১৩৩ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
খালেদ আহমদ, সিলেট
সমতল আর টিলার অপূর্ব এক মায়াবী পরিবেশে শির উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে শতাব্দীর প্রাচীন বিদ্যাপীঠ সিলেটের এমসি কলেজ। পুরো নাম মুরারিচাঁদ কলেজ। শিক্ষা, সংস্কৃতি, সাহিত্যচর্চা, জ্ঞান-বিজ্ঞানে এই কলেজের শিক্ষার্থীদের রয়েছে জগৎজোড়া খ্যাতি। এখানে জ্ঞান অর্জন করে অনেকে হয়েছেন প্রথিতযশা কবি, সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী, চিকিৎসক, দার্শনিক, গবেষক, অর্থনীতিবিদ, প্রকৌশলী ও রাজনীতিবিদ। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এসব গুণীজন একদিকে যেমন বিখ্যাত হয়েছেন, তেমনি অন্যদিকে কলেজের সুনামকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। ১৩৩ বছরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে অবকাঠামো, শিক্ষার্থীদের আবাসন, শিক্ষক স্বল্পতাসহ নানা সংকট রয়েছে বলে জানিয়েছে কলেজের সহকারী অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আকমল হোসেইন।
কলেজের আলোকিত শিক্ষার্থী যারা
এই কলেজ থেকে পড়াশোনা করে বিশ্বে যারা আলোচিত তাদের মধ্যে বিখ্যাত লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী, পদার্থবিজ্ঞানী ড. আতাউল করিম, এশিয়ার অন্যতম দার্শনিক দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ অন্যতম। এছাড়া নাসার বিজ্ঞানী অমিত বিক্রম দেবও রয়েছেন এই তালিকায় ।
কলেজের সাবেক ছাত্রদের মধ্যে রয়েছেন- ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে শহীদ আসাদ, সাবেক প্রধান বিচারপতি এম এ হাকিম, সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহমান, এসকাপ-এর সাবেক মহাসচিব এ এস এম কিবরিয়া, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, কর্নেল আবু তাহের, গবেষক নীহার রঞ্জন রায়, ছন্দবিশেষজ্ঞ প্রবোধ চন্দ্র সেন, গবেষক যতীন্দ্র মোহন ভট্টাচার্য, সাবেক মন্ত্রী অক্ষয় কুমার দাস, কথাসাহিত্যিক শাহেদ আলী, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুস সামাদ আজাদ, কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামসহ অসংখ্য গুণী ব্যক্তিত্ব।
কলেজের অবস্থান
কলেজটি শহর থেকে পূর্বদিকে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরত্বে টিলাগড় (সাবেক থ্যাকার টিলা) এলাকায় অবস্থিত। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত অ্যাকাডেমিক ভবন, এক টিলার উপর প্রিন্সিপাল অফিস, আরেক টিলার উপর প্রিন্সিপাল বাংলো। আসাম মডেলের টিনসেডের একাডেমিক ভবন, বিশাল পুকুর নিয়ে ক্যাম্পাসের এক নান্দনিক অবস্থান। এটা একটি পর্যটন এলাকা হিসেবে অনেকের কাছে পরিচিত। বৈকালিক ভ্রমণের জায়গা হচ্ছে এমসি কলেজ ক্যাম্পাস।
১৮৯২ সালে কলেজটি শুরু হলেও মূলত ১৯২৫ সাল থেকে বিশাল ক্যাম্পাসে কলেজটি স্থানান্তর করা হয়। ১৯২১ সালে তৎকালীন আসামের গভর্নর স্যার উইলিয়াম মরিস কলেজের নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ১৯২৫ সালে ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হলে তা উদ্বোধন করেন তৎকালীন আসামের গভর্নর স্যার উইলিয়াম রীড। মূলত কলেজটির পুনর্জন্ম দেন ইতিহাসের এক মহান নায়ক সৈয়দ আব্দুল মাজিদ (কাপ্তান মিয়া)।
প্রতিষ্ঠার পটভূমি
১৮৯২ সালে কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয় তৎকালীন সিলেটের প্রখ্যাত শিক্ষানুরাগী রাজা গিরীশচন্দ্র রায় (ব্রজগোবিন্দ নন্দী চৌধুরী)-এর উদ্যোগে। তার মাতামহ মুরারিচাঁদের নামে তিনি কলেজটি শুরু করেন। তখন এটি সিলেট শহরের বন্দরবাজারে রাজা জি সি উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে (বর্তমানে হাসান মার্কেট) অবস্থিত ছিল। ১৮৯১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজটিতে এফ এ ক্লাস খোলার অনুমতি দিলে ১৮৯২ সালের ২৭ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে মুরারিচাঁদ কলেজের যাত্রা শুরু হয়।
১৮৯২ সাল থেকে ১৯০৮ সাল পর্যন্ত রাজা গিরীশচন্দ্র রায় নিজেই কলেজটির ব্যয়ভার বহন করতেন বলে জানা যায়। ১৯০৮ সালে রাজা গিরীশচন্দ্র রায় পরলোক গমন করলে কলেজটি সরকারি সহায়তার জন্য আবেদন করা হয়। তখন থেকে কলেজটি সরকারি সহায়তায় পরিচালিত হতে থাকে। এরপর ১৯১২ সালে কলেজটি পূর্ণাঙ্গ সরকারি কলেজ রূপে আত্মপ্রকাশ করে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও অন্যান্য নানা সমস্যার কারণে কলেজের ক্যাম্পাস পরিবর্তনের প্রয়োজন দেখা দেয়। তখন কলেজ থেকে সাড়ে তিন কি. মি. দূরে থ্যাকারে টিলায় (বর্তমান টিলাগড়) ১৪৪ দশমিক ৮৬ একর ভূমি নিয়ে বিশাল ক্যাম্পাসে কলেজ স্থানান্তর করা হয়।
১৯৪৭-এর দেশ বিভাগের পূর্ব পর্যন্ত কলেজটি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ছিল। এরপর এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আসে। পরবর্তীকালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে ১৯৬৮ সালে কলেজটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়। সর্বশেষ ১৯৯২ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের মতো এমসি কলেজও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়।
দৃষ্টিনন্দন ক্যাম্পাস
ক্যাম্পাসের প্রধান পুকুরঘাটটি ছাত্রছাত্রীদের মিলনমেলাস্থল। সুবিশাল পুকুর জুড়ে ছিল শ্বেতপদ্ম। যা পুকুরটিকে দিয়েছে গুণগত সৌন্দর্যের আলাদা অলংকার। রক্ষণাবেক্ষণের কারণে এখন এটি মৃতপ্রায়। মিছিল, র্যালি করে যে জারুল তলায় এসে সমাবেশ হতো সেই জারুলতলা এখন আর নেই। তবে নামটি রয়ে গেছে। ছোট ছোট টিলা বিস্তৃত ক্যাম্পাসকে আরো সবুজায়ন করতে লাগানো হয়েছে অসংখ্য চারাগাছ। ছোট ছোট টিলায় সবুজের ছায়া নামে বিকেলে। ছাত্রছাত্রীদের পদচারণায় মুখরিত হয় প্রতিনিয়ত।
ব্রিটিশ আমলে নির্মিত অ্যাকাডেমিক ভবন (আর্টস বিল্ডিং হিসেবে পরিচিত)। সমতল থেকে আর্টস বিল্ডিং বেশ উঁচুতে। সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় দু’পাশে রয়েছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ম্যুরাল। কলেজের মূল গেটের পাশে নতুন করে নির্মিত হয়েছে খান বাহাদুর সৈয়দ আব্দুল মজিদ (কাপ্তান মিয়া) ও রাজা গিরীশচন্দ্র রায়ের ম্যুরাল। পাশে রয়েছে কলেজ প্রতিষ্ঠার ইতিহাসের ফলক।
বর্তমানে এখানে ১৪ হাজার ছাত্রছাত্রী, ১৫টি বিভাগে অনার্স এবং একটি বিভাগে মাস্টার্সে পড়াশোনা করছেন। ১০৮ জন শিক্ষক রয়েছেন এই কলেজটিতে।
সুযোগ-সুবিধা
বর্তমানে কলেজে ৯টি অ্যাকাডেমিক ভবন রয়েছে। এর মধ্যে ১০ তলা, ৫ তলা ও ২ তলাবিশিষ্ট ভবন রয়েছে। ভবনগুলো প্রধানত শ্রেণিকক্ষ, লাইব্রেরি ও প্রশাসনিক কাজে ব্যবহার হয়। রয়েছে একটি সমৃদ্ধ লাইব্রেরি। বর্তমানে এতে ৬০ হাজারেরও বেশি বই রয়েছে। একই সঙ্গে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে নিজস্ব সেমিনার লাইব্রেরি।
ছাত্রাবাসগুলো এখন জরাজীর্ণ ও বসবাসের অনুপযোগী। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত আসাম টাইপের ছয়টি ব্লক ও পাঁচ তলা একটি নতুন ভবনে রয়েছে ছাত্রদের আবাসন। এগুলো কলেজ ক্যাম্পাস থেকে প্রায় দুই কি.মি. দূরে। বিশাল এলাকা নিয়ে স্থাপিত ছাত্রাবাসগুলোতে তেমন কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। দুর্বৃত্তের আগুনে পুড়ে যাওয়া টিনসেডের ব্লকগুলো পুনঃনির্মাণ করা হলেও ৩, ৫ ও শ্রীকান্ত ছাত্রাবাসের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক।
হোস্টেল সুপার তিন নম্বর ছাত্রাবাসের অধ্যাপক মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন আমার দেশ-এর সঙ্গে আলাপকালে জানান, ছেলেদের ছাত্রাবাসগুলোতে মাত্র ৩৭৫ জন ছাত্রের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া হোস্টেল সুপারদের বাসভবনগুলোও অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। আর কলেজের ছাত্রীদের জন্য অধ্যক্ষের বাংলোর কাছাকাছি একটি পাঁচতলা ও একটি চারতলা ছাত্রীনিবাস। এখানে রয়েছে ২১২ জন ছাত্রীর আবাসনের ব্যবস্থা।
তিনি জানান, ছাত্রাবাসগুলোতে মারাত্মক খাবার পানি সংকট ও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই। বর্ষা মৌসুমে হোস্টেল এরিয়ায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। বৃষ্টির দিনে ছাত্ররা চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়ে। কিন্তু বাজেট না থাকায় ছাত্রদের প্রয়োজনীয় চাহিদা আমরা পূরণ করতে পারছি না। হোস্টেলগুলো সংস্কার অত্যন্ত জরুরি।
অধ্যক্ষ যা বললেন
এমসি কলেজের ৫৫তম অধ্যক্ষ অধ্যাপক গোলাম আহমদ খান। তিনি চলতি বছরের ৭ জুলাই এ পদে যোগদান করেন। ঐতিহ্যবাহী এই কলেজের শিক্ষা কার্যক্রমসহ বিভিন্ন বিষয়ে আমার দেশ-এর সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, শিক্ষার মান নিয়ে আমি আশাবাদী। এই কলেজের শিক্ষার্থীরা দেশে-বিদেশে কলেজের সুনাম ছড়িয়েছেন, আলো ছড়িয়েছেন। অনেক উঁচু পদে দায়িত্ব পালন করছেন। কলেজের সাবেক শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিজ্ঞানী, গবেষক, লেখক, সাহিত্যিক, অর্থনীতিবিদ, দার্শনিক রয়েছেন। আমরা তাদের নিয়ে গর্বিত। আগামীতেও আমাদের এই কলেজের শিক্ষার্থীরা দেশ ও জাতির কল্যাণে নিয়োজিত হবেন।
তিনি বলেন, আমাদের কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শুধু বিজ্ঞান বিভাগে ছাত্রছাত্রীরা লেখাপড়ার সুযোগ পান। এখান থেকে এইচএসসি পাস করে মেধাবী শিক্ষার্থীরা বুয়েট, মেডিকেল কলেজ, ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে চলে যান। ফলে কলেজে খুব কমসংখ্যক এইচএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী অনার্সে পড়েন।
সহকারী অধ্যক্ষের বক্তব্য
কলেজের সহকারী অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আকমল হোসেইন বলেন, এই কলেজ আমাদের গর্বের প্রতিষ্ঠান। কিন্তু শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর অভাব রয়েছে। কলেজে শিক্ষক স্বল্পতা, অ্যাকাডেমিক ভবন ও শ্রেণি কক্ষের সংকট রয়েছে। এছাড়া ছাত্রছাত্রীদের জন্য নেই পর্যাপ্ত আবাসনের ব্যবস্থা। পুরাতন হোস্টেলগুলোতে ছাত্ররা মানবেতর জীবনযাপন করছে। পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকায় আমরা শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করতে পারছি না।
সমতল আর টিলার অপূর্ব এক মায়াবী পরিবেশে শির উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে শতাব্দীর প্রাচীন বিদ্যাপীঠ সিলেটের এমসি কলেজ। পুরো নাম মুরারিচাঁদ কলেজ। শিক্ষা, সংস্কৃতি, সাহিত্যচর্চা, জ্ঞান-বিজ্ঞানে এই কলেজের শিক্ষার্থীদের রয়েছে জগৎজোড়া খ্যাতি। এখানে জ্ঞান অর্জন করে অনেকে হয়েছেন প্রথিতযশা কবি, সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী, চিকিৎসক, দার্শনিক, গবেষক, অর্থনীতিবিদ, প্রকৌশলী ও রাজনীতিবিদ। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এসব গুণীজন একদিকে যেমন বিখ্যাত হয়েছেন, তেমনি অন্যদিকে কলেজের সুনামকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। ১৩৩ বছরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে অবকাঠামো, শিক্ষার্থীদের আবাসন, শিক্ষক স্বল্পতাসহ নানা সংকট রয়েছে বলে জানিয়েছে কলেজের সহকারী অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আকমল হোসেইন।
কলেজের আলোকিত শিক্ষার্থী যারা
এই কলেজ থেকে পড়াশোনা করে বিশ্বে যারা আলোচিত তাদের মধ্যে বিখ্যাত লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী, পদার্থবিজ্ঞানী ড. আতাউল করিম, এশিয়ার অন্যতম দার্শনিক দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ অন্যতম। এছাড়া নাসার বিজ্ঞানী অমিত বিক্রম দেবও রয়েছেন এই তালিকায় ।
কলেজের সাবেক ছাত্রদের মধ্যে রয়েছেন- ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে শহীদ আসাদ, সাবেক প্রধান বিচারপতি এম এ হাকিম, সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহমান, এসকাপ-এর সাবেক মহাসচিব এ এস এম কিবরিয়া, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, কর্নেল আবু তাহের, গবেষক নীহার রঞ্জন রায়, ছন্দবিশেষজ্ঞ প্রবোধ চন্দ্র সেন, গবেষক যতীন্দ্র মোহন ভট্টাচার্য, সাবেক মন্ত্রী অক্ষয় কুমার দাস, কথাসাহিত্যিক শাহেদ আলী, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুস সামাদ আজাদ, কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামসহ অসংখ্য গুণী ব্যক্তিত্ব।
কলেজের অবস্থান
কলেজটি শহর থেকে পূর্বদিকে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরত্বে টিলাগড় (সাবেক থ্যাকার টিলা) এলাকায় অবস্থিত। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত অ্যাকাডেমিক ভবন, এক টিলার উপর প্রিন্সিপাল অফিস, আরেক টিলার উপর প্রিন্সিপাল বাংলো। আসাম মডেলের টিনসেডের একাডেমিক ভবন, বিশাল পুকুর নিয়ে ক্যাম্পাসের এক নান্দনিক অবস্থান। এটা একটি পর্যটন এলাকা হিসেবে অনেকের কাছে পরিচিত। বৈকালিক ভ্রমণের জায়গা হচ্ছে এমসি কলেজ ক্যাম্পাস।
১৮৯২ সালে কলেজটি শুরু হলেও মূলত ১৯২৫ সাল থেকে বিশাল ক্যাম্পাসে কলেজটি স্থানান্তর করা হয়। ১৯২১ সালে তৎকালীন আসামের গভর্নর স্যার উইলিয়াম মরিস কলেজের নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ১৯২৫ সালে ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হলে তা উদ্বোধন করেন তৎকালীন আসামের গভর্নর স্যার উইলিয়াম রীড। মূলত কলেজটির পুনর্জন্ম দেন ইতিহাসের এক মহান নায়ক সৈয়দ আব্দুল মাজিদ (কাপ্তান মিয়া)।
প্রতিষ্ঠার পটভূমি
১৮৯২ সালে কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয় তৎকালীন সিলেটের প্রখ্যাত শিক্ষানুরাগী রাজা গিরীশচন্দ্র রায় (ব্রজগোবিন্দ নন্দী চৌধুরী)-এর উদ্যোগে। তার মাতামহ মুরারিচাঁদের নামে তিনি কলেজটি শুরু করেন। তখন এটি সিলেট শহরের বন্দরবাজারে রাজা জি সি উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে (বর্তমানে হাসান মার্কেট) অবস্থিত ছিল। ১৮৯১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজটিতে এফ এ ক্লাস খোলার অনুমতি দিলে ১৮৯২ সালের ২৭ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে মুরারিচাঁদ কলেজের যাত্রা শুরু হয়।
১৮৯২ সাল থেকে ১৯০৮ সাল পর্যন্ত রাজা গিরীশচন্দ্র রায় নিজেই কলেজটির ব্যয়ভার বহন করতেন বলে জানা যায়। ১৯০৮ সালে রাজা গিরীশচন্দ্র রায় পরলোক গমন করলে কলেজটি সরকারি সহায়তার জন্য আবেদন করা হয়। তখন থেকে কলেজটি সরকারি সহায়তায় পরিচালিত হতে থাকে। এরপর ১৯১২ সালে কলেজটি পূর্ণাঙ্গ সরকারি কলেজ রূপে আত্মপ্রকাশ করে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও অন্যান্য নানা সমস্যার কারণে কলেজের ক্যাম্পাস পরিবর্তনের প্রয়োজন দেখা দেয়। তখন কলেজ থেকে সাড়ে তিন কি. মি. দূরে থ্যাকারে টিলায় (বর্তমান টিলাগড়) ১৪৪ দশমিক ৮৬ একর ভূমি নিয়ে বিশাল ক্যাম্পাসে কলেজ স্থানান্তর করা হয়।
১৯৪৭-এর দেশ বিভাগের পূর্ব পর্যন্ত কলেজটি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ছিল। এরপর এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আসে। পরবর্তীকালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে ১৯৬৮ সালে কলেজটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়। সর্বশেষ ১৯৯২ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের মতো এমসি কলেজও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়।
দৃষ্টিনন্দন ক্যাম্পাস
ক্যাম্পাসের প্রধান পুকুরঘাটটি ছাত্রছাত্রীদের মিলনমেলাস্থল। সুবিশাল পুকুর জুড়ে ছিল শ্বেতপদ্ম। যা পুকুরটিকে দিয়েছে গুণগত সৌন্দর্যের আলাদা অলংকার। রক্ষণাবেক্ষণের কারণে এখন এটি মৃতপ্রায়। মিছিল, র্যালি করে যে জারুল তলায় এসে সমাবেশ হতো সেই জারুলতলা এখন আর নেই। তবে নামটি রয়ে গেছে। ছোট ছোট টিলা বিস্তৃত ক্যাম্পাসকে আরো সবুজায়ন করতে লাগানো হয়েছে অসংখ্য চারাগাছ। ছোট ছোট টিলায় সবুজের ছায়া নামে বিকেলে। ছাত্রছাত্রীদের পদচারণায় মুখরিত হয় প্রতিনিয়ত।
ব্রিটিশ আমলে নির্মিত অ্যাকাডেমিক ভবন (আর্টস বিল্ডিং হিসেবে পরিচিত)। সমতল থেকে আর্টস বিল্ডিং বেশ উঁচুতে। সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় দু’পাশে রয়েছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ম্যুরাল। কলেজের মূল গেটের পাশে নতুন করে নির্মিত হয়েছে খান বাহাদুর সৈয়দ আব্দুল মজিদ (কাপ্তান মিয়া) ও রাজা গিরীশচন্দ্র রায়ের ম্যুরাল। পাশে রয়েছে কলেজ প্রতিষ্ঠার ইতিহাসের ফলক।
বর্তমানে এখানে ১৪ হাজার ছাত্রছাত্রী, ১৫টি বিভাগে অনার্স এবং একটি বিভাগে মাস্টার্সে পড়াশোনা করছেন। ১০৮ জন শিক্ষক রয়েছেন এই কলেজটিতে।
সুযোগ-সুবিধা
বর্তমানে কলেজে ৯টি অ্যাকাডেমিক ভবন রয়েছে। এর মধ্যে ১০ তলা, ৫ তলা ও ২ তলাবিশিষ্ট ভবন রয়েছে। ভবনগুলো প্রধানত শ্রেণিকক্ষ, লাইব্রেরি ও প্রশাসনিক কাজে ব্যবহার হয়। রয়েছে একটি সমৃদ্ধ লাইব্রেরি। বর্তমানে এতে ৬০ হাজারেরও বেশি বই রয়েছে। একই সঙ্গে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে নিজস্ব সেমিনার লাইব্রেরি।
ছাত্রাবাসগুলো এখন জরাজীর্ণ ও বসবাসের অনুপযোগী। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত আসাম টাইপের ছয়টি ব্লক ও পাঁচ তলা একটি নতুন ভবনে রয়েছে ছাত্রদের আবাসন। এগুলো কলেজ ক্যাম্পাস থেকে প্রায় দুই কি.মি. দূরে। বিশাল এলাকা নিয়ে স্থাপিত ছাত্রাবাসগুলোতে তেমন কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। দুর্বৃত্তের আগুনে পুড়ে যাওয়া টিনসেডের ব্লকগুলো পুনঃনির্মাণ করা হলেও ৩, ৫ ও শ্রীকান্ত ছাত্রাবাসের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক।
হোস্টেল সুপার তিন নম্বর ছাত্রাবাসের অধ্যাপক মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন আমার দেশ-এর সঙ্গে আলাপকালে জানান, ছেলেদের ছাত্রাবাসগুলোতে মাত্র ৩৭৫ জন ছাত্রের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া হোস্টেল সুপারদের বাসভবনগুলোও অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। আর কলেজের ছাত্রীদের জন্য অধ্যক্ষের বাংলোর কাছাকাছি একটি পাঁচতলা ও একটি চারতলা ছাত্রীনিবাস। এখানে রয়েছে ২১২ জন ছাত্রীর আবাসনের ব্যবস্থা।
তিনি জানান, ছাত্রাবাসগুলোতে মারাত্মক খাবার পানি সংকট ও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই। বর্ষা মৌসুমে হোস্টেল এরিয়ায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। বৃষ্টির দিনে ছাত্ররা চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়ে। কিন্তু বাজেট না থাকায় ছাত্রদের প্রয়োজনীয় চাহিদা আমরা পূরণ করতে পারছি না। হোস্টেলগুলো সংস্কার অত্যন্ত জরুরি।
অধ্যক্ষ যা বললেন
এমসি কলেজের ৫৫তম অধ্যক্ষ অধ্যাপক গোলাম আহমদ খান। তিনি চলতি বছরের ৭ জুলাই এ পদে যোগদান করেন। ঐতিহ্যবাহী এই কলেজের শিক্ষা কার্যক্রমসহ বিভিন্ন বিষয়ে আমার দেশ-এর সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, শিক্ষার মান নিয়ে আমি আশাবাদী। এই কলেজের শিক্ষার্থীরা দেশে-বিদেশে কলেজের সুনাম ছড়িয়েছেন, আলো ছড়িয়েছেন। অনেক উঁচু পদে দায়িত্ব পালন করছেন। কলেজের সাবেক শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিজ্ঞানী, গবেষক, লেখক, সাহিত্যিক, অর্থনীতিবিদ, দার্শনিক রয়েছেন। আমরা তাদের নিয়ে গর্বিত। আগামীতেও আমাদের এই কলেজের শিক্ষার্থীরা দেশ ও জাতির কল্যাণে নিয়োজিত হবেন।
তিনি বলেন, আমাদের কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শুধু বিজ্ঞান বিভাগে ছাত্রছাত্রীরা লেখাপড়ার সুযোগ পান। এখান থেকে এইচএসসি পাস করে মেধাবী শিক্ষার্থীরা বুয়েট, মেডিকেল কলেজ, ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে চলে যান। ফলে কলেজে খুব কমসংখ্যক এইচএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী অনার্সে পড়েন।
সহকারী অধ্যক্ষের বক্তব্য
কলেজের সহকারী অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আকমল হোসেইন বলেন, এই কলেজ আমাদের গর্বের প্রতিষ্ঠান। কিন্তু শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর অভাব রয়েছে। কলেজে শিক্ষক স্বল্পতা, অ্যাকাডেমিক ভবন ও শ্রেণি কক্ষের সংকট রয়েছে। এছাড়া ছাত্রছাত্রীদের জন্য নেই পর্যাপ্ত আবাসনের ব্যবস্থা। পুরাতন হোস্টেলগুলোতে ছাত্ররা মানবেতর জীবনযাপন করছে। পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকায় আমরা শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করতে পারছি না।
ধর্ষণ ও নারী অবমাননার অভিযোগে এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা ও স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার রাতে উত্তাল ছিল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ক্যাম্পাস। রাত ৯টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলা এই বিক্ষোভে শত শত শিক্ষার্থী অংশ নেন। বিক্ষোভকারীদের দাবির মুখে রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়
৪ ঘণ্টা আগেচট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রী সংস্থার সেক্রেটারি ও চাকসুর ছাত্রীকল্যাণ সম্পাদক নাহিমা আক্তার দীপা বলেছেন, বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত নারী ও শিশু নির্যাতন-ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে।
৭ ঘণ্টা আগেড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির চেয়ারম্যান ড. মো. সবুর খান বলেছেন, আমাদের সমাজে ঐক্যের বড় অভাব। ঐক্যের অভাবে আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্র এগুতে পারছে না।
১৮ ঘণ্টা আগেচট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহিদ মীর মুগ্ধের নামে দুটি সুপেয় পানির ফিল্টারের স্থাপন করেছে ছাত্রশিবির। মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনারে একটির উদ্বোধন করেন শাখা ছাত্রশিবির সভাপতি মোহাম্মদ আলী।
১৯ ঘণ্টা আগে