রাজধানীর সরকারি সাত কলেজ

নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দিকে এগোচ্ছে সরকার

রকীবুল হক
প্রকাশ : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১: ৪৬

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্তি থেকে সম্প্রতি বাদ হওয়া রাজধানীর সরকারি সাত কলেজ নিয়েই নতুন একটি বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের কাজে এগিয়ে যাচ্ছে সরকার। এ ক্ষেত্রে নানা জটিলতার শঙ্কা নিয়েই সুষ্ঠু একটি সমাধানের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। এজন্য সংশ্লিষ্ট মহলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে মতামত নেওয়া হচ্ছে। কলেজগুলোর স্বকীয়তা বজায় রেখেই নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রহণযোগ্য নাম, একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাঠামো নিয়ে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করছে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ কমিটি।

এদিকে তিতুমীর কলেজকে আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণার দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নিয়েও বৈঠক করছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা। আজ সোমবারও তাদের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ে আলটিমেটামের সময় শেষ হচ্ছে সোমবার। এরপর তাদের পরবর্তী অবস্থান জানানো হবে বলে ‘তিতুমীর ঐক্য’-এর আহ্বায়ক নায়েক নুর মোহাম্মদ রোববার আমার দেশকে জানিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

সাত কলেজ নিয়ে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় গঠন সংক্রান্ত সরকারের বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রধান ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক এসএমএ ফায়েজ রোববার জানান, নতুন বিশ্ববিদ্যালয় গঠন নিয়ে টিমওয়ার্ক করা হচ্ছে। সবার মতামত নেওয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত ১২টি টিমের আনুষ্ঠানিক মতামত নেওয়াসহ শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের মতামতও নেওয়া হয়েছে। তাদের সবার মধ্য থেকে একটি টিম করে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে। এ বিষয়ে ভালো কিছু হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

ইউজিসি চেয়ারম্যান জানান, নতুন বিশ্ববিদ্যালয় সম্পূর্ণভাবে চালু হওয়ার আগ পর্যন্ত ইউজিসি সম্পৃক্ত থাকবে। শিক্ষকদের ব্যক্তিগত তথ্য যাচাই করে তাদের মধ্য থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হবে। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নিয়েও আলোচনা চলছে।

এ বিষয়ে ইউজিসির সদস্য ও সংশ্লিষ্ট কমিটির সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান বলেন, সাত কলেজে ১ হাজার ৪০০ ক্যাডার সার্ভিসের শিক্ষক আছেন। বিশ্ববিদ্যালয় হলে তারা কীভাবে থাকবেন তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। দুটি বাদে সবগুলোতে ইন্টারমিডিয়েট আছে, দুটি মহিলা কলেজ আছে। এ ক্ষেত্রে কলেজগুলোর স্বকীয়তা বজায় রেখেই বিশ্ববিদ্যালয় করা হবে। শিগগিরই সুষ্ঠু সমাধানের দিকে যাওয়ার প্রত্যাশা করছি।

ইউজিসির আরেক সদস্য অধ্যাপক মো. সাইদুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় হলেও সাত কলেজের ঐতিহ্যকে স্বমহিমায় রাখতে হবে। একেকটা কলেজে একেকটা ফ্যাকাল্টি অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাদা একটি স্থাপনাও হতে পারে। বিষয়গুলো নিয়ে পর্যালোচনা চলছে।

সূত্রমতে, এর আগে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে সরকারকে একটি প্রস্তাবনা দিয়েছে বিশেষজ্ঞ কমিটি। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ‘জুলাই ৩৬ বিশ্ববিদ্যালয়’ করার প্রস্তাব রয়েছে। তবে এ নামটি নিয়ে অনেকেই দ্বিমত পোষণ করছেন। সে ক্ষেত্রে ‘ঢাকা মেট্রোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয়’ নামও আলোচনায় রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের জন্য ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সমকক্ষ’ একটি স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর রূপরেখা তৈরি করতে গত ৩০ ডিসেম্বর ইউজিসি চেয়ারম্যানকে প্রধান করে একটি উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এরই মধ্যে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের একটি আন্দোলনের মুখে গত ২৭ জানুয়ারি সাত কলেজকে অধিভুক্তি থেকে বাদ দেওয়ার ঘোষণা দেয় ঢাবি কর্তৃপক্ষ। পরে তিতুমীর কলেজকে আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে চরম জলিটতায় পড়ে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কমিটি। তবে শেষ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে তিতুমীরসহ সাত কলেজ নিয়েই নতুন একটি বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের দিকেই এগোচ্ছে সরকার। যদিও এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হলে নানা জটিলতা দেখা দেবে বলে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন। তবে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় গঠন ছাড়া বিকল্প কোনো উপায় নেই বলে মনে করছেন ইউজিসিসহ সরকার সংশ্লিষ্টরা।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত