প্রবাসীরা নিজের কর্মস্থলের দেশে বসেই যাতে সহজে জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন সেই ব্যবস্থা সহজীকরণের দাবী জানিয়েছেন প্রবাসী ভোটাধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ ইউকে। প্রবাসীদের ভোটের অধিকারের ন্যায্য দাবী সরকার নীতিগতভাবে মেনে নিলেও ভোটার হওয়ার পদ্ধতিতে জটিলতা তৈরির মাধ্যমে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রবাসী ভোটাধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
শনিবার ৯ সেপ্টেম্বর ‘প্রবাসী ভোটাধিকার বাস্তবায়ন পরিষদের দাবি’ দিবস উপলক্ষে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সাথে বৈঠকে ভোটাধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
প্রবাসী ভোটাধিকার বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বানে ইউকে সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসে প্রবাসীরা ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সমাবেশ ও স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। যুক্তরাজ্যের লন্ডনে প্রবাসী ভোটাধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ ইউকের পক্ষ থেকে স্মারক লিপি প্রদান করা হয়েছে । মঙ্গলবার দুপুরে লন্ডনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে হাইকমিশনার আবিদা ইসলামের সাথে সংগঠনটির প্রতিনিধিদলের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক শেষে প্রবাসী ভোটাধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ-এর পক্ষ থেকে হাইকমিশনার আবিদা ইসলামের কাছে স্মারকলিপি তুলে দেন সংগঠনটির আহবায়ক জাস্টিস বেলায়েত হোসেন, যুগ্ম আহবায়ক ব্যারিস্টার নাজির আহমেদ, মাওলানা কে এম মওদুদ হাসান, ব্যারিস্টার আতাউর রহমান, ব্যারিস্টার সাইফুদ্দিন খালেদ, সিরাজুল ইসলাম শাহিন, সদস্য সচিব ব্যারিস্টার বদরে আলম দিদার, সদস্য ব্যারিস্টার ইকবাল হোসেন, অলিউল্লাহ নোমান, গোলাম মর্তুজা, ড. মোজাম্মেল হোসেন, ব্যারিস্টার মোহাম্মদ আলিমুল হক লিটন, ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম সরকার ও জুবের আহমদ আহাদ সহ নেতৃবৃন্দ।
স্মারকলিপি প্রদানের আগে হাইকমিশনারের সাথে প্রবাসী ভোটাধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ এর মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় প্রবাসীদের ভোটাধিকার বাস্তবায়ন পদ্ধতি ও ভোটার তালিকাভুক্তিকরণ নিয়ে হাইকমিশন ও বাস্তবায়ন পরিষদের সমন্বয়ে একটি যৌথ ওয়ার্কিং কমিটি গঠনের প্রস্তাব করা হয়। একই সাথে ভোটার হওয়া সহজ করন এবং আগামী নির্বাচনে ভোট প্রয়োগের কার্যক্রম দ্রুত সময়ের মধ্যে শুরু করার জন্য ভিন্ন পরামর্শ ও মতামত তুলে ধরা হয়।
এসময় হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম এবং মিনিস্টার (কনস্যুলার) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রকিব উদ্দিন খান হাইকমিশনের পক্ষ থেকে দাবী গুলোর বিষয়ে শোনেন এবং নির্বাচন কমিশনকে এ বিষয়ে যথাযথভাবে অবহিত করার হবে বলে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
প্রবাসী ভোটাধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ, ইউকে'র নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রবাসীদের ভোটার নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনের জারি করা পরিপত্রে শর্তের বেড়াজাল তৈরি করা হয়েছে। এতে অধিকাংশ প্রবাসী ভোটার হওয়ার সুযোগই পাবে না। প্রবাসীরা যাতে পাসপোর্ট অথবা জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে নাগরিকত্বের পরিচয় দিয়ে ভোটার হওয়ার সুযোগ পান সেই ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন প্রবাসী ভোটাধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ।
পাসপোর্টের সাথে জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মসনদ, পিতামাতার জন্মসনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্র আরোপ করে জটিলতা তৈরি করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রবাসী বাস্তবায়ন পরিষদ উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
নেতৃবৃন্দ বলেন, এতে প্রবাসীরা ভোটার হওয়ার জন্য অনেক হয়রানির মুখোমুখি হতে হবে। জাতীয় পরিচয়পত্র এখনো সহজকরণ করা হয়নি। এই শর্ত আরোপের আগে সকল নাগরিকের জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। অথচ, প্রবাসীরা দূতাবাসের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য আবেদন করলে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়।
শুধু জাতীয় পরিচয়পত্রের ওপর ভিত্তি করে ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হওয়ার বিষয়টিতে প্রবাসীদের জন্য জটিলতা তৈরি হতে পারে। তারা মনে করেন, প্রবাসীদের ক্ষেত্রে ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হওয়ার জন্য বাংলাদেশি জাতীয়তা প্রমাণ করে সে রকম একটি ডকুমেন্ট যথেষ্ট হওয়া উচিত। এছাড়া প্রবাসীরা ভোটারই হতে পারবে না।
নেতৃবৃন্দ পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতির সাথে ডিজিটাল অ্যাপস এবং লজিস্টিক সাপোর্টের সুবিধাজনক দেশগুলোতে সরাসরি ভোট প্রদানের সুযোগ দানের দাবি জানান। লন্ডন ছাড়াও ম্যানচেস্টার, বার্মিংহাম এবং অন্যান্য দেশের মধ্যে কুয়েত,সৌদি আরব, সুইডেন,পর্তুগাল, ফ্রান্স, মালয়েশিয়া, স্পেন, বেলজিয়ামসহ বিভিন্ন দেশে ৯ সেপ্টেম্বর একই কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।

