নিত সন্ত্রাসী, খুনের মামলার প্রধান আসামিসহ নানা বিষয়ে দাগি ব্যক্তিদের বিচারক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল আওয়ামী লীগ।
প্রস্তাবিত নতুন কমিশন গঠন হলে, অন্তত দলীয় ক্যাডার নিয়োগের প্রক্রিয়া বন্ধ হবে। যোগ্য ও মেধাবীরাই বিচারক হওয়ার জন্য বিবেচিত হওয়ার একটি সুযোগ তৈরি হবে।
এমবি

