ইত্যাদির শুটিংয়ে মারামারির অপপ্রচারে অবাক হানিফ সংকেত

মতলববাজরা রাজনৈতিক রঙ লাগিয়ে অপপ্রচার করছে

বিনোদন প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫: ০৬

ঠাকুরগাঁওয়ে ‘ইত্যাদি’র অনুষ্ঠান ধারণ নিয়ে সৃষ্ট বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিকে মতলববাজদের রাজনৈতিক রং লাগিয়ে মিথ্যা অপপ্রচার বলে জানিয়েছেন অনুষ্ঠানটির উপস্থাপক হানিফ সংকেত। সরকারের ব্যর্থতা প্রমাণের উদ্দেশ্যে দূর থেকে একটি গোষ্ঠী ষড়যন্ত্রমূলকভাবে অনুষ্ঠানের ছবি ও ভিডিও ভুলভাবে উপস্থাপন করছে বলে জানান জনপ্রিয় এই উপস্থাপক।

বিজ্ঞাপন

ঠাকুরগাঁওয়ের ঘটনা নিয়ে হানিফ সংকেত গতকাল আমার দেশকে বলেন, ‘ইত্যাদির ঠাকুরগাঁওয়ের ধারণ করা অনুষ্ঠান নিয়ে কয়েকটি মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কতিপয় ব্যক্তির সংবাদ ও মন্তব্য পড়ে কিছুটা অবাকই হয়েছি। ভেবেছিলাম এসবের কোনো জবাব দেব না। কিন্তু তাদের মন্তব্য ও সংবাদ দেখে মনে হচ্ছে অনুষ্ঠানস্থলে আমি নয়, বোধহয় তারাই উপস্থিত ছিলেন। তাদের মন্তব্য পড়ে মনে হয় অনুষ্ঠানস্থলে হামলা, মারামারি ও ভাঙচুর হয়েছে, যে কারণে আমি অনুষ্ঠান বন্ধ করতে বাধ্য হই। অথচ ঠাকুরগাঁওবাসী ও উপস্থিত দর্শকরাই জানেন এ ধরনের কোনো ঘটনাই সেখানে ঘটেনি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, প্রত্ননিদর্শনসহ জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে গিয়ে ইত্যাদি ধারণ করছি প্রায় তিন দশক ধরেই। ঠাকুরগাঁওয়ে অনুষ্ঠান পরিকল্পনা করার পর আমরা রাণীশংকৈলের রাজা টংকনাথের রাজবাড়িতে ইত্যাদি ধারণ করার সিদ্ধান্ত নিই এবং এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করি। আমরা ছয় হাজার দর্শকের বসার ব্যবস্থা করি এবং সন্ধ্যা ৭টায় অনুষ্ঠান শুরু করি। কিন্তু কিছুক্ষণ পর আমরা জানতে পারি অনুষ্ঠানস্থলের বাইরে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ অপেক্ষা করছেন অনুষ্ঠান দেখার জন্য। অনুষ্ঠানে দর্শক বাছাই এবং নৃত্য ও গান ধারণ করার পরই হঠাৎ করে বাঁশের ঘেরা সরিয়ে কয়েক হাজার লোক আমন্ত্রণপত্র না পেয়েও তাদের প্রিয় ইত্যাদি দেখার জন্য অনুষ্ঠানস্থলে ঢুকে পড়ে। ফলে অনুষ্ঠানস্থলে সাময়িকভাবে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। আমরা পরিস্থিতি অনুধাবন করে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে কিছু সময়ের জন্য অনুষ্ঠান ধারণ স্থগিত করি এবং পরিস্থিতি শান্ত হলে আবার ধারণ শুরু করি। যদিও এরই মধ্যে স্থগিত হওয়ার কথা শুনে অনেক দর্শকই চলে যান। পরে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় আমরা শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠান ধারণ করি।’

এই ঘটনাকে রাজনৈতিক রং লাগিয়ে উপস্থাপনের অভিযোগ এনে তিনি বলেন, ‘উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণ হামলা, ভাঙচুর বা মারামারি নয়, ইত্যাদির প্রতি দর্শকদের ভালোবাসা। আর এই ভালোবাসার কারণেই ইত্যাদির ধারণ দেখার জন্য সবাই উন্মুখ হয়ে ছিলেন। কিন্তু স্থানাভাবে দাঁড়াতেও পারছিলেন না। তাই চেয়ার সরিয়ে দাঁড়ানোর স্থান করছিলেন। আর সে কারণেই এই চেয়ার ছোড়াছুড়ি। এর ফলে কিছুটা বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। কিন্তু ঘটনাটিকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে কেউ কেউ মিথ্যা তথ্য দিয়ে এবং রাজনৈতিক রং লাগিয়ে বিভিন্নভাবে অপপ্রচারের চেষ্টা করছেন।’

নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে এই উপস্থাপক বলেন, “কিছু ‘মতলববাজ’ ব্যক্তি নিরাপদ দূরত্বে থেকে নানা পোস্ট দিয়ে নিজের মতলব হাসিলের চেষ্টাও করছে। যারা এই ঘটনাটির সঙ্গে রাজনীতিকে সংযুক্ত করতে চাইছেন, তাদের উদ্দেশে বলছি, ‘আমি যেমন কখনোই কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হইনি, ইত্যাদিও তেমনি সবসময়ই থেকেছে রাজনীতিমুক্ত’।”

তিনি বলেন, “আর তাই দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেও গত ৬ সেপ্টেম্বর প্রায় অর্ধলক্ষাধিক দর্শক নিয়ে ইত্যাদি শেরপুর পর্ব এবং ২৯ নভেম্বর কয়েক হাজার দর্শক নিয়ে ইত্যাদি বাগেরহাট পর্ব প্রচারিত হয় এবং প্রতিটি অনুষ্ঠান অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে ধারণ করা হয়।”

হানিফ সংকেত আরও বলেন, “আমার কাছে মনে হচ্ছে, ভিউবাজরা এখন কনটেন্ট সংকটে ভুগছে। আর ইত্যাদির মতো একটি বিষয় পেলে তারা তো ঝাঁপিয়ে পড়বেই। কারণ তারা ইত্যাদির লাইক ও ভিউ থেকে বুঝতে পারছে ইত্যাদিকে নিয়ে কনটেন্ট বানালে ভিউ ব্যবসা জমবে ভালো। ফলে ইত্যাদি এই ভিউবাজদের বিড়ম্বনার শিকার হয়েছে। তবে খারাপ লাগে যখন দেখি দেশের উল্লেখযোগ্য কিছু মিডিয়া এই কাজে লিপ্ত হয়। এছাড়া মতলববাজ, দুর্নীতিবাজ ও দুশ্চরিত্রের দু-একজন মানুষ বিদেশে বসে ইত্যাদিতে রাজনৈতিক রং লাগিয়ে নিজের মতলব হাসিলের চেষ্টা করেছিল।”

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সেদিন রাস্তায় অপেক্ষমাণ হাজার হাজার দর্শক ‘ইত্যাদি আর হানিফ সংকেতকে দেখতে চাই’ বলে স্লোগান দিচ্ছিল। অথচ ভিউবাজরা চেয়ার ছোড়াছুড়ির দৃশ্য দেখল, কিন্তু স্লোগানের আওয়াজ শুনল না।

উল্লেখ্য, গত দু-তিন দিনে দর্শকের হইচই ও স্টেজে দাঁড়িয়ে থাকা হানিফ সংকেতের বেশ কয়েকটি ছবি ভিডিও ও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করা এসব ভিডিওর ক্যাপশনে সরকার ও ছাত্র আন্দোলনের কর্মীদের উদ্দেশে বিভিন্ন কথা লেখা হয়। ‘এমন বাংলাদেশ কি চেয়েছিলাম’, ‘আগেই ভালোছিলাম’, ‘আজ কোথায় লাল বিপ্লবীরা’, ‘এখন কেমন লাগে?’, ‘দেশটা রসাতলে গেল’ জাতীয় বাক্য লেখা হয়, যাতে বর্তমান সরকার ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতাকর্মীদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণে ব্যর্থ হয়েছে এমনটাই প্রকাশ করা হয়।

ওই ঘটনার পর হানিফ সংকেত ফেসবুকে একটি দীর্ঘ পোস্ট করে মূল ঘটনার ব্যাখ্যা দেন। হানিফ সংকেতের ব্যাখ্যা অভ্যুত্থানবিরোধীরা যেমন খুশি হতে পারেননি, তেমনি অভ্যুত্থানের পক্ষের দর্শক অভিনন্দন জানিয়েছেন। সজীব আহমেদ নামের একজন তার ওয়ালে হানিফ সংকেতের পোস্টটি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘তারা যেটা শুনতে চাইছিল সেটা না বলে তাদের মন ভেঙে দিলেন প্রিয় উপস্থাপক। সত্য উচ্চারণের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।’

অসদাচারণের দায়ে টঙ্গী পাইলট স্কুলের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে শোকজ

জরুরি অবস্থা জারি করলেন পেরুর প্রেসিডেন্ট

গুম-খুনে জড়িত ১৫ সেনা কর্মকর্তা চাকরিচ্যুত। ট্রাইব্যুনালে হাজির। সাবজেলে প্রেরণ

এবার ১ টাকায় গরুর মাংস বিতরণের ঘোষণা সেই এমপি প্রার্থীর

অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের বহন করা সেই প্রিজন ভ্যানে কী আছে

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত