দর্শক চাহিদায় দ্বিতীয় সপ্তাহেও প্রেক্ষাগৃহে ‘ফেরেশতে’

বিনোদন রিপোর্টার
প্রকাশ : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৫: ৩৯

ইরানি পরিচালক মুর্তজা অতাশ জমজমের নির্মিত সিনেমা ‘ফেরেশতে’ ঢাকার প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির পর থেকেই আলোচনায়। সালমান শাহর ৫৫তম জন্মদিন উপলক্ষে ১৯ সেপ্টেম্বর ছবিটি মুক্তি পায়। এখনো রাজধানীর স্টার সিনেপ্লেক্স, লায়ন সিনেমাস ও যমুনা ব্লকবাস্টার্সে নিয়মিতভাবে প্রদর্শিত হচ্ছে।

প্রযোজক ও অভিনেতা সুমন ফারুক বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য শুধুমাত্র ব্যবসা করা ছিল না। আমরা মূলত চেয়েছিলাম একটি ভালো গল্পের সিনেমা উপহার দিতে। স্বাধীনভাবে নতুন নির্মাতাদের জন্য সিনেমা হলে ছবি প্রদর্শন করানো সত্যিই অনেক কঠিন কাজ। তবে দর্শকরাই পারেন একটি সিনেমাকে প্রথম সপ্তাহ থেকে দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় সপ্তাহে এগিয়ে নিতে। সৌভাগ্যবশত দর্শকদের কাছ থেকে আমরা সেই প্রত্যাশিত সাড়া পেয়েছি, যার ফলে দ্বিতীয় সপ্তাহেও ছবিটি চলছে। পূজার এই সময়ে দর্শকদের আগ্রহ আরও বাড়বে বলে আমার বিশ্বাস। আশা করি, মুখে মুখে প্রচারণার মাধ্যমে সিনেমাটি আরও কয়েক সপ্তাহ হলে টিকে থাকবে।’

বিজ্ঞাপন

গল্পের কেন্দ্রে রয়েছে সাধারণ মানুষের জীবনসংগ্রাম। ফেরেশতে একজন গার্মেন্টস কর্মী, আর তার স্বামী আমজাদ রিকশাচালক। তারা নিঃসন্তান, কিন্তু প্রতিবেশী এক বধির শিশুর দায়িত্ব নিজেদের কাধে তুলে নেন। জীবনের নুন আনতে পান্তা ফুরানো অবস্থাতেও তারা পরের জন্য ত্যাগ স্বীকার করে। ফেরেশতের স্বপ্ন নিজের টেইলরের দোকান, আমজাদের ইচ্ছে রিকশা ছেড়ে সিএনজি চালানো। ছোট ছোট এই স্বপ্নগুলো পূরণের পথে বাধা আসে নানা রকম—প্রলোভন, দারিদ্র্য আর সংগ্রাম। তবু তাদের সম্পর্কের মজবুত বন্ধন ও মানবিকতার শক্তিই গল্পকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
জয়া আহসান অভিনীত ফেরেশতে চরিত্রটি একাধারে সহমর্মী, সাহসী ও ত্যাগী। তিনি কঠিন পরিস্থিতিতেও নীরবে লড়াই করেন, সংসার ও সম্মান দুটোই রক্ষা করেন। সুমন ফারুকের আমজাদ চরিত্রে উঠে এসেছে সৎ, পরিশ্রমী কিন্তু সীমাবদ্ধতায় ঘেরা একজন সাধারণ মানুষের চিত্র। দুজনের অভিনয়ের ভারসাম্যই সিনেমার আবেগকে শক্তিশালী করেছে। এ ছাড়া রিকিতা নন্দিনী শিমু, শহীদুজ্জামান সেলিম, শাহেদ আলী, শাহীন মৃধা ও শিশুশিল্পী সাথীর উপস্থিতিও ছবিকে সমৃদ্ধ করেছে।

চিত্রনাট্য লিখেছেন ড. মুমিত আল রশিদ। নির্মাণে স্পষ্ট দেখা যায় ইরানি চলচ্চিত্র-ঘরানার প্রভাব—ক্যামেরার স্থিরতা, সংলাপের সরলতা আর দৈনন্দিন জীবনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মুহূর্তের সূক্ষ্ম চিত্রায়ন। ঢাকাকে এখানে শুধুই শহরের পটভূমি হিসেবে ব্যবহার করা হয়নি; বরং ফুটপাত, গলি, শ্রমজীবী মানুষের ঘরবাড়ি—সব মিলিয়ে শহরটিকে এক জীবন্ত চরিত্রে রূপ দেওয়া হয়েছে।

দেশে মুক্তির আগে ‘ফেরেশতে’ আন্তর্জাতিক পর্যায়েও প্রশংসিত হয়েছে। ইরানের ফজর চলচ্চিত্র উৎসবে বিভিন্ন দেশের ২৭০টি ছবির মধ্যে ছবিটি প্রশংসিত ও পুরস্কৃত হয়, ভারতের গোয়া আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবেও ১৩০টি ছবির মধ্যে পুরস্কৃত হয়। ‘দ্বাবিংশ ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব’- এর উদ্বোধনী ছবি হিসেবে প্রদর্শিত হয়। উৎসবে উপস্থিত দেশি ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনের গুণী সিনেমাবোদ্ধারা ছবিটির ভূয়সী প্রশংসা করেন। ছবিটি নিয়ে শর্মিলা ঠাকুর বলেন, ‘সহজ, সরল, সুন্দর সিনেমা। অভিনয়শিল্পীদের পারফর্মেন্স ছবিটিকে অনেকদূর নিয়ে যাবে বলে আমার বিশ্বাস।’

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত