ভাষানটেক থেকে আটকের পর কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ

কেঁদে কেঁদে সাকিনা বলতেন আমি আসামে ফিরতে চাই

এমরানা আহমেদ
প্রকাশ : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪৯
আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০: ১০

রাস্তা থেকে তুলে এনে ৬৫ বছর বয়সি বৃদ্ধা সাকিনা বেগমকে আশ্রয় দিয়েছিলেন রাজধানীর ভাষানটেকের টেকপাড়ার জাকিয়া (৪০) নামে এক নারী। ওই এলাকায় দুই রুমের একটি ঘরে তিনি পরিবার নিয়ে থাকেন।

সেখানেই ওই বৃদ্ধাকে চার মাস ধরে পরম মমতায় আগলে রেখেছিল পরিবারটি। জাকিয়ার পরিবার সূত্রে জানা যায়, ওই বৃদ্ধা প্রায়ই কেঁদে কেঁদে বলতেন, তিনি জন্মস্থান আসামে ফিরে যেতে চান।

বিজ্ঞাপন

সম্প্রতি একটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার সাকিনাকে আটক করে পুলিশ। এরপর গতকাল শুক্রবার তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয় আদালত।

জানা যায়, সাকিনা বেগম ভারতের আসাম রাজ্যের নলবাড়ি জেলার বরকুরা গ্রামের বাসিন্দা। চলতি বছরের মে মাসে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) তাকে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়।

গতকাল ভাষানটেকের টেকপাড়ায় ভারতীয় ওই বৃদ্ধাকে আশ্রয় দেওয়া জাকিয়ার সঙ্গে কথা হয়। তিনি আমার দেশকে বলেন, সাকিনা বেগম অভিযোগ করেছেন, রাতের অন্ধকারে তাকে বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। ভোরের আলো ফুটতেই তিনি তাকে সম্পূর্ণ অপরিচিত একটি জায়গায়, ভিন্নভাষী মানুষদের মাঝে আবিষ্কার করেন। তারপর শুরু হয় তার দুঃসহ যাত্রা। খেয়ে না খেয়ে টানা ১৫ দিন খোলা আকাশের নিচে রাস্তায় রাস্তায় থাকতে হয় তাকে।

ভাষানটেকের ওই নারী আরো বলেন, ওই বৃদ্ধার পায়ে জুতা ছিল না। খালি পায়ে হাঁটতে হাঁটতে তার পায়ে ঘা হয়ে যায়। আমি তাকে ঘরে নিয়ে আসার আগ পর্যন্ত তিনি শুধু পানি এবং কেউ যদি কিছু দিয়ে থাকে তা খেয়ে বেঁচেছিলেন।

ওই নারীকে খুঁজে পাওয়ার বিষয়ে বলতে গিয়ে জাকিয়া বলেন, একদিন সকালে আমাদের এলাকার মূল সড়কের পাশে থাকা দোকানের সামনে তাকে কাঁদতে দেখি। তারপর তাকে বাসায় নিয়ে আসি। খাবার দেই। পা থেকে তখন রক্ত পড়ছিল। পরনের শাড়িও ছিল জরাজীর্ণ। পরে তাকে চিকিৎসা করিয়েছি। পোশাক কিনে দিয়েছি। আমরা যা খেয়েছি, তাকেও তা খেতে দিয়েছি। পরিবারের একজন সদস্যের মতোই তিনি আমাদের সঙ্গে ছিলেন। তিনি প্রায়ই কাঁদতেন এবং বলতেন, তিনি তার জন্মস্থান আসামে ফিরতে চান।

ভারতের মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগ, বহু ভারতীয় নাগরিককে বিদেশি বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে। তারা কোন দেশের নাগরিক তাও নির্দিষ্ট করা হচ্ছে না। তাদের ঠেলে দেওয়া হচ্ছে বাংলাদেশে। তাদেরই একজন সাকিনা বেগম।

গুয়াহাটি হাইকোর্টে হওয়া এক মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আসাম সরকারের দেওয়া হলফনামায় দেখা যায়, সেখানকার পুলিশ সাকিনা বেগমকে বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করে। ভারতের পুলিশ বিএসএফের হাতে ওই নারীকে তুলে দিলেও কয়েক মাস পর তাকে পাওয়া যায় বাংলাদেশে।

সম্প্রতি ভারতীয় ওই বৃদ্ধাকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে একটি সংবাদমাধ্যম। এরপর পুলিশ তাকে আটক করে নিয়ে যায়। এ সময় কান্না ধরে রাখতে পারেননি জাকিয়া। তিনি বলেন, বিবিসি বাংলায় তাকে নিয়ে রিপোর্ট হওয়ার পর ভাষানটেক থানার পুলিশ এসে তাকে নিয়ে যায়। তাকে নিয়ে যাওয়ার সময় আমরা কান্না ধরে রাখতে পারিনি। অনেক দিন আমাদের সঙ্গে ছিলেন, আমরা মায়ায় পড়ে গেছি। তিনি থানায় যেতে চাননি। তিনি চেয়েছিলেন আসামে ফিরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমাদের সঙ্গেই থাকবেন।

জাকিয়ার বড় মেয়ে ক্লান্তি আখতার আমার দেশকে বলেন, আমার নানি মারা গেছেন। তাকে পেয়ে আমরা নানির দুঃখ ভুলে গিয়েছিলাম। তিনি খুবই সহজ-সরল।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত