সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লালন উৎসব পালিত

বিনোদন রিপোর্টার
প্রকাশ : ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ১৩: ৩২

জাতীয় পর্যায়ে লালন সাঁইয়ের ১৩৫তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে গতকাল ১৮ অক্টোবর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রথমবারের মতো আয়োজিত হয় লালন উৎসব ও লালন মেলা। নতুন বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অভিযাত্রায় সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ব্যবস্থাপনায় এই অনুষ্ঠান বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। একইসাথে কুষ্টিয়ায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে ৩ দিনব্যাপী লালন উৎসব।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খানসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: মফিদুর রহমান, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক শেখ রেজাউদ্দিন আহমেদ (কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন), বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক তানজিম ইবনে ওয়াহাব। অনুষ্ঠানে লাখো লালন ভক্তদের পদচারণায় মুখরিত ছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। মঞ্চের শিল্পীদের সাথে জনপ্রিয় গানগুলোর সঙ্গে কণ্ঠ মেলান লালন ভক্ত অনুরাগী। ‍

বিজ্ঞাপন

সন্ধ্যায় সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে লালন সাঁইয়ের উপর নির্মিত ভিডিওচিত্র প্রদর্শিত হয়। এরপর শুরু হয় লালন সংগীতানুষ্ঠান। শুরুতেই ‘সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে’, ‘আল্লাহ বলো মনরে পাখি’ এবং ‘যদি তরিতে বাসনা থাকে’ গানসমূহ পরিবেশন করেন এ্যানি বৈরাগী ও সুখলাল রায়।

শিল্পী সূচনা শেলী পরিবেশন করেন ‘কি সন্ধানে যাই সেখানে মনের মানুষ যেখানে’, ‘আলিফ দিয়ে টোকা মারো’ প্রভৃতি গান এবং ফাহমিদা আহমেদ শিফা লালনের বিখ্যাত গান ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখী’ ও ‘আমার ঘরখানায় কে’ পরিবেশন করেন।

এরপর পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে উঠেন বাউলা ব্যান্ড। তারা বাউলা বন্ধনা দিয়ে শুরু করে একে একে ‘প্রাণ গৌর এসে’, ‘দিলনা দিলনা’, ‘রবে না এ ধন’ প্রভৃতি গান। এরপর মঞ্চে উঠেন গানের দল টংয়ের গান।

শিল্পী পথিক নবী এন্ড টিম ক্রিয়েটিভ লালনের জনপ্রিয় গান ‘তিন পাগলের হলো মেলা’, ‘ধন্য ধন্য বলি তারে’, ‘আমি অপার হয়ে বসে আছি’সহ জনপ্রিয় গান পরিবেশন করেন। শিল্পী অরূপ রাহী ‘পাপ পূণ্যের কথা আমি কারে বা শুধাই’, ‘মানুষ গুরু নিষ্ঠা যার’ সহ কয়েকটি গান পরিবেশন করেন এবং ‘আছে যার মনের মানুষ মনে তোলা’, ‘এমন মানব জনম আর কি হবে’, ‘গোষ্ঠে চলো হরি মুরারী’ প্রভৃতি গান পরিবেশন করেন সমগীত।

লালনসংগীত পরিবেশন করেন নীরব অ্যান্ড বাউলস, গান পরিবেশন করেন দীনা মণ্ডল, মুজিব পরদেশী, কানিজ খন্দকার মিতু ও সাগর বাউল। এরপর মঞ্চে উঠেন বেঙ্গল সিম্ফনি। পরিবেশনায় ছিলেন আলেয়া বেগম, শিবলু, মাখন দেওয়ান মার্থা, টুনটুন বাউল। তারা পরিবেশন করেন ‘মিলন হবে কতো দিনে’, ‘মন তুই করলি রে কি ইতর পনা’, ‘তিন পাগলের হইলো মেলা’, ‘কানার হাট বাজার’ প্রভৃতিত গানসমূহ।

সবশেষে সংগীত পরিবেশন করবেন লালন ব্যান্ড। তারা একে একে পরিবেশন করেন লালনের জনপ্রিয় গান ‘জাত গেল’, ‘ক্ষ্যাপা’, ‘অপার’, ‘সময় গেলে’, ‘গুরুর চরন’ ও ‘পাগল’। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন দীপক কুমার গোস্বামী ও মৌমিতা জান্নাত।

উল্লেখ্য, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় গতকাল ১৭ থেকে ১৯ অক্টোবর ২০২৫, কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার ছেউড়িয়ারস্থ লালন ধামে তিন দিনব্যাপী লালনের ভাব-দর্শন চর্চা, লালন সংগীতানুষ্ঠান ও লালনমেলার আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়াও গতকাল সারাদেশে একযোগে অনুষ্ঠিত হয় লালন উৎসব- ভক্ত, সাধক আর শিল্পীদের মিলনমেলা।

আজ ১৯ অক্টোবর সন্ধ্যা ৬টায় কুষ্টিয়ায় ৩ তিনব্যাপী জাতীয় পর্যায়ে লালন সাঁইয়ের ১৩৫তম তিরোধান দিবসের সমাপনী অনুষ্ঠান আয়োজিত হবে। সমাপনী দিনেও ভাবগীতির সুর আর গানের বাণীতে ভরে উঠবে ছেউড়িয়ার লালন ধাম। গান গাইবেন সারাদেশ থেকে আগত বাউল- ফকিরগণ।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত