ঐতিহাসিক ‘বিপ্লব ও সংহতি দিবস’কে ঘিরে ঢাবিতে নানা আয়োজন

প্রতিনিধি, ঢাবি
প্রকাশ : ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৩: ৩১

ঐতিহাসিক ‘বিপ্লব ও সংহতি দিবস’কে ঘিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসজুড়ে নানা আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী অডিটোরিয়াম ও বটতলায় পৃথকভাবে আলোচনা সভা, আলোকচিত্র প্রদর্শনীসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছে ডাকসু ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।

শুক্রবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)-এর আয়োজনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ড. মাহাদী আমিন বলেন, “সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশে ইসলামী মূল্যবোধকে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছিলেন। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি না করলেও বিএনপি সবসময়ই ইসলামের খেদমতে নিবেদিত প্রাণ ছিল।”

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, “৭ই নভেম্বর সিপাহী-জনতা এক হয়ে স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করেছিলেন- একটি আকাঙ্ক্ষা নিয়ে এমন এক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করার জন্য, যেখানে স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠিত হবে।”

ড. মাহাদী আরও বলেন, “আমাদের আদর্শ যদি হয় বাংলাদেশের স্বার্থ ও সার্বভৌমত্ব সবার আগে, তাহলে আমরা সবাই এক। আমরা আগামীর বাংলাদেশে বাংলাদেশপন্থী রাজনীতি করতে চাই- যে রাজনীতি করেছেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান।”

তিনি উল্লেখ করেন, “শহীদ জিয়াউর রহমানের হাত ধরেই বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পায়। তার নীতির ফলেই বাকস্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত হয়, গার্মেন্টস শিল্প গড়ে ওঠে, বিদেশে জনশক্তি রপ্তানি শুরু হয় এবং বৈদেশিক বিনিয়োগের দ্বার উন্মুক্ত হয়।”

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এডভোকেট এহসানুল হক জুবায়ের, বিএনপির নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর, এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী মো. মাহবুবুর রহমান।

এডভোকেট জুবায়ের বলেন, “জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নেই ৭ নভেম্বর এসেছিল। শেখ মুজিব স্বাধীনতার পর জনগণের কাছে ঘৃণিত ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছিলেন, আর জনগণ তখন জিয়াউর রহমানকে মুক্তির দিশারি হিসেবে দেখেছিল।”

ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন, “আওয়ামী লীগ কোনো রাজনৈতিক দলের সংজ্ঞায় পড়ে না; এটি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। শেখ মুজিব ১৩ বছর জেল খেটেছেন, কিন্তু শেষমেশ স্বাধীন বাংলাদেশকে ভারতের কাছে বিক্রি করেছে- এটাই তার জীবনের ট্র্যাজেডি।”

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, “৭ নভেম্বর শুধু সার্বভৌমত্ব রক্ষার আন্দোলন ছিল না, বরং নাগরিকদের রাষ্ট্রের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার বিপ্লবও ছিল।”

সভাপতির বক্তব্যে ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েম বলেন, “আজকের বাংলাদেশ আসলে জিয়াউর রহমানের বাংলাদেশ। যারা একসময় জিয়াউর রহমানকে দানব হিসেবে তুলে ধরেছিল, সেই কালচারাল ফ্যাসিস্টরাই এখন বিএনপির বন্ধু সাজছে। বাংলাদেশের মাটিতে ফ্যাসিবাদের শিকড় উপড়ে ফেলতে না পারলে জনগণের মুক্তি সম্ভব নয়।”

সভাটি পরিচালনা করেন ডাকসুর মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক জুমা।

অন্যদিকে একই দিনে বটতলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আয়োজিত আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেন, “১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর আবার নতুন করে আমরা স্বাধীনতার মুখ দেখেছি। কারণ ১৬ ডিসেম্বরের স্বাধীনতায় জাতির মুক্তি হয়নি; সেখানে আওয়ামী লীগের মুক্তি হয়েছে, আর জাতির মুক্তি এসেছে ৭ নভেম্বর।”

রিজভী বলেন, “স্বাধীনতার পর যারা সরকার গঠন করলেন, তারা নিজেদের ছাড়া আর কাউকে জাতি মনে করতেন না। তারা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করে দেশকে এক অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছিলেন। ৭ নভেম্বর সেই অন্ধকার ভেদ করে জনগণ তাদের মুক্তির দিশারি হিসেবে জিয়াউর রহমানকে আবিষ্কার করে।”

তিনি আরও বলেন, “যে জাতীয়তার মধ্যে আমার পতাকা ও সত্তার প্রতিনিধিত্ব নেই, সেটি প্রকৃত জাতীয়তা নয়। শহীদ জিয়াউর রহমান ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’-এর মাধ্যমে জাতির আত্মপরিচয় পুনর্নির্মাণ করেছিলেন।”

অনুষ্ঠানে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় বক্তারা ৭ নভেম্বরকে ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ হিসেবে পুনর্বহালের দাবি জানান এবং বলেন, “৭ নভেম্বরকে ক্যালেন্ডার থেকে মুছে দিয়েছিল আওয়ামী সরকার, কিন্তু ইতিহাস থেকে তা মুছে ফেলা যায়নি।”

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত