ভিড় নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর নজরদারি বৃদ্ধি

বার্ন ইনস্টিটিউটে শুধু আহাজারি আর অসহায় অপেক্ষা, শঙ্কায় ৩০

আসছে সিঙ্গাপুরের চিকিৎসক প্রতিনিধি দল

মাহমুদা ডলি
প্রকাশ : ২২ জুলাই ২০২৫, ২১: ৩১
আপডেট : ২২ জুলাই ২০২৫, ২১: ৪৮
বার্ন ইনস্টিটিউটে শুধু আহাজারি আর অসহায় অপেক্ষা

সকাল বেলা ডাকাডাকি নেই, হোম ওয়ার্ক নেই, টিফিন গুছিয়ে দেয়ার তাড়া নেই। নেই ঘুম জড়ানো কণ্ঠে সন্তানের হাজারো বায়না। রয়েছে শুধু চোখের সামনে শত আবদারের আদরের সন্তানের আবদারহীন শ্বাসকষ্টে ভরা পোড়া দেহ। ওয়ার্ড থেকে আইসিইউর বারান্দাজুড়ে অর্ধশত সন্তানের জন্য বাবা-মায়ের নির্ঘুম উদ্বিগ্নতায় পার হয়ে যাচ্ছে রাত দিন। কেউ দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে, কেউ মেঝেতে বসে, কেউবা শিশুদের পোশাক আঁকড়ে কাঁদছিলেন। শুধু আহাজারি আর অসহায় অপেক্ষা। আইসিইউর সামনে সিঁড়ির পাশে খালি জায়গায় বিলাপ করছেন স্বজনরা। আইসিইউর সামনে ১০-১২ জন স্বজন অপেক্ষা করছিলেন নিঃশব্দে। দুজন নারী মেঝেতে বিলাপ করছিলেন, কেউ ফোনে কথা বলতে বলতে কাঁদছিলেন, কেউ হতবিহ্বল অস্থির অবস্থায় শুধু পায়চারী করছিলেন।

বিজ্ঞাপন

এদর মধ্যে রয়েছেন মায়াকের বাবা-মাও। মায়াক ৭ম শ্রেণির ছাত্র, শ্বাসনালী বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন কৃত্রিম শ্বাস প্রশ্বাসে চলছে। তার শরীরের ৬২ শতাংশ পুড়ে গেছে। মায়াকের বাবা মহসিনের মুখের ভাষা হারিয়ে গেছে। কথা বলার ইচ্ছা শক্তি হারিয়ে গেছে তার। মায়াকের মায়ের চোখ থেকে শুধু পানিই ঝড়ছে অঝোড়ে। মা সালেহা নাজনীন জানান, স্কুল ছুটি হতে আর ১০ মিনিট বাকি। সালেহা নাজনীন ছেলেকে আনতে স্কুলের দিকে যান। কিন্তু বাসা থেকে স্টেশন পর্যন্ত আসতে না আসতেই এ দুর্ঘটনা। তাকে স্কুলের এক শিক্ষক ফোন করে বলেন যে, মায়াক বেরিয়ে গেছে নিরাপদে। এরপর সালেহা স্কুলে এসে ছেলেকে খুঁজতে থাকেন। কিন্তু কোথাও তাকে খুঁজে না পাওয়ায় তিনি আগুনের ভেতরে ছুটে যান, এ সময় তাকে বোধা দেয়া হয়; ভেতরে ঢুকতে দেয়া হয় না। এরপরেও তিনি ছুটোছুটি করতে থাকেন।

প্রায় এক ঘণ্টা পর মায়াক নিজেই মাকে ফোন করে বলে– মা আমার হাত পা মুখ অনেকটা পেুড়ে গেছে। আমাকে বার্ন ইনস্টিটিউটে নিয়ে যাচ্ছে,তুমি আসো। আঙ্কেলের ফোন দিয়ে তোমায় ফোন দিলাম। এরপর মায়াককে বহনকারী সালেহা নাজনীনকে ফোন করে হাসপাতালে আসতে বলেন।

সালেহা নাজনীন বলেন, ‘ছেলে আমার অনেক সচেতন তার বুঝ হওয়ার পর থেকেই। আমার সন্তানের জন্য দোয়া করেন আল্লাহ যেনো আমার বুকে ওরে ফেলে যায়। ’

বার্ন ইনস্টিটিউটে আরও ১০ জনের মৃত্যু, ৪ জনই শিশু

সকালে মারা যাওয়া শিশুদের মধ্যে রয়েছে—নাজিয়া, যার শরীরের ৯০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল; আরিসন (১৩), শরীরের ১০০ শতাংশ দগ্ধ নিয়ে গতরাত ২টা ২০ মিনিটে মারা যায়; আরিয়ান (১৩), ৮৫ শতাংশ দগ্ধ নিয়ে রাত আড়াইটায় মারা যায়; শায়ান ইউসুফ (১৪), ৯৫ শতাংশ দগ্ধ অবস্থায় মারা গেছে; এবং ৯ বছর বয়সী বাপ্পি শরীরে ৩৫ শতাংশ দগ্ধ নিয়ে আজ ভোর ৫টার দিকে মারা যায়।

এদিকে, রাজধানীর দিয়াবাড়ীতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৪২ জনের মধ্যে ৩০ জনের অবস্থা বিপজ্জনক। এই ৩০ জনের মধ্যে অন্তত ১০ জনের অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া মঙ্গলবার বিকেলেও সিএমএইচ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ২ জনকে বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। শিক্ষক মাহফুজা বেগমের ৩৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। আর শিশু নাভিদের (১২) ৫২ শতাংশ পুড়ে গেছে। জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউট থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এ নিয়ে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে এখন পর্যন্ত মোট ৪৮ জন রোগী রয়েছে; তাদের মধ্যে ১২ জনকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে । আর ৩ জনকে লাইফ সার্পোটে রাখা হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে মঙ্গলবার তিনজনকে নতুন করে ভর্তি করা হয়েছে। পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে ভর্তি ২০ জন। মোট ভর্তির মধ্যে এখনো অন্তত ৩০ জনের অবস্থা শংকটাপন্ন।

মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত সরেজমিন হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, ওয়ার্ড থেকে আইসিইউ জুড়ে ছোটাছুটি থেমে নেই স্বজনদের। স্বজনরা কখনো দৌড়ঝাঁপ করছেন তাদের সন্তানরা থাকা ব্লকগুলো কাঁচের দরজার সামনে। সেখানে দাঁড়িয়ে উঁকি দিচ্ছেন, দগ্ধ প্রিয় মানুষটি কেমন আছে দেখার জন্য। সঙ্গে বাড়ছে হা-হুতাশ। হাসপাতাল চত্বর ঘিরে শত শত মানুষ দাঁড়িয়ে আছেন। কেউ আর্তনাদ করছেন, কেউ রক্ত দিতে ব্যাকুল হয়ে উঠছেন। কেউ কেউ নির্ধারিত বুথে রক্ত দান করছেন। কেউ ভেতরে ঢুকার জন্য প্রাণপন চেষ্টা করছেন। আবার দগ্ধ শিশুদের সুচিকিৎসায় যাতে ইনফেকশন না ছড়ায়, সেজন্য স্বজনদের প্রবেশ সীমিত করে দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

আইসিইউ থেকে কেবিনে শিফট দুজন

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন কলেজের ছাদে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন দুজনকে কেবিনে শিফট করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সরকারী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সায়েদুর রহমান। মঙ্গলবার (২২ জুলাই) দুপুরে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি

সায়েদুর রহমান বলেন, দুজন রোগীকে আমরা কেবিনে শিফট করতে পেরেছি। এটা একটা উন্নতি বলে আমার মনে করি। এছাড়া চিকিৎসাধীন আরো দশজনকে চিকিৎসকরা শঙ্কামুক্ত বলে মনে করছেন। বাকি ৩০ জন এখনো অস্পষ্ট একটা জায়গায় রয়েছে। তাদের চিকিৎসায় এখানে দেশের সব বিশেষজ্ঞদের যুক্ত করা হয়েছে।

সায়েদুর রহমান বলেন, আমাদের এখানে এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি হাসপাতালের মাল্টিডিসিপ্লিনারি টিম কাজ করছে। সে অনুযায়ী রোগীদের প্রয়োজনীয় ইন্টারভেনশন, ফ্লুইড ও মেডিসিন ম্যানেজমেন্টে পরিবর্তন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের এই হাসপাতালের সঙ্গে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের সমঝোতা চুক্তি রয়েছে। তাদেরকে জানানো হয়েছে এবং কেস রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। তাদের একজন সিনিয়র কনসালটেন্ট এবং দুজন নার্স আজকে রাতেই বাংলাদেশে এসে পৌঁছাবে। আমরা আশা করছি, তারা আগামীকাল থেকেই এই টিমে যুক্ত হতে পারবেন। সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম জানান, বিমান দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৯ জন মারা গেছেন।

রাতে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে আসবে সিঙ্গাপুরের চিকিৎসক প্রতিনিধি দল

সিঙ্গাপুর থেকে একটি চিকিৎসক প্রতিনিধি দল আসছে বার্ন ইন্সটিটিউটে। মাইলস্টোন ট্র্যাজেডিতে পোড়া রোগীদের পরীক্ষণ করবেন তারা। প্রয়োজন হলে কাউকে দেশের বাহিরে নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানান সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কমান্ড‍্যান্ট এস এম সোলায়মান।

কমান্ড‍্যান্ট এস এম সোলায়মান আরও বলেন, সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকরা আহত রোগীদের চিকিৎসা দেবে। প্রয়োজন হলে কাউকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাহিরে পাঠানোর ব‍্যাপারে পরামর্শ দিবেন তারা। এছাড়াও সিএমএইচ থেকে দুজন শঙ্কায় থাকা রোগীকে স্থানান্তর করা হবে।

বার্ন ইনস্টিটিউটে ভিড় নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর নজরদারি বৃদ্ধি

আহতদের চিকিৎসা নিতে আসা মানুষের ভিড় সামাল দিতে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করেছে কর্তৃপক্ষ। আজ মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সকাল থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা হাসপাতালের মূল ফটকে কঠোর নজরদারি চালাচ্ছেন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এখন থেকে ইনস্টিটিউটে প্রবেশের জন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিচয়পত্র দেখাতে হচ্ছে। রোগীর স্বজনদেরও জানাতে হচ্ছে, তারা কার আত্মীয়, রোগীর নাম ও কোন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন— এসব তথ্য নিশ্চিত হলেই মিলছে প্রবেশাধিকার।

বার্ন ইনস্টিটিউটের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সোমবার (২১ জুলাই) স্বজন ও দর্শনার্থীদের অতিরিক্ত ভিড়ে চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হয়। পুলিশ ও আনসার সদস্যদের জনসমাগম নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হয়। এছাড়া গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতিও ভিড় বাড়িয়ে তোলে। ফলে আজ সকাল থেকেই সেনাবাহিনীর সহায়তায় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আরো কঠোর করা হয়েছে।

ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে আইআরআই প্রতিনিধি দলের বৈঠক

শুক্র-শনিবারও চলবে বিমানবন্দরের শুল্কায়ন কার্যক্রম

প্রধান উপদেষ্টার আদেশে জুলাই সনদের আইনি রূপ দিতে হবে

নভেম্বরের মধ্যে তিস্তা মহাপরিকল্পনা শুরুর দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি

আইআরআই’র সঙ্গে নির্বাচনের প্রক্রিয়া ও ইসির নিরপেক্ষতা নিয়ে আলোচনা এনসিপির

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত