জাবি হল প্রাধ্যক্ষের বাসায় কাজ না করায় চাকরিচ্যুতের অভিযোগ ৩ কর্মচারীর

জাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ২০: ১১

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজিলতুন্নেসা হলের প্রাধ্যক্ষের বাসায় কাজ না করায় চাকরিচ্যুত তিন কর্মচারী চাকরি ফিরে পেতে পাঁচদিন ধরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।

মঙ্গলবার সকাল থেকে পঞ্চমদিনের মত ওই হলের সামনে প্ল্যাকার্ড হাতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা৷ অভিযুক্ত প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষক।

বিজ্ঞাপন

ভুক্তভোগী তিন কর্মচারী হলেন ফজিলতুন্নেসা হলের ডায়নিং এটেন্ডেন্ট (মহিলা) মিরা রানী রায়, চম্পা এবং পরিচ্ছন্নতা কর্মী (মহিলা) সোমা। তারা আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে গত দেড় বছর ধরে হলটিতে কর্মরত ছিলেন। গত ২৮ আগস্ট তাদেরকে চাকরিচ্যুত করে এসব পদে নতুন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এবিএম আজিজুর রহমান বলেন, হলের প্রাধ্যক্ষের (নজরুল ইসলাম) আবেদনের প্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ভুক্তভোগী তিন কর্মচারী অভিযোগ করে বলেন, ২০২৩ সালে ওয়ার্ল্ড সিকিউরিটি সল্যুশন নামক আউটসোর্সিং কোম্পানির আওতায় তারা ফজিলতুন্নেসা হলে নিয়োগ পান। নিয়োগের পর থেকে তারা স্বাভাবিকভাবে কাজ করে আসছিলেন। তবে গণ-অভ্যুত্থানের পর হলটিতে অধ্যাপক নজরুল ইসলাম দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই হলের কাজের পাশাপাশি তার বাসায় গিয়েও আনুষঙ্গিক কাজ করার জন্য বলা হয়। তবে কর্মচারীদের অনেকেই প্রাধ্যক্ষের বাসায় কাজ করতে গেলেও ওই তিনজন অস্বীকৃতি জানান। গত এপ্রিল মাসে প্রাধ্যক্ষের বাসায় কাজ করতে না গেলে চাকরিচ্যুত করা হবে বলেও তাদেরকে হল প্রশাসন থেকে হুমকি দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে বিষয়টি ক্যাম্পাসের সাংবাদিকদের মধ্যে জানাজানি হলে হলের এক ওয়ার্ডেনের মাধ্যমে সমাধান হয়। তবে নতুন করে তাদেরকে গত ২৮ আগস্ট চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এরপর চাকরি ফিরে পেতে গত ১ অক্টোবর থেকে তারা হলের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।

ভুক্তভোগী ওই তিন কর্মচারী বলেন, আমাদের যে পদে নিয়োগ হয়েছে আমরা সে পদেই কাজ করব। হলের সব কাজ আমরা করতে আগ্রহী। কিন্তু হলের প্রভোস্টের বাসায় কেনো কাজ করতে যাব। হলের প্রভোস্টের বাসায় আমরা কাজ করতে যেতে রাজি না হওয়ার পর থেকেই আমাদেরকে হুমকি দিয়ে রাখছিলো। পরে হঠাৎ শুনি আমাদের চাকরি নেই। এই চারকির ওপর আমাদের সংসার চলে। এভাবে হঠাৎ করে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে আমরা এখন খাব কি? বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যারের অফিসে আমরা এটার সঠিক বিচারের দাবি জানিয়ে অভিযোগ দিয়েছি।

কর্মচারীদের অভিযোগ, ওই তিনজন কর্মচারীকে বাদ দিয়ে অধ্যাপক নজরুল ইসলামের বাসায় আগে থেকে যারা কাজ করতেন তাদেরকে হলে কর্মচারী হিসেবে নতুন করে ঢোকানো হয়েছে।

মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, ফজিলতুন্নেসা হলের সামনে প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে আছে ওই তিন কর্মচারী। একজনের প্ল্যাকার্ডে লেখা, বিনা কারণে চাকরিচ্যুত হওয়া মানিনা, আমরা হারানো চাকরি ফেরত চাই, আমরা হলে কাজ করতে এসেছি, প্রভোস্ট নজরুল স্যারের বাসায় কাজ করতে নয়।

এ বিষয়ে ওয়ার্ল্ড সিকিউরিটি সল্যুশন নামক আউটসোর্সিং কোম্পানির ডিরেক্টর (অপারেশন) মিনারুল ইসলাম বলেন, হলে তাদেরকে কাজ করতে দেওয়া হয়েছে তবে তারা কাজ না করে রাজনীতি, আন্দোলন করে। সেজন্য তাদেরকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।

তারা কোন ধরনের কাজ করেননি জানতে চাইলে এক পর্যায়ে তিনি বলেন, মূলত ওই কর্মচারীরা হলের প্রভোস্টের বাসায় কাজ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। সেজন্য তাদেরকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটাই আসলে মেইন কারণ। হলের কর্মচারীরা প্রভোস্টের বাসায় কেনো কাজ করবে সেটা আসলে আমারও প্রশ্ন। তবে এসব বিষয়ে জানতে প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নজরুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত