বিটিভিতে প্রচারিত হবে ৩০ মে

এশিয়ার বৃহত্তম কৃষি খামারে এবারের ‘ইত্যাদি’

বিনোদন রিপোর্টার
প্রকাশ : ২৯ মে ২০২৫, ১৭: ০০

সেই ৯০ দশক থেকেই শেকড়ের সন্ধানে ইত্যাদি স্টুডিওর চারদেয়াল থেকে বের হয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। তুলে ধরছে বাংলার ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, প্রত্ননিদর্শন, আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্রসহ বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ স্থান। তারই ধারাবাহিকতায় এবারের পর্ব ধারণ করা হয়েছে দক্ষিণবঙ্গের প্রবেশদ্বার হিসেবে খ্যাত সমৃদ্ধ জেলা ঝিনাইদহে। মঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছিল এশিয়ার বৃহত্তম কৃষিখামার মহেশপুরের দত্তনগরের দিগন্তবিস্তৃত ফসলের মাঠের মাঝখানে বটবৃক্ষ চত্বরে।


ইত্যাদির ধারণ উপলক্ষে পুরো ঝিনাইদহজুড়েই ছিল উৎসবের আমেজ। অনুষ্ঠানস্থল ঘিরে প্রায় এক কিলোমিটার জায়গাজুড়ে জমজমাট মেলা বসেছিল। বেলা ৩টা থেকেই আমন্ত্রিত অতিথিরা অনুষ্ঠানস্থলে আসতে শুরু করেন। তবে সারাদিন রৌদ্রকরোজ্জ্বল থাকলেও অনুষ্ঠান শুরুর কিছুক্ষণ আগে থেকেই ঠাণ্ডা বাতাস বইতে শুরু করে। প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে ইত্যাদির ধারণ সময়মতো শুরু করা যায়নি; ফলে ধারণ হবে না ভেবে হাজার হাজার দর্শক বৃষ্টিতে ভিজেই ফিরে গেছেন।


কালবৈশাখী ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ইত্যাদির সেট, লাইট, ক্যামেরা ও অন্যান্য শুটিং সরঞ্জাম। ঝড় থামার পর সীমিত সুবিধা নিয়েই রাত ১২টার দিকে শুরু হয় ইত্যাদির ধারণ, চলে একটানা ভোররাত পর্যন্ত। তবে মধ্যরাতে ইত্যাদির ধারণ শুরু হলেও প্রতিকূল আবহাওয়া, রাতের অন্ধকার, কর্দমাক্ত রাস্তা পার হয়ে হাজার হাজার দর্শক হাজির হন অনুষ্ঠানস্থলে। দর্শকদের স্বতঃস্ফূর্ত করতালি ও উচ্ছ্বাসপূর্ণ চিৎকারে রাতের নীরবতা ভেঙে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।


এবারের অনুষ্ঠানে ঝিনাইদহের কিংবদন্তি লোককবি পাগলা কানাইয়ের কথা ও সুরে একটি লোকগানে কণ্ঠ দিয়েছেন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী সেলিম চৌধুরী ও তসিবা। গানটির সংগীত পরিচালনা করেছেন মেহেদী। খ্যাতিমান গীতিকবি মোহাম্মদ রফিকউজ্জামানের কথায় কিশোর দাশের সুর ও সংগীত পরিচালনায় আরও একটি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন ঝিনাইদহের সন্তান জনপ্রিয় শিল্পী মনির খান।


এছাড়াও অনুষ্ঠানের শুরুতেই রয়েছে ঝিনাইদহকে নিয়ে ঝিনাইদহেরই শৈলকুপার সন্তান মনিরুজ্জামান পলাশের কথায় একটি পরিচিতিমূলক গানের সঙ্গে নৃত্য। পরিবেশন করেছেন স্থানীয় শতাধিক নৃত্যশিল্পী। নাচটির কোরিওগ্রাফি করেছেন মোহাম্মদ শাহিন ইসলাম, কণ্ঠ দিয়েছেন রাজিব ও তানজিনা রুমা। গানটির সুর করেছেন হানিফ সংকেত এবং সংগীত আয়োজন করেছেন মেহেদী।


দর্শক পর্বের নিয়ম অনুযায়ী ধারণস্থান ঝিনাইদহকে ঘিরে করা প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে উপস্থিত দর্শকের মাঝখান থেকে ৪ জন দর্শক নির্বাচন করা হয়। ২য় পর্বে নির্বাচিত দর্শকরা ঝিনাইদহের ব্র্যান্ডিং পণ্য কলা ও পান নিয়ে রচিত একটি নাট্যাংশে স্থানীয় ভাষায় অভিনয় করেন, যা ছিল বেশ উপভোগ্য।


শেকড় সন্ধানী ইত্যাদি সব সময়ই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে প্রচারবিমুখ, জনকল্যাণে নিবেদিত মানুষদের তুলে ধরার পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চলের অচেনা-অজানা বিষয় ও তথ্যভিত্তিক শিক্ষামূলক প্রতিবেদন প্রচার করে আসছে। আর সেই ধারাবাহিকতায় এবারের পর্বেও রয়েছে কয়েকটি হৃদয়ছোঁয়া প্রতিবেদন। রয়েছে ঝিনাইদহের ওপর একটি তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদন।


এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ বীজ উৎপাদন খামার হিসেবে পরিচিত দত্তনগর কৃষি ফার্ম ও ঝিনাইদহের কজন স্মরণীয়-বরণীয় কীর্তিমান ব্যক্তিত্বের ওপর প্রতিবেদন। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার রামনগর গ্রামের সমাজকর্মী পাখি দরদী মানবিক মানুষ জহির রায়হানের ওপর রয়েছে একটি অনুকরণীয় প্রতিবেদন। পেশায় রঙমিস্ত্রি জহির ছোটবেলা থেকেই মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজ করে চলেছেন।


আমাদের দেশের কিছু কিছু পাহাড়ি অঞ্চল রয়েছে, যেখানে পানির অস্তিত্বই নেই। পানির অভাবে এসব এলাকার মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত। চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের দুর্গম পাহাড়ি এলাকার একটি পাড়ায় পানিকষ্টে থাকা তেমনি কিছু মানুষের ওপর রয়েছে একটি মানবিক প্রতিবেদন। চিঠিপত্র পর্বে ঝিনাইদহের মহেশপুরে বন্যপ্রাণীর বন্ধু হয়ে ওঠা প্রাণিপ্রেমী নাজমুল হোসেনের কর্মকাণ্ডের ওপর একটি সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন দেখানো হবে।


৩০ মে হলো সমুদ্র সিংহ বা ‘সী লায়ন’ দিবস। তাই এবারের বিদেশি প্রতিবেদনে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের স্যান ডিয়েগো শহরের প্রশান্ত মহাসাগরের একটি অসাধারণ সৌন্দর্য সৈকত লা-হোয়-আ কোভে বিশ্রাম নিতে আসা সমুদ্র সিংহ বা সী লায়নের ওপর একটি তথ্যসমৃদ্ধ প্রতিবেদন। এই বিচটিকে সী লায়ন বিচও বলা হয়।


এছাড়াও সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় ও প্রসঙ্গ নিয়ে সামাজিক অসংগতি ও সমাজ সংস্কারের ওপর রয়েছে বেশকিছু তীক্ষ্ণ ও তির্যক নাট্যাংশ। পোস্টার নির্যাতন, দালালের দৌরাত্ম্য, স্বভাব সংস্কার, প্রবাদ-প্রবচনের পেছনের গল্প, ফেসবুকের সংবাদ সেবা, স্বাস্থ্য নিয়ে ব্যবসা, ঘরোয়া আলোচনায় পশু-পাখি প্রীতি, রাজনৈতিক দল গঠনের হিড়িকে নাম সংকট, দোষ খুঁজে দোষ ধরা, কথা শুনে অযথা ব্যথাসহ বেশ কয়েকটি নাট্যাংশ।


এবারের ইত্যাদিতে উল্লেখযোগ্য শিল্পীরা হলেন বাবুল আহমেদ, আবদুল্লাহ রানা, আব্দুল আজিজ, সুভাশিষ ভৌমিক, আমিন আজাদ, আঞ্জুমান আরা শিরিন, রকি খান, জিল্লুর রহমান, কামাল বায়েজিদ, মুকিত জাকারিয়া, জাহিদ শিকদার, আশরাফুল আলম সোহাগ, আনোয়ার শাহী, নজরুল ইসলাম, আনন্দ খালেদ, সুমন পাটোয়ারি, শাহেদ আলী, সুজাত শিমুল, তারিক স্বপন, আনোয়ারুল আলম সজল, সাইদুর রহমান পাভেল, বেলাল আহমেদ মুরাদ, মনজুর আলম, বিলু বড়ুয়া, মতিউর রহমান, রাজীব সালেহীন, সাদিয়া তানজিন, সাবরিনা নিসা, সুবর্ণা মজুমদারসহ আরো অনেকে। বরাবরের মতো এবারও ইত্যাদির শিল্প নির্দেশনা ও মঞ্চ পরিকল্পনায় ছিলেন ইত্যাদির নিয়মিত শিল্পনির্দেশক মুকিমুল আনোয়ার মুকিম।


ইত্যাদির এ পর্বটি আগামী ৩০ মে শুক্রবার রাত ৮টার বাংলা সংবাদের পর প্রচারিত হবে বাংলাদেশ টেলিভিশনে। ইত্যাদি রচনা, পরিচালনা ও উপস্থাপনা করেছেন হানিফ সংকেত। নির্মাণ করেছে ফাগুন অডিও ভিশন। ইত্যাদি স্পন্সর করেছে যথারীতি কেয়া কসমেটিকস লিমিটেড।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত